সাকিব শাওন »
রাজিন সালেহ বাংলাদেশের হয়ে ২৪ টেস্টে করেছেন ১১৪১ রান, গড় প্রায় ২৬। একদিনের ক্রিকেটে ৪৩ ম্যাচে করেছেন ১০০৫ রান গড় ২৪। এবং একটি টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পেয়ে করেছেন ১১ রান। ফার্স্ট ক্লাস ক্যারিয়ারে ১৪২ ম্যাচে রান করেছেন ৮১৩৫, গড় ৩৫.৭। আর লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে ম্যাচ খেলেছেন ১৪০টি। ২৪.৬ গড়ে ৩১৫৩ রানের মালিক রাজিন সালেহ। ভাগ্যটা সাথে ছিলো না একদম তাইতো ২০০৮ সালের পর আর জাতীয় দলে খেলা হয়নি তার পরবর্তিতে অবসর নিলেও ক্রিকেট যে মিশে গেছে তার রক্তে। আর তাইতো এখন নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন ক্রিকেট কোচিংয়ের সাথে।
বর্তমানে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর কারণে মাঠের ক্রিকেটাররা থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফরা সবাই এখন ঘরবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। আর এই অবসর সময়টাতে নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডটকমের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সাথে নিজের বর্তমান কোচিং ক্যারিয়ার, ক্রিকেটের বিভিন্ন দিক এবং সাথে নিজের ক্রিকেটে আসার গল্প নিয়ে কথা বলেছেন রাজিন সালেহ।
নিউজ ক্রিকেটঃ কোয়ারেন্টাইনের এই দীর্ঘ সময় কিভাবে পার করছেন?
রাজিন সালেহঃ দেখেন এতো দীর্ঘ সময় ধরে আমার কখনো ঘরে থাকা হয়নি, সবসময় খেলা না হয় কোচিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় এখন ত কোন ব্যস্ততা নাই এজন্য বাসায় থাকছি পরিবারের সাথে, বাচ্ছাদের সাথে সময় পার করছি।
নিউজ ক্রিকেটঃ ফিটনেসের দিক নজর রাখছেন কিভাবে?
রাজিন সালেহঃ দেখেন বাসার মধ্যেই যতটুকু সম্ভব কাজ করে যাচ্ছি, আর রাতে তারাবি নামায শেষেও কিছু ব্যায়াম আছে সেগুলো করছি।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার ক্রিকেটের শুরুর গল্পটি কেমন ছিলো?
রাজিন সালেহঃ ছোটবেলায় ক্রিকেট ফুটবল দুইটাই খেলতাম। যখন স্কুলে পড়তাম তখন থেকেই ক্রিকেট খেলতাম। এরপর স্কুলের একটা খেলায় আমি ফিল্ডিং হিসেবে সুযোগ পাই কারণ ফিল্ডিংটা খুব ভালো করতাম আমি। এরপর সিলেট সেকেন্ড ডিভিশন খেলা শেষে ঢাকায় যায় অনুর্ধ-১৬ কোয়ালিফাই খেলতে আমার বড় ভাই আমাকে নিয়ে যায়। ঠিক সেই বছরই অনুর্ধ-১৬ নিয়ে একটা ক্যাম্প শুরু হয় সেখানে আমি ভালো করি। তারপর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ডাক পাই। তারপর অনুর্ধ-১৯, জাতীয় দল এভাবে করে শুরু হয়েছিলো আমার।
নিউজ ক্রিকেটঃ বাংলাদেশ ক্রিকেটের দিন বদলের শুরু থেকেই তো আপনি ছিলেন সেক্ষেত্রে আপনার সেরা মুহুর্ত কোনটি?
রাজিন সালেহঃ সেরা মুহুর্ত বলতে জিম্বাবুয়ে সিরিজে তাদের দেশে গিয়েছিলাম খেলতে। তার আগে আমরা অনেক ম্যাচ হারতে থাকি জয়ের দেখা পাচ্ছিলাম না হঠাৎ যখন দলে একটা জয় আসলো সবকিছু পাল্টে গেলো তারপরেই ত প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়লাভ করলাম। আর সেই টেস্ট সিরিজে আমি ভালো রান করেছিলাম। সেটা ভাবলেও অনেক ভালো লাগে এখন।
নিউজ ক্রিকেটঃ জাতীয় দলের ড্রেসিং রুমটা আপনার কাছে কেমন ছিলো?
রাজিন সালেহঃ আসলে জাতীয় দলের ড্রেসিং রুমে সময় কাটাতে পারাটা ছিলো অন্যরকম এক অনুভূতি। ড্রেসিংরুমের কাটানো সেই সময়টা খুব মিস করি সাথে করে সুমন ভাই, সুজন ভাই, মান্জারুল রানা তাদের সবার সাথে কাটানো সময়টা এখনো খুব মনে পড়ে।
নিউজ ক্রিকেটঃ ২০০৪ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রপিতে তখনকার অধিনায়ক হাবিবুল বাশার খেলার মধ্যে ইঞ্জুরিতে পড়েন, যার কারণে আপনার কাঁধে পড়ে নতুন অধিনায়কের দায়িত্ব, কেমন ছিলো বিষয়টা আপনার কাছে?
রাজিন সালেহঃ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রপিতে সুমন ভাই যখন একটি ম্যাচের মধ্যে হাতের ইঞ্জুরিতে পড়েন তখন আমার কাঁধে এই বড় দায়িত্বটি আসে। আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশের হয়ে অধিনায়কত্ব করাটাই অনেক বড় কিছু হোক সেটা ১/২ ম্যাচের জন্য। আমার কাছে অধিনায়কত্বটা করাটা খুবই গর্বের বিষয়।
নিউজ ক্রিকেটঃ ক্যারিয়ারে অনেক বাঘা বাঘা বোলারকে সামলেছেন সেক্ষেত্রে কখনো কি মনে হয়েছে যে কারো বল খেলতে আপনার সমস্যা মনে হয়?
রাজিন সালেহঃ এমন প্রশ্নে আমি শোয়েব আক্তারের কথাই বলবো। ওর বল খেলতে ভয় পেতাম এমনটা না ওর বোলিং এ্যাকশানটাই অন্যরকম ছিলো। যদিও তাকে আমি ভালো খেলেছি সবসময়। তবুও শোয়েবের বল দেখলে কেনো জানি নিজের ভিতর সবসময় একটা সমস্যা সৃষ্টি হতো।
নিউজ ক্রিকেটঃ বর্তমানে কোচিং ক্যারিয়ার কেমন উপভোগ করছেন?
রাজিন সালেহঃ আমার কোচিং ক্যারিয়ার টা মাত্র শুরু হয়েছ। গতবছর এনসিএলে প্রথমবারের মতো সিলেট ডিভিশনকে চ্যাম্পিয়ন করেছি। ওটা আমার কোচিং ক্যারিয়ারের একটা টার্নিং পয়েন্ট ছিলো। তাছাড়া শেষ বিপিএলে যখন রাজশাহীর প্রধান কোচ চলে যায় তারপর আমার উপর সব দায়িত্ব আসে। যেহেতু জাতীয় দলে খেলেছি অনেক কোচের সাথে কাজ করেছি সেই অভিজ্ঞতা থেকে কাজ করেছি সফলও হয়েছি। আর আমার সাথে হান্নান সরকার আমার বন্ধু সেও ছিলো অনেক কাজে সে আমাকে সাহায্য করেছিলো যার কারণে আমার কাজ করতে অনেক সহজ হয়েছিলো। আর তাছাড়া ক্লেমন নামে আমার একটা একাডেমী আছে যেটা অনেক আগেই থেকেই শুরু করেছি।
নিউজ ক্রিকেটঃ ভবিষ্যতে সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ার কোথায় দেখতে চান?
রাজিন সালেহঃ দেখেন সাকিবের তুলনা সে নিজেই।আমি তার সাথে খেলেছি সে বিশ্বমানের একজন ক্রিকেটার। সাকিবের ক্যারিয়ার যখন শেষ হবে আমি মনে করি সাকিবকে সারা বিশ্ব মনে রাখবে। ডন ব্রাডমানকে যেমন সবাই মনে রেখেছে তেমনি সাকিবকেও সবাই মনে রাখবে।
নিউজ ক্রিকেটঃ ব্যাটিংয়ে আপনার আইডল কে?
রাজিন সালেহঃ আমি প্রথমে আমার বড় ভাই নাসিরুল আলম নাহিদের কথা বলবো। তাকে দেখে ব্যাটিং শিখতাম ছোট বেলায়। ভাইয়াও জাতীয় দলের হয়ে খেলেছে। আমার ক্যারিয়ারের পিছনে ভাইয়ার অবদানও অনেক ছিলো সে কারণে সবকিছু মিলিয়ে আমি ভাইয়াকে আইডল মনে করি।
নিউজ ক্রিকেটঃ প্রথম যখন মান্জারুল রানার মৃত্যুর খবর পেলেন তখন কেমন অনুভূতি হয়েছিলো?
রাজিন সালেহঃ ২০০৭ সালে তখন আমরা ওয়েস্ট-ইন্ডিজে ছিলাম। আমি সকালে রুমে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ পাশের রুম থেকে তাপস বৈশ্য ফোন দিয়ে বললো মান্জারুল রানা মারা গেছে আমি এটা শোনার পর আর কথা বলতে পারছিলাম না। রুমের বাইরে করিডোর আছে ওখানে বসে হাউমাউ করে সেদিন কেঁদেছিলাম আমি। শেষ দেখাও তাকে দেখতে পারলাম না। রানা অসাধারণ একজন মানুষ ছিলো। ওর সাথে আমার এমন কোন কথা থাকতো না যা আমি শেয়ার করতাম না। খুব খুব মিস করি আমি রানাকে।
নিউজ ক্রিকেটঃ এ বছর টি-২০ বিশ্বকাপ আছে সেখানে বাংলাদেশের সম্ভবনা কতটুকু দেখছেন?
রাজিন সালেহঃ সত্যি বলতে টি-২০ ক্রিকেটে আমরা এখনো একটু পিঁছিয়ে আছি অন্য দলের তুলনায়। টি-২০ তে আমাদের ভালো বর্তমানে ভালো খেলোয়াড় ও আছে আশাকরি বিশ্বকাপে পজিটিভ রেজাল্টই আসবে।
নিউজ ক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডটকমের
পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
রাজিন সালেহঃ আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ এবং একই সাথে নিউজ ক্রিকেটের সকল পাঠকদের জানাই শুভেচ্ছা।