ইতিহাস ম‌নে রাখ‌বে ইম‌নের ৩৪ বল, ২২ রান, ৩ চার!

শোয়েব আক্তার »

১৩তম অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকা‌পের ফাইনা‌ল ম্যাচ‌টি না দে‌খে শুধু স্কোর কার্ড য‌দি কেউ দে‌খে থা‌কেন ত‌বে উপ‌রের শিরোনাম দেখে যে কেউ বিভ্রান্ত হ‌তে পা‌রেন। কারণ, স্কোর কার্ড অনুসা‌রে উ‌দ্ভোধনী ব্যাটসম্যান পার‌ভেজ হোসাইন ইমন ক‌রে‌ছেন দ‌লের প‌ক্ষে স‌র্বোচ্চ ৭৯ ব‌লে ৪৭ রান। র‌য়ে‌ছে চার‌টি অসাধারণ চা‌রের মার ও।

‌কিন্তু যারা মা‌ঠে ব‌সে কিংবা টে‌লি‌ভিশ‌নে সরাস‌রি ‌খেলা দে‌খে‌ছেন তারা জা‌নেন ইম‌নের খেলা এই ৩৪ বল, ২২ রান ও ৩ টি চা‌রের গুরুত্ব। খুঁ‌ড়ি‌য়ে খুঁ‌ড়ি‌য়ে এক এক‌টি সি‌ঙ্গেলস, দূর্দান্ত কাভার ড্রাই‌ভে বল কে সীমানা ছাড়া ‌করা কিংবা অধিনায়ক আকবর আলি’র সা‌থে ৪১ রা‌নের মহামূল্যবান জু‌টি। ইম‌নের এই ২২ রা‌নের ইনিংস‌টি ক্রি‌কেটীয় সৌন্দ‌র্যের, সাহ‌সের, বীর‌ত্বের উদাহরণ। প্র‌ত্যেক‌টি বল, প্র‌ত্যেক‌টি রান সব কিছুই বাংলা‌দে‌শের প্রথম শি‌রোপা জ‌য়ের ইতিহা‌সের অংশ।

১৩তম ওভা‌রের পঞ্চম ব‌লে র‌বি বিষয়নের গুগ‌লি বুঝ‌তে না‌ পে‌রে মাহমুদুল হাসান জয় আউট হ‌য়ে গে‌লে হ্যাম‌স্ট্রিং ইঞ্জু‌রি‌তে প‌ড়ে একই সা‌থে মাঠ ছা‌ড়েন পার‌ভেজ হোসাইন ইমন। দ‌লের রান তখন ৬২ রা‌নে ২ উইকেট। এরপর-ই দৃশ্যপট পাল্টা‌তে থা‌কে। তা‌সের ঘ‌রের ম‌তো ভে‌ঙ্গে প‌ড়ে বাংলা‌দে‌শের মিডল অর্ডার। একে একে সাজঘ‌রে ফেরত যান তৌ‌হিদ হৃদয়, শাহাদাত হোসাইন, শা‌মিম হো‌সেন ও অভি‌ষেক দাস। প্রথম শি‌রোপা জ‌য়ের স্বপ্ন মূহুর্তেই ফি‌কে হ‌তে শুরু ক‌রে কো‌টি সমর্থক‌দের হৃদ‌য়ে।

মাংস‌পে‌শি‌তে ‌চোট পে‌য়ে খুঁ‌ড়ি‌য়ে খু‌ড়ি‌য়ে মাঠ পে‌রি‌য়ে গে‌লেও ড্রে‌সিং রুম পর্যন্ত যে‌তে পা‌রেন নি তি‌নি। বাধ্য হ‌য়েই ব‌সে প‌ড়ে‌ছি‌লেন সিঁ‌ড়ি‌তে। ২৩তম ওভা‌রের শেষ ব‌লে সুশান্ত মিসরার বাউন্সার আকা‌শে তু‌লে দেন অভি‌ষেক দাস। কা‌র্তিক ত্যাগী বল‌টি তালুবন্দি কর‌লে প্রাথ‌মিক চি‌কিৎসা’র পর ইঞ্জু‌রি নি‌য়েই আবারও মা‌ঠে নে‌মে প‌ড়েন এই বাঁহা‌তি ও‌পেনার। জয় থে‌কে তখন ও ৭৬ রান দূ‌রে বাংলা‌দেশ। ৪২ বল থে‌কে ২৫ রান নেওয়া ইমন নতুন ক‌রে আবারও ব্যাট করা শুরু ক‌রেন।

ভারতীয় বোলার’রা যখন বাংলা‌দে‌শি ব্যাটসম্যান‌দের উপর চ‌ড়ে বস‌ছি‌লেন তখন-ই ঠান্ডা মাথায় ব্যাট ক‌রে ম্যাচ বের ক‌রে নি‌য়ে আসেন ইমন-আকবর জু‌টি। দুজ‌নের ৪১ রা‌নের জু‌টি‌তে ইম‌নের অবদান ২২। পাঁচ‌টি বাউন্ডা‌রির তিন‌টি-ই এসে‌ছে ইম‌নের ব্যাট থে‌কে। দুই ব্যাটসম্যান প্রান্ত বদল ক‌রে‌ছেন ১৫ বার। দুই রান নি‌য়ে‌ছেন দুইবার। রান নি‌তে গি‌য়ে ব্যথায় বারবার বিবর্ণ হ‌য়ে যাওয়া ইম‌নের মুখ শুধু এক‌টি কথা-ই জানান দি‌চ্ছি‌লো্র চ্যা‌ম্পিয়ন হওয়ার জন্য-ই আমরা এসে‌ছি। চ্যা‌ম্পিয়ন না হ‌য়ে মাঠ ছাড়‌বো না।

অবশ্য বাংলা‌দে‌শের ক্রি‌কেটে ক্রি‌কেটার‌দের এমন নি‌বে‌দন এবার-ই প্রথম নয়। জাতীয় দ‌লের অধিনায়ক মাশরা‌ফি বিন মতুর্জা পাঁ‌য়ে সাত-সাত‌টি অস্ত্রোপাচার নি‌য়ে এখনও মাঠ দা‌পি‌য়ে বেড়া‌চ্ছেন। বাঁহা‌তে ক্ষত নি‌য়ে সা‌কিব আল হাসা‌নের নিদাহাস ট্র‌ফি খেলা, পাজ‌রের ভাঙ্গা হাৎ নি‌য়ে ডান‌দি‌কে ঝাঁ‌পি‌য়ে প‌ড়ে মুশ‌ফিকুর র‌হি‌মের এক‌টি হাফ চান্স ক্যাচ প‌রিণত করা এইরকম অসংখ্য উদাহরণ পাওয়া যা‌বে।

‌দেশের ক্রি‌কে‌টের প্র‌তি নি‌বেদ‌নের অন্যতম বড় উদাহরণ ২০১৮ এশিয়া কাপে ভাঙা হাতে প্লাস্টার বেঁধে এক হাতে তামিম ইকবা‌লের ব্যাট করার দৃশ্য। ওই দিন দ্বিতীয় দফায় ব্যাট কর‌তে নে‌মে তা‌মিম মোকা‌বেলা ক‌রে‌ছি‌লেন মাত্র এক‌টি বল । কিন্তু ওই এক‌টি বল মোকা‌বেলায় যে অসীম সাহস দে‌খি‌য়ে মা‌ঠে নে‌মে পড়ে‌ছি‌লেন তা‌মি‌ম তা স‌ত্যিই প্রসংশার দা‌বিদার। কারন, ওই বল‌টি য‌দি তা‌মি‌মের ভাঙ্গা হা‌তে পুনরায় আঘাত কর‌তো ত‌বে জীব‌নের জন্য নিজের হাত খুঁই‌য়ে বস‌তে পার‌তেন তা‌মিম।

তা‌মি‌মের ম‌তো ভাঙ্গা হাত নি‌য়ে মা‌ঠে না‌মেম নি ইমন। তবুও ব্যথা নি‌য়ে ইমন যেভা‌বে ব্যা‌টিং ক‌রে গে‌ছেন তা অবিশ্বাস্য। ত‌বে এর মধ্য দি‌য়ে ফু‌টে উঠে‌ছে বাংলা‌দেলে তে‌জের গল্প। বাংলা‌দে‌শের সাধারণ মানুষ যেমন মাশরা‌ফি, সা‌কিব, মুশ‌ফিক, তা‌মিমদের অবদান ভু‌লে যায় নি, তেম‌নি পার‌ভেজ হোসাইন ইম‌নের ৩৪ ব‌লে ২২ রা‌নের ছে‌াট কিন্তু সাহসী ইনিংস‌টি’র কথা কখনও ভুল‌বে না। ইতিহাস হ‌য়ে থাক‌কে সবার ম‌নে, যেমনটা অম্লান থাক‌বে প‌চে‌ফেস্ট্রু‌মে শি‌রোপা হা‌তে জ‌য়োল্লাস করা কিছু উদীমান তরু‌নের মুখ।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »