ঋতু-তামিমদের কোচ মুসলিম উদ্দীনের অকাল প্রয়াণ

নিউজ ডেস্ক »

শত ছেলে-মেয়ের চোখ জেতার স্বপ্ন বুনে দেওয়া মানুষের অসময়ে হেরে যাওয়া। তবে কি মাঠের ক্রিকেটেই? না! মাঠের ক্রিকেটে ‘হার’ শব্দটা হয়তো তার অভিধানে ছিল না। থাকলেই কি আর বাইশ গজে দাপিয়ে বেড়াতো তৌহিদ হৃদয় কিংবা ঋতু মনির মতো তারকা ক্রিকেটাররা! নিজ হাতে গড়ে তোলেছেন অসংখ্য ক্রিকেটার, যারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন নারী কিংবা পুরুষ দলে।

বলছিলাম বগুড়ার শহীদ শাহ চান্দু ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন ইয়াং টাইগার্স ক্রিকেট একাডেমীর কোচ মুসলিম উদ্দীনের কথা। যিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন প্রায় মাস ছয়েক আগেই। ব্যাট-বলের সাথে থাকা অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে নেওয়া তাকে। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। হার্টের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মুসলিম মারা যান বলেও জানান চিকিৎসক।

মৃত্যুর আগে দেশের ক্রিকেটে অনেক অবদান রেখে গেছেন ক্রিকেটার গড়ার এই কারিগর। তার হাতে গড়া ছাত্র, জয় করেছে বিশ্ব। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সদ্য বিশ্বকাপ জেতা অনুর্ধ্ব-১৯ দলের অন্যতম দুই সদস্য তানজিদ হাসান তামিম এবং তৌহিদ হৃদয়ের গুরু এই মুসলিম উদ্দীন। ছোটবেলায় বগুড়ার ঐ একাডেমীতে মুসলিমের হাতেই তাদের ক্রিকেটের হাতেখড়ি। অসাধারণ প্রতিভাধর সেই চ্যাম্পিয়নদের কোচ অকাল প্রয়াণ এই ক্রীড়া নিবেদক।

নারী ক্রিকেটেও এই কোচের অবদান অসামান্য। তবে তার একাডেমীতে ছিল কেবল পুরুষদের ক্রিকেটীয় পাঠদান। বাড়তি সময়ে নারীদের নিয়ে আলাদা কাজ করতেন তিনি। সেখান থেকেই গড়ে তোলেছেন জাতীয় দলের তিন তিন টাইগ্রেস। খাদিজাতুল কুবরা, ঋতু মনি এবং শারমিন সুলতানা- বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা দলের প্রতিষ্ঠিত সদস্য। মুসলিম উদ্দীনের এই তিন ছাত্রী দীর্ঘদিন ধরে খেলছেন জাতীয় দলে।

তার সবচেয়ে ভালো গুণ ছিল ক্রিকেটের প্রতি এক নিবেদিত প্রাণ। ক্রিকেট থেকে আয় করা টাকার অধিকাংশই তিনি খরচ করতেন সেই ক্রিকেটের পেছনেই। প্রতি মাসে নতুন ব্যাট-বল কেনা, বিদেশী ব্র্যান্ডের উন্নতমানের ইকুইপমেন্ট আমদানী করতেন একাডেমীর জন্য। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল স্বপ্নসারথীদের পাশে সবসময় পাওয়া যেত মুসলিমকে। এক কথায় ক্রিকেটের জন্যই নিজেকে সপে দিয়েছিলেন তিনি।

মৃত্যকালে তিনি ছিলেন অবিবাহিত। যুবক বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করা মুসলিমের পারিবারিক জীবন ছিল বিধবা বড় বোনের সাথে বগুড়া শহরে। বাবা-মা দুজনেই মারা গেছে আগেই। তার রেখে যাওয়া ক্রিকেটারদের মুখে শোনা গেছে তার ভালো কীর্তির গল্প। মনের কোনে একরাশ শোকের মেঘও আবছা হয়ে আছে ঋতু মনি, তামিমদের মনে। তবে কেন নয়, কীর্তিমানের মৃত্যুতে এমনই হয়।

নিউজক্রিকেট/ইমতিয়াজ

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »