নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের লীগ পর্বের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। এ ম্যাচটি নিতান্তই নিয়ম রক্ষার ম্যাচ ছিলো। এ দুল ইতিমধ্যেই এই ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। এ ম্যাচটিকে ফাইনালের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ বলা চলে। তবে নিয়ম রক্ষার হলেও বাংলাদেশ ম্যাচটিকে হালকাভাবে নেয়নি। আফগানিস্তানকে অল্প রানে বেধে ফেলে এবং ৬ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ দল টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজকে ইনজুরির কারণে একাদশে নেই লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। আজ একাদশে সুযোগ পেয়েছেন সাব্বির রহমান।
শুরু থেকেই বেশ সফলভাবেই খেলতে থাকে আফগানরা। কোনোরকম ভুল ছাড়াই খেলে আফগানিস্তান। ওপেনিং জুটিতে রাহমানউল্লাহ গুরবাজ ও হযরতউল্লাহ জাজাই করেন ৭৫ রান। দলীয় ৭৫ রানে ও দশম ওভারের তৃতীয় বলে আফিফ হোসাইনের বলে কাটায় পড়েন হযরতউল্লাহ জাজাই। জানাই আফিফ হোসাইনের বলে মোস্তাফিজুর রহমানের ক্যাচে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ৩৫ বলে ৪৭ রান করে। তবে এই ৭৫ রানের বড় জুটি যেন একমাত্র বড় জুটি এরপর চলতে থাকে বাংলাদেশের বোলারদের আধিপত্য। এই দলীয় ৭৫ রানে এবং একই ওভারে দশম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন আফগানিস্তানের ভরসার প্রতীক আজগর আফগান সেই আফিফ হোসাইনের বলে। এবার আফিফ হোসাইনের বলে নাজমুল হোসেন শান্তর বলে ২ বলে ০ রান করে আউট হন। এরপরে উইকেটের মেলা থামেনি। দলীয় রান ৫ রান আরো যোগ করতে দলীয় ৮০ রানে এগারোতম ওভারের চতুর্থ বলে তৃতীয় উইকেটের পতন হয়। আউট হন আফগানিস্তানের আরেক ওপেনার রাহমানউল্লাহ গুরবাজ ২৭ বলে ২৯ রান করে। রাহমানউল্লাহকে মোস্তাফিজুর রহমান আউট করেন। মোস্তাফিজুর নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ধরেন। এরপর ১৩ তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ৮৮ রানে চতুর্থ উইকেটের পতন হয়। আউট হন আফগানদের আরেক সিনিয়র ক্রিকেটার মোহাম্মদ নবী। নবীকে আউট করেন সাকিব আল হাসান। সাকিব আল হাসানের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে আউট হন নবী। নবী করেন ৬ বলে ৪ রান। দলীয় ১০০ রান তোলার আগে দলীয় ৯৬ রানে আবারো উইকেট হারায় আফগানিস্তান। আউট হন গুলবাদিন নাইব। গুলবাদিন আউট হন রান আউটের। তিনি ১ বলে ১ রান করেন। এরপর দলীয় ১০৯ রানে দলীয় ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন হয়। আউট হয়ে যান আফগানিস্তানের হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান নাজিবুল্লাহ জাদরান। জাদরানকে সরাসরি বোল্ড করে দেন সাইফুদ্দিন। জাদরান ১৬ বলে ১৪ রান করেন । এরপর ১৭ ওভারের শেষ বলে করিম জানাতের আউটের দলীয় সপ্তম উইকেটের পতন হয়। করিম জানাত করেন ৪ বলে ৩ রান। এরপর আর আফগানদের উইকেট পড়ে নি। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ১৩৮ রান করে আফগানিস্তান। শেষদিকে অপরাজিত থাকেন শফিক ও রশিদ খান। বাংলাদেশকে জয়ের জন্য ১৩৯ রানের টার্গেট দেয় আফগানিস্তান।
বাংলাদেশ দল অল্প রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে আউট হয়ে বসেন ওপেনার লিটন কুমার দাস। ৩য় ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় নবম রানে মুজিবুর রহমানের বলে আজগর আফগানের ক্যাচে আউট হন লিটন কুমার দাস। লিটন কুমার দাস করেন ১০ বলে ৪ রান। এর পরক্ষণেই আউট হন আরেক ওপেনার তরুণ ক্রিকেটার নাজমুল হোসেন শান্ত। শান্তকে আউট করেন আফগানদের অভিষিক্ত ক্রিকেটার নাভীন উল হক। দলীয় ৪র্থ ওভারের ২য় বলে ১২ রানে নাভিনের বলে রশিদ খানের ক্যাচে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। শান্ত করেন ৮ বলে ৫ রান। দুই ওপেনারের আউটের পর হাল ধরে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে ভরসার জুটি সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম জুটি। সাকিব ও মুশফিকুর রহিম জুটি বাঁধতে শুরু করেন। প্রথম পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ দলের স্কোর ছিলো ২ উইকেটের বিনিময়ে ২৮ রান। দলীয় ১০ম ওভারের শেষে বাংলাদেশ দলের স্কোর ছিলো ২ উইকেটের বিনিময়ে ৬২ রান। সেই সাথে এই ১০ ওভারের মধ্যেই সাকিব ও মুশফিক জুটি ৫০ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। সাকিব ও মুশফিক বেশ দাপটের সঙ্গে খেলতে থাকেন। তারা অনেক বড় বড় চার ছক্কার মারে ইনিংস সাজাতে থাকেন। তবে বেশিক্ষণ নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি মুশফিকুর রহিম। যেসময় ধরে খেলার কথা ছিলো মুশফিকুর রহিমের সে সময় তিনি ১১ তম ওভারের ৪র্থ বলে একটি শট খেলতে যান এবং তা শফিকুল্লাহ শফিকের হাতের সরাসরি ক্যাচ উঠে। এবং মুশফিকুর রহিম ২৫ বলে ২৬ রান করে প্যাভিলিয়নের পথে ফিরে যান। আর এর মধ্যে দিয়ে ৫৮ রানের সাকিব-মুশফিক জুটি ভেঙ্গে যায়। এরপর মাঠে নামেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আর মুশফিক আউট হয়ে গেলেও সাকিব আল হাসান এক প্রান্ত আগলে ধরে খেলতে থাকেন। মাঝখানে ১৩ ওভারের চতুর্থ বলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে। সমস্যার সমাধানের পথ আবারো খেলা শুরু হয়। সাকিব আল হাসান টিকে থাকলেও টিকতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ১৪তম ওভারের ৪র্থ বলে রশিদ খানের প্রথম ওভারে মাহমুদুল্লাহকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে আউট করেন। রিয়াদ ৮ বলে ৬ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের আউটের পর মাঠে নামেন সাব্বির রহমান। এরই মধ্যে অর্ধশত রান তুলে নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এটি সাকিব আল হাসানের ৯ম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অর্ধশত রান। সাকিবের অর্ধশতের পর রশিদ খানের ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারে দলীয় ১৬ ওভারের ৫ম বলে আসিফ হোসাইন রশিদ খানের বলে বোল্ড আউট হন। তবে তিনি নিজেই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। আফিফ ৪ বলে ২ রান করে আউট হন আফিফ। আফিফের আউটের পর মাঠে নামেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এরপর আর কোনো আউট হয়নি। সাকিব আল হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত তারা দুইজন মিলে ম্যাচ শেষ করে মাঠ ছেড়ে বের হয়ে আসেন। সাকিব আল হাসান ৪৫ বলে ৭০ রান করে অপরাজিত থাকেন এবং মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত অপরাজিত থাকেন ১২ বলে ১৯ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ১৩৮/৭ ( ২০ ওভার )
হযরতউল্লাহ জাজাই- ৪৭ ( ৩৫ ), রাহমানউল্লাহ গুরবাজ- ২৯ ( ২৭ ), শফিক- ২৩ ( ১৭ )*
আফিফ হোসাইন- ২/৯, সাইফুদ্দিন- ১/২৩, শফিউল- ১/২৪, সাকিব আল হাসান- ১/২৪, মোস্তাফিজুর রহমান- ১/৩১
বাংলাদেশ: ১৩৯/৬ ( ২০ ওভার )
সাকিব- ৭০ ( ৪৫ )*, মুশফিক- ২৬ ( ২৫ ), মোসাদ্দেক- ১৯ ( ১২ )
নাভিন উল হক- ২/২০, রশিদ খান- ২/২৭, করিম জানাত- ১/৩১, মুজিবুর রহমান- ১/১৯
ফলাফল: বাংলাদেশ দল ৪ উইকেটে জয়ী।