“তামিমের বীরত্বগাঁথা দিন ১৫ সেপ্টেম্বর”

নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »

বাংলাদেশ ক্রিকেটের অটল এক আস্থার নাম তামিম ইকবাল খান। একাধারে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বিশ্বক্রিকেট মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। এখন পর্যন্ত এ ১২ বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের (২০৪+৭৫+৫৮)= ৩৩৭টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন, নানারকম জয়-পরাজয়ের সাক্ষী হয়েছেন। ক্যারিয়ারের এই সময়টাতে নানা চড়াই-উতরাই পার করে, আজ সে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ব্যাটিং স্তম্ভ। দেশের হয়ে তিন ফরমেটেই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, যা একটি বিশ্বরেকর্ড। কেননা বিশ্বক্রিকেটে দেশের হয়ে তিন ফরমেটেই সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করা একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনি।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস। শুরু হয়েছে এশিয়া কাপ। ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছে। টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ম্যাশ। ব্যাটিংয়ে নামলেন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান। তবে হঠাৎ করেই যেনো বাংলাদেশী ভক্তরা থমকে গেলেন। দলের সেরা ব্যাটসম্যানটা যে ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন। শ্রীলঙ্কান পেসার লাকমালের এক বাউন্সার মারতে গিয়ে কব্জিতে আঘাত পান তামিম। অবস্থা গুরুতর দেখে, সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। এক্স-রে রিপোর্টে ধরা পরে, কব্জির ভাঙন। হাসপাতাল থেকে হাতে প্লাস্টার করে ফিরে আসেন মাঠে, তার দেশ যে মাঠে খেলছে। হটাৎ ক্যামেরাম্যান বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের দিকে ক্যামেরা তাক করলে দেখা যায় প্লাস্টার করা হাতটি গলায় ঝুলিয়ে নিয়ে মনমরা হয়ে বসে আছেন, তামিম ইকবাল। বাংলাদেশে ভক্তরা হায় হুতাশ করতে থাকলো, তাদের সেরা ব্যাটসম্যান যে ইনজুরিতে। ততক্ষণে বাংলাদেশী মিডিয়া থেকে শুরু করে বিশ্ব মিডিয়া, সব মিডিয়াতে খবর হয়ে গেছে– এশিয়া কাপের এ আসর খেলতে পারছেন না তামিম ইকবালের।

এদিকে তামিম আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়ার পর বাংলাদেশ দল ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। মুশি আর মিঠুন লড়াই চালিয়ে গেলেও বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি মিঠুন। একে একে সব ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো। তামিমের ব্যাটিংয়ে নামার কোনো চান্স নাই। ফলে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিককে সঙ্গ দিতে ব্যাটিংয়ে নামেন মুস্তাফিজ, বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মুস্তাফিজের সাথে মুশফিক আর প্রতিপক্ষের ক্রিকেটাররাও অগ্রসর হতে লাগলেন ড্রেসিং রুমের দিকে। কিন্তু কেনো যেনো মাঠের সবাই কয়েক মূহুর্তের জন্য স্থির হয়ে গেলেন। এর কারণটা জানা গেলো তামিমের দিকে যখন ক্যামারা ধরা হলো। দেখা গেলো ভাঙা কব্জি নিয়ে ব্যাট হাতে নেমে পড়েছেন তামিম। অবাক বিস্ময়ে সবাই তাকিয়ে রইলো। বাংলাদেশী ভক্তদের মনের অজান্তেই চোখে জল চলে আসলো। ওভারের শেষ বল, স্ট্রাইক প্রান্তে তামিম। বল হাতে সেই লাকমাল। বোলার দৌড় শুরু করলেন, তামিমও প্রস্তুত। ওভারের শেষ বলটি ভালোভাবেই ডিফেন্স করেন তামিম। তবে এখানে লাকমাল এক নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি তার বলটি ছুঁড়েছিলেন তামিমের ভাঙা হাতকে লক্ষ্য করেই। যাইহোক, তামিম ভাই বলটি এক হাতে ভালোভাবেই ডিফেন্স করেছিলেন। আর এতেই মুশফিক হয়তো অনুপ্রাণিত হয়েই দলীয় রানে আরো ৩২ রান যোগ করলেন। ম্যাচটি বাংলাদেশ খুব ভালোভাবেই জিতেছিলো।

দলের সম্মান রক্ষার্থে ভাঙা হাত নিয়ে, এক হাতে ব্যাটিং করতে চলে এসেছিলেন তামিম। যদিও তামিম জানতেন যে, ভাঙা কব্জিতে আরেকবার আঘাত পেলে ক্যারিয়ার নষ্ট আর সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন তিনি। তাতে কি? তিনি তো জীবন বাজি রেখেই গিয়েছিলেন মাঠে। ফোন করে মাকে বলেও দিয়েছিলেন– “দেশের জন্য নামছি মা, দোয়া করো।”   দেশের সম্মান রক্ষার্থে, এক হাতেও ব্যাটিং করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেন নি। এমন সাহসীকতার পরিচয় দিয়ে প্রত্যেকটা ক্রিকেট ভক্তের মন জয় করেছিলেন তামিম।

তামিমের ভাঙা হাতে ব্যাটিংয়ে নামা নিয়ে দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন জানান, “মাশরাফি প্রথমে মজা করে তামিমকে বলেছিলো– ব্যাটিংয়ে নামতে হবে। উত্তরে তামিমও মজা করে বলে, হ্যাঁ নামবো তো! পরে দেখি সত্যি সত্যি মাশরাফি গ্লাভস কেটে তৈরি কিরে দিচ্ছে তামিমকে। কথা ছিলো মুশফিক স্ট্রাইক প্রান্তে থাকলেই তামিম নন – স্ট্রাইক প্রান্তে নামবে। তবে ওভারের পঞ্চম বলে মুস্তাফিজ আউট হওয়ায় তামিমকে নামতে হলে স্ট্রাইক প্রান্তেই নামতে হবে। এমন সমীকরণে এই নামার সিদ্ধান্তটা পুরোপুরি ছিলো তামিমেরই। কোচিং স্টাফের সকল সদস্যরাই তামিমকে বারবার না করেছিলো, কিন্তু তামিম কারো কথা না শুনে নেমে পড়েছিলো মাঠে।”

“কিছু জিনিস হয়ে যায়, তবে তার রেশ চিরকাল রয়ে যায়।” ঠিক তেমনিভাবে তামিম ইকবালের এই বীরত্বের কথা চিরকাল স্মরণ করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট। তামিমের এমন সাহসীকতার কথা ক্রিকেট ভক্তরা কখনো ভুলতে পারবেন না।

 

★ তামিমের আগে নিজের কথা চিন্তা না করে, দেশের জন্য এক হাতে নেমে নেমে পড়া দুইজন ব্যাটসম্যান। ক্রিকেটারঃ ১. দলকে বাঁচাতে ১৯৮৪ সালে এক হাতে ব্যাট করেছিলেন উইন্ডিজের ম্যালকম মার্শাল। ২.জনসনের বলে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন দক্ষিণ আফ্রিকান গ্রায়েম স্মিথ, টেস্ট বাঁচাতে সেদিন ভাঙা হাতে ব্যাটিংয়ে নেমে পড়েন। দেশের সম্মান রক্ষার্থে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মাঠে নেমে পড়া এমন সব খেলোয়াড়দের বিশ্বক্রিকেট যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »