তরুণদের সুযোগ দিতে আমার মনে হয়েছে এখন আমার থামা উচিত: অলক কাপালি

নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। বল হাতেও দখল করেছেন দুই শতাধিক উইকেট। দেশের ক্রিকেটে একটা সময় ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে তিনি ছিলেন অনন্যা। বলা হচ্ছিলো, জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার অলক কাপালির কথা।

সদ্যই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন তিনি। দেশের ক্রিকেট কালচারের সাথে তাল মিলিয়ে চাইলেই আরো কিছুদিন খেলে যেতে পারতেন। কিন্তু কেন সেটা চাননি, ভবিষ্যৎ নিয়ে তার ভাবনা – এসব জানাতেই তিনি নিউজক্রিকেট২৪ এর মুখোমুখি হয়েছিলেন।

নিউজক্রিকেট২৪ এর মারুফ ইসলাম ইফতি -কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কাপালি কথা বলেছেন তার ২২ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের খুটিনাটি নিয়ে।

নিউজক্রিকেট: আপনি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার জন্য এমন একটা দিন কেন বেছে নিলেন, যে দিন আপনি বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক করে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন?

অলক কাপালি: এই দিনটি আমার জন্য বিশেষ একটি দিন। কারণ, এই দিনটিতেই আমাকে অনেকে স্মরণ করে,বাংলাদেশের হয়ে প্রথম হ্যাট্রিকের জন্য। তাই আমার অবসরের জন্যও আমি এই দিনটিকে বেছে নিলাম। যাতে বিশেষ এই দিনটি, আমার কাছে আজীবন স্মৃতিময় দিন হয়ে থাকে।

নিউজক্রিকেট: আপনি শেষ টেস্টে খেলেছেন সে ২০০৬ সালে, এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে টানা পারফর্ম করেও দলে ডাক পাননি, এর জন্য কোন আক্ষেপ?

অলক কাপালি: সবচেয়ে বেশি আফসোস কাজ করেছিল ২০১১-১২ মৌসুমে। সেবা’র আমি ৩টি ডাবল সেঞ্চুরি করেও জাতীয় দলে ডাক পাইনি।এতো ভাল করার পরও ডাক না পাওয়ায়, কিছুটা আফসোস তখন হয়েছিল। তবে, এরপর থেকে আর তেমন কোন আফসোস কাজ করেনি।এরপর থেকে শুধু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করা ও নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ভাল করার লক্ষ্য নিয়ে খেলে গেছি। আমার চিন্তাভাবনা ছিল এমন, যেহেতু জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ হচ্ছে না, সেহেতু প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটেই পুরোপুরি ফোকাস করি। যাতে ফিটনেস ঠিক রেখে নিয়মিত পারফর্ম করতে পারি।

নিউজক্রিকেট: প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আপনার ৯০০০+ রান, এই মৌসুমটা খেলে গেলে হয়তো ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারতেন, তাহলে কেন সুযোগটা হাতছাড়া করে অবসরের সিদ্ধান্ত নিলেন?

অলক কাপালি: হ্যাঁ, চাইলে হয়তো ১০ হাজার রানের ইচ্ছেটা পূরন করতে পারতাম। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার জায়গায় তরুণ কোন ক্রিকেটারকে সুযোগ দেওয়া উচিত। আমাদের সিলেটে এখন অনেক ইয়াং ক্রিকেটার উঠে আসছে। ওদের নিজেদেরকে প্রমাণ করার জন্য এমন একটি প্লাটফর্ম দরকার।আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার মাইলফলকের চেয়েও অন্য একজন ইয়াং ক্রিকেটারের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই চিন্তাভাবনা করেই তরুণদের জায়গা করে দিতেই আমার মনে হয়েছে, এখনই আমার থামা উচিত।

নিউজক্রিকেট: যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলতেন, তখন আপনার সতীর্থদের মধ্যে সবচেয়ে কাছের বন্ধু কে ছিলেন, যিনি সবসময় সাপোর্ট করতেন?

অলক কাপালি: আমাকে প্রায় সবাই কম বেশি সাপোর্ট করতো। সবার সাথেই খুব ভাল সম্পর্ক ছিল।স্পেশালি- শাহরিয়ার নাফিস,আব্দুর রাজ্জাক, রাজিন সালেহ ভাই, এনামুল হক জুনিয়র, নাজিমুদ্দিন, তাপস বৈশ্য ভাই ,মোহাম্মদ শরিফ। এরাই সবাই আমার ভাল বন্ধুর মতো ছিল।এদের সবার থেকেই আমি কমবেশি ভাল সমর্থন পেয়েছি। তাই আলাদাভাবে কারো নাম বলাটা আসলে উচিত হবে না। জাতীয় দলে থাকাকালীন এরা সবাই আমাকে খুব ভালো সাপোর্ট দিয়েছে।

নিউজক্রিকেট: প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে প্রায় ২২ বছরের ক্যারিয়ার, এত লম্বা ক্যারিয়ারের অনেক অনেক স্মৃতি, তার মধ্যে আপনার সেরা মুহূর্ত কোনটি?

অলক কাপালি: আমার কাছে সবচেয়ে সেরা মুহূর্তটি হলো, যখন আমি প্রথম জাতীয় দলের হয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট খেলার জন্য ডাক পেয়েছিলাম। আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচের আগের দিন রাতে আমার ঘুম হয়নি। মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছিলো চামিন দ্যা ভাস,মুত্তিয়া মুরালিধরনদের বল আগামীকাল মোকাবিলা করতে হবে! কিভাবে কি করবো! এইসবই শুধু মাথায় ঘুরছিল, এছাড়াও অভিষেক ম্যাচ নিয়েও রোমাঞ্চিত ছিলাম। আমার কাছে ওই মুহূর্ত গুলোই সবচেয়ে মধুর।

নিউজক্রিকেট: প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের কিংবদন্তি মনে করা হয় আপনাকে। এক কথাই ছিলেন স্টাইলিশ ও অভিজাত্যপূর্ণ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৯ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের ডাবল আছে একমাত্র আপনার। সবকিছু মিলিয়ে কখনো কি এ প্রাপ্তি গুলো ছুয়ে গেছে আপনাকে?

অলক কাপালি: আসলে আমার কাছে মনে হয় যে, আমি যদি আরো ৩ হাজার রান বেশি করতে পারতাম,আর এভারেজটা ৪০+ রাখতে পারতাম তাহলে আরেকটু বেশি ভাল লাগতো।কারণ আমি সেই লক্ষ্যে এতবছর খেলে গেছি। তবুও যতটুকু করতে পেরেছি আমি তাতে সন্তুষ্ট।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »