কে এই ডোমিঙ্গো?

নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »

শেষ পর্যন্ত কে হচ্ছেন টাইগারদের হেড কোচ? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চারিদিকে ছিলো উত্তেজনা। অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকান রাসেল ডোমিঙ্গোকেই হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ দিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। হেড কোচ নির্বাচনের তালিকা শুরু থেকেই ছিলো একটু লম্বা। অনেক গুঞ্জনও উঠেছে এই হেড কোচ ইস্যু নিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকান মিকি আর্থার, শ্রীলংকান মাহেলা জয়াবর্ধনে, জিম্বাবুয়ের গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারও ছিলেন না এই তালিকার বাইরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে বিজয়ী হলেন রাসেল ডোমিঙ্গো।

কে এই ডোমিঙ্গো? এত বড় বড় নাম থাকতে কেন ডোমিঙ্গোকেই নির্বাচন করা হলো? এমন প্রশ্ন সবার মনেই। আগেরবারের কোচ স্টিভ রোডসের কথা কার না মনে নেই। কিন্তু ইংলিশ ঐ ভদ্রলোকও অন্যদের মত এতটা জনপ্রিয় ছিলেন না। ছিলেন না হাই-প্রোফাইল কেউ। ৪৫ বছর বয়সী দক্ষিণ আফ্রিকান রাসেল ডোমিঙ্গোর সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক কোচ। মূলত এই একটি পরিচয়ই তাকে অনন্য এক উচ্চতায় তুলে দিয়েছে। আর এজন্যই আগামী দুই বছরের জন্য সাকিব-তামিম-মুশফিকদের গুরু দায়িত্ব তার কাঁধে তুলে দেওয়া হলো।

টাইগারদের বর্তমান ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জির সাথে একসাথে আগেও কাজ করেছেন রাসেল ডোমিঙ্গো। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ডোমিঙ্গো যখন দক্ষিণ আফ্রিকার হেড কোচ ছিলেন তখন প্রোটিয়াদের ব্যাটিং কোচের দায়িত্বে ছিলেন নেইল ম্যাকেঞ্জি। এখন আবার তাদের রসায়নটা কেমন জমে উঠে সেটাই দেখার বিষয়। এছাড়াও বোলিং আর ফিল্ডিং কোচের দায়িত্বেও আছেন আরো দুই দক্ষিণ আফ্রিকান শার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট আর রায়ান কুক। কেবল স্পিন বোলিং কোচের দায়িত্বে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টরি।

অবাক করা ব্যাপার হলো রাসেল ডোমিঙ্গোর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার বলতে আসলে কিছুই নেই। কারণ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার কোন রেকর্ড নেই তার। ফুটবলের জনপ্রিয় কোচ হোসে মরিনহোর মতই ডোমিঙ্গো। নিজে কোনদিন ফুটবল খেলেন নি, অথচ মরিনহো হয়েছেন একজন বড় মাপের কোচ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার রেকর্ড ডোমিঙ্গোর নেই বলে একদমই ক্রিকেট খেলেন নি এমনটা না। তিনি খেলেছেন ইস্টার্ন প্রোভিন্স নামক দক্ষিণ আফ্রিকার একটি ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে। ক্রিকেটের প্রতি তার টান একদম ছোটবেলা থেকেই ছিলো। আর এ কারণেই ইস্টার্ন প্রোভিন্সের জুনিয়র দলের হয়ে ক্রিকেটে প্রবেশ করেন তিনি। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই হাঁটলেন ভিন্ন পথে। হঠাৎ করেই উপলব্ধি করলেন খেলোয়াড় হওয়া তার জন্য অসম্ভব ব্যাপার। খেলোয়াড়ি জীবন বাদ দিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি শুরু করলেন কোচিং ক্যারিয়ার। যে সময়ে একজন প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার হওয়ার কথা সেই সময়টাকেই তিনি বেঁচে ছিলেন নিজেকে একজন প্রতিশ্রুতিশীল কোচ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য।

তিন বছর পরে অর্থাৎ ২৫ বছর বয়সেই ইস্টার্ন প্রোভিন্সের ইয়থ কোচের দায়িত্ব পান ডোমিঙ্গো। তার ঠিক কিছুদিন পরই সুযোগ আসে দক্ষিণ আফ্রিকা ন্যাশনাল একাডেমিতে কাজ করার যেখানে তার সাথে ছিলেন হিল্টন অ্যাকারম্যান। মূলত এখানেই একজন প্রতিশ্রুতিশীল কোচ হওয়ার মূল মন্ত্রটা আয়ত্ব করেন রাসেল ডোমিঙ্গো।

ডোমিঙ্গোর কোচিং ক্যারিয়ারটা বেশ উজ্জ্বল আর অভিজ্ঞতায় ভরা। ২০০৪ সালে দায়িত্ব পান দক্ষিণ আফ্রিকা অনুর্ধ্ব-১৯ দলের। পরের বছরই দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটের ফ্রাঞ্চ্যাইজি ভিত্তিক দল দ্য ওয়ারিয়র্সের দায়িত্ব উঠে তার কাঁধে। তার অধীনেই এই দলটি ২০০৯-১০ মৌসুমে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে শিরোপা জয়লাভ করে। এরপর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ২০১০ আর ২০১১ এর আসরেও দ্য ওয়ারিয়র্সের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

রাসেল ডোমিঙ্গো তার কোচিং ক্যারিয়ারে কাজ করছেন দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের হয়েও। এরপর ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি কোচের দায়িত্ব পান। ২০১৩ সালে ভারতকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়া কোচ গ্যারি কারস্টেন দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে হেড কোচ হিসেবে রাসেল ডোমিঙ্গোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার সময়েই ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে উঠে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপেও তার হাত ধরে সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে প্রোটিয়ারা। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এই রাসেল ডোমিঙ্গোকে। এর পর থেকেই মোটামুটি ফ্রি পাওয়া যাচ্ছে তাকে। কোচ হিসেবে সবার নিজস্বতার প্রয়োজন হয়। গেইম প্ল্যান থেকে শুরু করে দলের প্রায় সকল খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েই মাথা ঘামাতে হয়। কিন্তু অনেকেই এক দিক থেকে ভালো হলেও অন্য দিকটায় থাকেন দুর্বল। যেমন টাইগারদের সাবেক কোচ স্টিভ রোডসের কথাই ধরা যাক। ভালোই কাজ করছিলেন। সকল খেলোয়াড়দের সাথে বন্ধুর মত আচরণ করতেন। কিন্তু তার ঘাটতি ছিলো গেইম প্ল্যানে। খেলোয়াড়েরা এই দিকটায় অবগত করেছিলেন বিসিবিকে। ভাষাগতও একটা সমস্যা ছিলো। নতুন কোচ ডোমিঙ্গোকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই এখন। তবে দেখার বিষয় তার কোচিং মাঠের ক্রিকেটে ঠিক কতটা প্রভাব ফেলতে পারে। আশা করছি বর্তমান সময়ে নিজেদের চেনা রূপ হারিয়ে ফেলা টাইগাররা তার হাত ধরেই পুরনো ট্র্যাকে ফিরে আসবে। এই মাসের ২১ তারিখে টাইগারদের হেড কোচের দায়িত্ব বুঝে নিতে বাংলাদেশে আসবেন রাসেল ডোমিঙ্গো

————দুর্জয় দাশ গুপ্ত

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »