তবে কি মাশরাফি দলের সাথে বেইমানি করেছেন?

দুর্জয় দাশ গুপ্ত »

বিশ্বকাপে তামিম ইকবালের না থাকা, তামিমের সাথে দ্বন্দ সহ বেশ কিছু ব্যাপারে গতকাল দেশের একটি স্পোর্টস চ্যানেল সাকিব আল হাসানের ২৭ মিনিটের একটা এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। একান্ত সাক্ষাৎকারে সাকিব কথা বলেছেন তামিমের ফিটনেস ইস্যু নিয়েও।

বাংলাদেশ অধিনায়কের মতে তামিম যদি ফিটনেস ইস্যুতে বিশ্বকাপে নিজের জায়গা হারিয়ে থাকেন তবে সেটা উচিত ছিলো। কেননা সাকিবের ভাষ্য মতে তিনি জানেন না তামিম আসলে কতটা ফিট, এমনকি তিনি এমনও শুনেছেন তামিম নাকি বেছে বেছে ম্যাচ খেলবেন। কিন্তু সত্যিটা কি তাই?

সত্য-মিথ্যা যাচাই করা যাবে পরেও। কিন্তু সাকিব আল হাসান তামিমের শতভাগ ফিট না থাকার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে একটা রেফারেন্স এনেছেন সামনে। সাকিব বলেন, ভারতীয় বিশ্বকাপ জয়ী সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির কথা। ধোনি বলেছিলেন, কোন ক্রিকেটার যদি শতভাগ ফিট না হয়ে খেলে তাহলে তার নিজের দলের সাথে বেইমানি করা হবে। ধোনি কোন প্রেক্ষাপটে সে কথাটা বলেছেন কিংবা ধোনি সবার উদ্দেশ্যে কথা বলেছেন কিনা সেটা খোঁজার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ কাপ্তান সাকিব আল হাসান যেভাবে জিনিসটাকে রেফারেন্স হিসেবে সামনে এনেছেন সেটা রীতিমত হাস্যকর মনে হয়েছে। কেননা তামিম ইকবালের ইনজুরিটাই এমন যে তিনি আর কোনদিন চাইলেও শতভাগ ফিট হতে পারবেন না।

এবার একটু পেছন ফেরা যাক। মাশরাফি বিন মর্তুজাকে নিঃসন্দেহে বলা হয় বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যতটুকুই সাফল্য এসেছে তার সবচেয়ে বেশি এসেছে মাশরাফির হাত ধরে। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা সাফল্য কোয়াটার ফাইনালটাও মাশরাফির হাত ধরেই বাংলাদেশ খেলেছিলো। ২০১৪ থেকে ২০২০ দলটাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। কখনোবা দলের প্রয়োজনে নিজের ভাঙ্গা হাঁটু নিয়ে লাফ দিয়ে এক হাতে শোয়েব মালিকের ক্যাচ ধরেছেন, কখনো আবার বল হাতে একের পর এক উইকেট নিয়ে ঘরের মাঠে ইংলিশ বধ করেছেন। এরকম উদাহরণ আসলে শতশত আছে মাশরাফির। বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু একটা ব্যাপার যেটা এখন আলোচনায় আসা উচিত, মাশরাফি তো তাঁর ক্যারিয়ারের প্রায় বেশিরভাগ সময়ই শতভাগ ফিট থাকতে পারেননি। একের পর এক ইনজুরি মাশরাফির
খেলোয়াড়ি জীবনে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। তবুও ইনজুরি সামলে মাশরাফি লড়ে গেছেন, জাতীয় দলে না থাকলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনো মাশরাফি লড়ে যাচ্ছেন।

 

সাকিব আল হাসানকে পাল্টা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, তবে কি মাশরাফি দলের সাথে বেইমানি করেছেন? বা এখনো করছেন? আমি জানি না এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে তিনি কি উত্তর দেবেন। তবে সাকিব যার রেফারেন্সটা সামনে টেনে এনেছেন সেই এমএস ধোনি আইপিএলের গত দুই আসরে শতভাগ ফিট না হয়েও খেলে যাচ্ছেন। যতটুকু শোনা যাচ্ছে ৪১ বছর বয়সে এসেও ধোনি আইপিএলে পরের মৌসুমটা খেলবেন। তাহলে কি ধোনিই এখন দলের সাথে বেইমানি করছেন?

প্রশ্নটা আপনার জন্য তোলা থাকলো সাকিব আল হাসান। আপনি দেশের ক্রিকেটের একজন মেগা স্টার। আপনি খুবই স্মার্ট মাঠ এবং মাঠের বাইরে। তবুও আপনার থেকে আসা এমন মন্তব্য দেশের অনেক ক্রিকেটপ্রেমীকে কষ্ট দেবে। আপনার অন্তত এ কথাটা বলার আগে নিজের দেশের প্রেক্ষাপটটা চিন্তা করা উচিত ছিলো। একজন মাশরাফি যাকে আপনিও নেতা মানেন, মিডিয়ায় অনেকবার মাশরাফিকে নিয়ে আপনি অনেক প্রশংসা করেছেন, একজন অভিভাবক হিসেবে অ্যাখায়িত করেছেন। তবে আজ যখন আপনি এমন কথা বললেন সেটা কি একজন ব্যক্তি মাশরাফি ছাপিয়ে খেলোয়াড় মাশরাফির মনে আঘাত করবে না? অধিনায়ক হিসেবে আপনিও তো আনফিট সাইফউদ্দিনকে নিজের পছন্দে এশিয়া কাপ খেলতে নিয়ে গিয়েছিলেন দলের প্রয়োজনে। তখন কি একটিবারও মনে হয়নি সাইফউদ্দিন দলের সাথে বেইমানি করছেন?

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »