কেমন আছেন বাংলাদেশের প্রথম হ্যাট্রিক ম্যান?

নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »

বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম হ্যাট্রিক ম্যান কে? এই প্রশ্নের উত্তরটা সবারই জানা। অলক কাপালি। জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ মাঠে নেমেছিলেন সেই ২০১১ সালে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাকে নিয়মিত দেখা গেলেও জাতীয় দলে আর ডাক মিলে নি। কিন্তু কেমন আছেন এই অলরাউন্ডার? কেমন কাটছে তার দিনকাল? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতেই নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কম মুখোমুখি এই ক্রিকেটারের। হয়েছে একটা ছোটখাটো আড্ডা। কিন্তু আড্ডার মাঝেই চলছিল প্রশ্ন আর উত্তরের খেলা।

* কেমন আছেন দাদা?

অলক কাপালি : ভালো আছি।

* জাতীয় দলের বাইরে আজ অনেকদিন। ইচ্ছে করে না আবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দিয়ে মাঠে নামতে?

অলক কাপালি : এমন ইচ্ছা কার থাকে না। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেই হয় না, অনেক সময় ভাগ্যেরও প্রয়োজন হয়। আমি খুব মিস করি জাতীয় দলের সেই দিনগুলো। নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করা, দেশের জন্য লড়াই করে যাওয়া। খুব ভালো সময় ছিলো।

* গত বিপিএলে খেলেছেন আপনার হোম টিম সিলেট সিক্সার্সের হয়ে। বেশ কয়েকটি ম্যাচে অধিনায়কত্বও করেছেন, সফলও হয়েছেন। এবারের বিপিএলের জন্য নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করছেন?

অলক কাপালি : প্রস্তুতি বলতে সবসময় আমার একটা টার্গেট থাকে যে টুর্নামেন্টগুলো আছে এগুলোতে ভালো করার। যেমন, গত বছরের প্ল্যান ছিলো বিপিএলে ভালো খেলবো, প্রিমিয়ার লীগটা ভালো খেলবো, এনসিএলে ভালো খেলবো। তবে বিপিএল আর প্রিমিয়ার লীগ ভালো হলেও এনসিএলটা ভালো হয় নি। এবারও এমনই টার্গেট এই টুর্নামেন্টগুলোতে ভালো করার। বিপিএলের আগে এনসিএল আছে, যদি এনসিএলে ভালো করতে পারি তাহলে বিপিএলটাও ভালো যাবে।

* বাংলাদেশের হয়ে প্রথম হ্যাট্রিক আপনার আর সেটা শক্তিশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি বাংলাদেশ দল একজন লেগ স্পিনারের অভাবটা খুব বোধ করছে। এই দিক থেকে কি মনে হয়? বাংলাদেশ দলকে আপনার দেবার মত আরো কিছু ছিলো না?

অলক কাপালি : আসলে এটা বলা মুশকিল। শুধু আমি দিয়েই না। আমাদের এখন সাকিব, মিরাজের মত বিশ্বমানের স্পিনার আছে। তবে আমাদের দেশে এমনিতেই লেগ স্পিনারের অভাব অনেক। ঘরোয়া ক্রিকেটেও দেখা যায় মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন লেগ স্পিনার। তবে আমি মনে করি ক্রিকেট বোর্ড এদের নিয়েই যদি ভালো ভাবে কাজ করে, পরিচর্যা করে তাহলে অভাবটা পূরণ করা সম্ভব।

* কি মনে হয় আপনার? আবার জাতীয় দলে ডাক পাওয়া সম্ভব?

অলক কাপালি : সত্যি কথা বলতে আমি আর জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখি না। এক সময় খেলেছি, কিছু রেকর্ড হয়েছে, এখন মানুষ আমার রেকর্ড নিয়ে আলোচনা করে এটাই ভালো লাগে। আর যতদিন সম্ভব ক্রিকেট খেলে যাবো। অবশ্যই চেষ্টা থাকবে আরো ভালো কিছু করার।

শেষ প্রশ্নের উত্তরের সাথে ছিলো একটি দীর্ঘশ্বাস। এই দীর্ঘশ্বাসই বলে দেয় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দেবার মত আরো অনেক কিছু ছিলো অলক কাপালির। কিন্তু ২০১১ সালের পরে আর কোন সুযোগই আসে নি। এমনকি জাতীয় দলের জন্য বিবেচনাও করা হয় নি এই ক্রিকেটারকে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা তেমন উজ্জ্বল না। তবে দলের বিপদে অনেকবারই জ্বলে উঠেছেন ব্যাট কিংবা বল হাতে। ১৭ টেস্টে ১৭.১৭ এভারেজে ৫৮৪ রানের পাশাপাশি আছে ৬টি উইকেট। ৬৯ ওয়ানডে খেলে করেছেন ১২৩৫ রান, গড় ১৯.৬। এক দিনের ক্রিকেটে উইকেট নিয়েছেন ২৪টি। এছাড়া ৭টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পাওয়া এই অলরাউন্ডার করেছেন ১১.৪ গড়ে ৫৭ রান। আর এখানে উইকেট সংখ্যা ২। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরিসংখ্যানটা ভালো না মোটেও। তবে এমন কিছু রেকর্ড আছে যেগুলো তখনকার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য স্বপ্নের মত। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান অলক কাপালি। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে দলের বিপর্যয়ে ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে করেছিলেন ঝড়ো এক সেঞ্চুরি। সেই সময় কাপালিকে প্রশংসার সাগরে ভাসিয়েছিলেন শচীন, কপিল দেব, রাহুল দ্রাবিড়ের মত কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা।

অলক কাপালির ফার্স্ট ক্লাস আর লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ার মোটেও খারাপ না। ফার্স্ট ক্লাস ক্যারিয়ারে ১৫২টি ম্যাচ খেলে তিনি করেছেন ৮৬১৩ রান। যেখানে তার গড় ৩৫.৬। আর উইকেট সংখ্যা ২০৮। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে ২০২ ম্যাচে করেছেন ৪২৮৩ রান, উইকেট ১৩০টি। ঘরোয়া ক্রিকেটের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স জোর দাবি রাখে অলক কাপালিকে আরেকটা সুযোগ এনে দেওয়ার। ২০১৫ বিপিএলের ফাইনালের কথাই ধরা যাক। উইকেটে এসে একের পর এক ব্যাটসম্যান যেখানে ব্যর্থ হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন অলক সেখানে দায়িত্ব নিয়ে ২৮ বলে ৩৯ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলে কুমিল্লাকে শিরোপা এনে দিয়েছেন। যেখানে কুমিল্লার শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ২৩ রানের। ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া অলক কাপালি জাতীয় দল থেকে ছিটকে গেলেও বারবার সময় উপযোগী জবাব দিয়েছেন ব্যাটে বলে। বিপিএলের গত আসরের কথাই যদি ধরা হয়, সিলেট সিক্সার্সের হয়ে খেলা এই ক্রিকেটার বেশ ভালোই করেছেন। ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও ছিলেন সফল। সিলেট সিক্সার্সের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের মুখেও ছিলো প্রশংসার বাণী। ওয়ার্নার বলেছিলেন, দলের জন্য খুবই কার্যকরী এক ক্রিকেটারের নাম অলক কাপালি। আর তাইতো ডেভিড ওয়ার্নার চলে গেলে বিপিএলের এই আসরে দলের অধিনায়কত্ব উঠেছিলো অলকের কাঁধেই। আজ যখন বাংলাদেশ দল একজন লেগ স্পিনারের জন্য আক্ষেপ করে অলক কাপালির নাম তখন না চাইলেও উঠে আসে বারবার। কেননা এদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একজন পরিপূর্ণ লেগ স্পিনার হিসেবে তিনিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল। কেউ কেউ বলছেন নির্বাচকদের বলির পাঠা হয়ে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন এই অলরাউন্ডার। কারণ সেই সময়ে দলের পাইপলাইনে এত ভালো প্লেয়ার ছিলো না যাদের জন্য অলক কাপালি আরো একটা সুযোগের আশাই করতে পারেন না। অলক কাপালির ভক্তরা এখনও স্বপ্ন দেখেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন। কিন্তু যাদের হাত ধরে একটি সুযোগ আসবে তাদের কাছেই বারবার উপেক্ষিত এই ক্রিকেটার।

————-দুর্জয় দাশ গুপ্ত

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »