এক নজরে ঐতিহাসিক ইডেন

নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »

‘ক্রিকেটের নন্দন কানন’ খ্যাত ইডেন গার্ডেন্স ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বৃহত্তর স্টেডিয়াম। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের পর যাকে বিবেচনা করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় এটি অবস্থিত। ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্বত্বাধিকারী স্টেডিয়ামটি ১৮৬৪ সালে নির্মাণ করা হয়। স্টেডিয়ামটির নামকরণ কলকাতার অন্যতম পুরাতন পার্কগুলোর একটি ইডেন গার্ডেন্স এর নামানুসারে করা হয়।

স্টেডিয়ামটির স্থানাঙ্ক উত্তরে ২২°৩৩’৫২” এবং পূর্বে ৮০°২০’৩৬”। সর্বোচ্চ দর্শক ধারণক্ষমতা মতান্তরে ৬৭,০০০(মেরামতের পূর্বে ৯০,০০০ছিলো)। বর্তমানে স্টেডিয়ামটি ক্রিকেট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন (সিএবি) কর্তৃক পরিচালিত হয়। এবং এটি বর্তমানে বেঙ্গল ক্রিকেট এবং কলকাতা নাইট রাইডার্সের ঘরের মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

স্থাপত্যের বিচারে ইডেন গার্ডেন্সের সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে সবাইকেই। বাইরে থেকে দেখলে একে ক্রিকেট জাদুঘর ভেবে ভুল করতে পারেন। মূল ফটকের বাইরে গ্লাসে মোড়ানো সাদা-কালো সব বিখ্যাত ঐতিহাসিক ম্যাচের মুহূর্তের ছবি। যার সাক্ষী ছিলো ঐতিহাসিক এ-ই স্টেডিয়াম। মূল ফটক থেকে শুরু করে ১৪নং গেইট পর্যন্ত রয়েছে আইসিসির প্রাক্তন সভাপতি ডালমিয়ার পোস্টারকৃত ছবি।

প্রেস কনফারেন্স রুমের সিঁড়িগুলো রাজকীয়ভাবে তৈরি। যেকেউ একে রাজপ্রাসাদ ভেবে ভুল করতে পারেন৷ ৩য় তলায় অবস্থিত প্রেস কনফারেন্স রুমটির ভিতরে দেখতে কিছুটা সেকেলে। সব ব্যবস্থাও সেকেলে। হয়তোবা ঐতিহ্য রক্ষার্থে এখনো এমনটাই রাখা হয়েছে৷ আসবাবপত্রগুলোও অনেকটা পুরোনো ধাঁচের। তবে দর্শকদের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গার বিস্তৃতি দেখলে অবাক হবেন যে কেউ৷ যা যুগ যুগ ধরে ইডেনের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে৷ ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে সামনে রেখে ইডেন গার্ডেন্স স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় বারের মতো সংস্কার কাজ শুরু করা হয় ।

এবার আসা যাক ম্যাচ সংক্রান্ত বিষয়ে। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ম্যাচ, এই মাঠে ১৯১৭-১৮ সালে প্রথমবার খেলা হয়।

*টেস্ট :

১৯৩৪ সালের ৫-৮ জানুয়ারি ভারত বনাম ইংল্যান্ড টেস্ট ম্যাচের মধ্য দিয়ে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ সংগঠিত হয় এ-ই মাঠে।

এ মাঠে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচে সর্বোচ্চ দলগত রানের পাঁচটি ইনিংস ভারতের অধিকারে রয়েছে:

১) ২০০১ সালে – ৬৫৭/৭ – বিপক্ষ দল অস্ট্রেলিয়া (৩য় ইনিংস)

২) ২০১০ সালে – ৬৪৩/৬ – বিপক্ষ দল দক্ষিণ আফ্রিকা (২য় ইনিংস)
৩) ১৯৯৮ সালে – ৬৩৩/৫ – বিপক্ষ দল অস্ট্রেলিয়া (২য় ইনিংস)

৪) ২০১১ সালে – ৬৩১/৭ – বিপক্ষ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১ম ইনিংস)

৫) ২০০৭ সালে – ৬১৬/৫ – বিপক্ষ দল পাকিস্তান(১ম ইনিংস)

  • সর্বোচ্চ রান : ভিভিএস লক্ষ্মণ – ১২১৭ রান।(৫টি শতক ও ৩টি অর্ধশতক) – সময়কাল ১৯৯৬-২০১১।

  • সর্বোচ্চ রানের ইনিংস : ভিভিএস লক্ষ্মণ : ৪৫২ বল মোকাবিলায় ২৮১রান(সময় : ৬৩১মিনিট)

  • সর্বোচ্চ বাউন্ডারি : ভিভিএস লক্ষ্মণ : ৪৪টি – বিপক্ষ দল অস্ট্রেলিয়া – ২০০১ সালে

  • সর্বোচ্চ উইকেট : হরভজন সিং – ৪৬ উইকেট (১টি ১০ উইকেটের রেকর্ড , ৬টি ৫ উইকেটের রেকর্ড ) – সময়কাল ১৯৯৯-২০১০(৭ টি টেস্ট) ।

  • অভারতীয় অম্পায়ারদের মধ্যে রড ট্যাকার ও রিচার্ড কেটেলবরা সর্বাধিক ৩ টি টেস্ট ম্যাচ পরিচালনা করেছেন।

* ওয়ানডে :

১৯৮৭ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচের মধ্য দিয়ে প্রথম ওডিআই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। স্টেডিয়ামটিতে ১৯৭৮ এবং ১৯৯৭ সালের মহিলা বিশ্বকাপসহ ১৯৮৭, ১৯৯৬, ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

দলীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস :

  • ভারত ৪০৪/৫ – ২০১৪ সালে।
  • ভারত ৩১৭/৩ – ২০০৯ সালে।

ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান :

শচীন টেন্ডুলকার – ৪৯৬
আজহার উদ্দিন – ৩৩২

সর্বোচ্চ উইকেট :

অনিল কুলম্বে – ১৪ টি
কপিল দেব – ১৪ টি

  • টি – টোয়েন্টি :

২০১১ সালের ২৯শে অক্টোবর ভারত বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচের মধ্য দিয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি অনুষ্ঠিত হয়। এ-ই মাঠে সর্বমোট ৬টি টি-টোয়েন্টি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

* আইপিএল :

২০১৫ আইপিএলের পরিসংখ্যান :

প্রথম ইনিংস-এ দলের মোট রানের গড় = ১৭৬

প্রথম ইনিংস এ দলের উইকেট পতনের গড় = ৬

গড় রান তাড়া করে জয় = ১৭৩

সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় = ১৮৩ (কলকাতা, পাঞ্জাব এর বিরুদ্ধে) ; রাসেল ৫১(২১)

গড় রান তাড়া করে হার = ১৮০

সর্বনিম্ন রান তাড়া করে হার = ১৬৭ (হায়দ্রাবাদ , কলকাতা এর বিরুদ্ধে) ; হগ ২/১৭ (৪ ওভার)

কালের বিবর্তনে ঐতিহাসিক এ-ই মাঠ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। ইডেন মানেই যেন নতুন নতুন ইতিহাস। নিম্নে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো সংক্ষিপ্তাকারে :

  • ১৯৮৭ সালের ৮ই নভেম্বর ইডেনের মাটিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালের আসর বসে৷ সেই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড৷ ঐতিহাসিক এ-ই ম্যাচের সাক্ষী ইডেন গার্ডেন্স।

  • ১৯৯৩ সালে ভারতের মাটিতে প্রথম নৈশলোকে ক্রিকেট ম্যাচের সাক্ষী এ-ই ঐতিহাসিক ইডেন৷ সিএবি এ-র ডায়মন্ড জুবিলি বছরে প্রথমবার হিরো কাপের ম্যাচ নৈশলোকে অনুষ্ঠিত হয় এ-ই মাঠে।

  • ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সাক্ষী ঐতিহাসিক ইডেন। বিশ্ব দরবারে নতুন চমক দিয়েছিলো সেদিন ইডেন গার্ডেন্স।

  • ১৯৯৯ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি ভারত বনাম পাকিস্তানের মধ্যকার অনুষ্ঠিত প্রথম এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচের সাক্ষী ইডেন গার্ডেন্স।

  • ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট ম্যাচ খেলা কিংবদন্তি ‘লিটল মাস্টার শচীন’ ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর ক্যারিয়ারের ১৯৯তম টেস্ট ম্যাচ খেলেন। ঐতিহাসিক সেই ম্যাচের সাক্ষী ইডেন গার্ডেন্স।

  • ২০১৬ সালের ঐতিহাসিক সেই টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালের সাক্ষী ইডেন। পাশাপাশি মহিলা ও পুরুষ বিশ্বকাপ টি-২০ ম্যাচের ও সাক্ষী ইডেন গার্ডেন্স।

সামনে নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে ইডেন। আগামী ২২শে নভেম্বর বাংলাদেশ – ভারত মধ্যকার গোলাপি বলে ঐতিহাসিক ‘দিবারাত্রি টেস্ট’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইডেন গার্ডেন্সে৷ ঐতিহাসিক এ টেস্টের মাধ্যমে টেস্ট ক্রিকেটে রচিত হতে যাচ্ছে নতুন ইতিহাস। থাকছে বিশেষ চমক। যা ইতিমধ্যেই ক্রিড়াপ্রেমী সকল সমর্থকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অপেক্ষা সেই মাহিন্দ্রক্ষণের।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »