নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
২০০৭ সালের আজকের এই দিনটায় বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম হ্যাট্রিক তুলে নিয়েছিলেন ‘গতি দানব’ খ্যাত বোলার ব্রেট লি। সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা ও অলক কাপালির উইকেট শিকারের মধ্য দিয়ে তিনি এই কীর্তি অর্জন করেছিলেন।
১৯৭৬ সালের ৮ই নভেম্বর নিউ সাউথ ওয়েলস প্রদেশের ওলনগং এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন ব্রেট লি ‘দ্যা স্পিডস্টার’। তার ক্রিকেটীয় জীবন ও বিভিন্ন তথ্য নিউজক্রিকেট২৪.কম এর পর্দায় তুলে ধরা হলো.
★ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার, অভিষেক ও শেষ ম্যাচ
শুরুতেই টেস্টঃ ১৯৯৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ৩৮৩ নম্বর ক্রিকেটার হিসেবে আবির্ভাব হয়েছিলো তার। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটা খেলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, ২০০৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর। দীর্ঘ ৯ বছরের এই ক্যারিয়ারে ৭৬ ম্যাচ খেলে ৩১০ টি উইকেট শিকার করেছেন।
ওয়ানডেঃ ২০০০ সালের ৯ জানুয়ারি পাকিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ১৪০ নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্রেট লি’র পথচলা। ২০১২ সালের ৭ জুলাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলেন তিনি। এক যুগের বিস্তর এক ক্যারিয়ারে ২২১ ম্যাচ খেলে ৩৮০ টি উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
টি-টোয়েন্টিঃ ২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ায় ৭ নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। ২০১২ সালের ৩০ মার্চ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। ৭ বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটা ছিলো অতি ক্ষুদ্র। এই ফরমেটে ২৫ টি ম্যাচ খেলে ২৮ টি উইকেট শিকার করতে পেরেছিলেন তিনি।
ক্রিকেটকে বিদায় বলার সময় তার নামের পাশে যুক্ত হয়েছিলো ঈর্ষনীয় এক ক্যারিয়ার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৪২ ম্যাচ খেলে ৭১৮ টি উইকেট শিকারের গৌরব অর্জন করেন তিনি।
★ ক্রিকেটীয় জীবন ও নানাবিধ অর্জনঃ ব্রেট লি তার দূরন্ত গতির পেস বোলিংয়ের জন্য পরিচিত। অস্ট্রেলিয়া দলে অবস্থানকালীন সময়ে লিকে খুবই দ্রুতগতির ফাস্ট বোলার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিলো। তাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। ধারাবাহিকভাবে দ্রুতগতিতে বোলিং করার ফলে তার হাড়ে ফাটল ধরে এবং আঘাতের মুখোমুখি হয়। আর তাই তিনি তার বোলিংয়ের ধরন পাল্টিয়ে ফেলেন এবং যা বেশ কার্যকরী হয়ে উঠে। ফিল্ডার হিসেবে বেশ দৌঁড়াতে পারতেন তিনি। এছাড়াও দলের প্রয়োজনে নীচের সারির ব্যাটসম্যানরূপে টেস্ট ক্রিকেটে তার ব্যাটিং গড় ২০ রানেরও অধিক।
ক্রিকেট জীবনের শুরুতে ব্রেট লি অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে দূরীভূত হয়। ব্রেট লি, গ্লেন ম্যাকগ্রা, শেন ওয়ার্নের সাথে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলিং-ত্রয়ী জুটি গড়ে তুলেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ে তিনি বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। অই বিশ্বকাপেই তিনি কেনিয়ার বিপক্ষে হ্যাট্রিক করেন। এছাড়া তিনি জাতীয় দলের হয়ে ২০০৬ এবং ২০০৯ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের পক্ষ হয়ে তিনি খেলেছেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ বা আইপিএলের ৫ম মৌসুমে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে জয়ী হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তার দল। ব্রেট লি নিউ সাউথ ওয়েলসের ব্লুজের হয়ে ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয় করেন। তিনি ফাইনাল ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় মনোনীত হন।
২০০৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে কেপ টাউনের নিউল্যান্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্ব টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতার সুপার-এইট পর্বের খেলায় বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাট্রিক করেন। সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা ও অলক কাপালিকে আউট করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম হ্যাট্রিক লাভকারী বোলারের মর্যাদা পান ব্রেট লি।
★ সম্মাননাঃ ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে উইজডেন বর্ষসেরা তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন।
২০০৫-২০০৬ মৌসুমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের পক্ষ থেকে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৬ সালে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার হন। ২০০৮ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের পক্ষ থেকে টেস্ট দলের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পুরস্কার পান।
★ ব্যাক্তিগত রেকর্ডসমূহঃ ব্রেট লি একমাত্র বোলার যিনি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হ্যাট্রিক করেন।
ব্রেট লি টি২০ ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম হ্যাট্রিক করা বোলার। ওয়ানডেতে অস্টেলিয়ার যৌথ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী এবং পুরো বিশ্বে অস্টম, টেস্টে অস্টেলিয়ার চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার তিনি।
ব্রেট লি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৯ বার ৫ উইকেট নেন। এ সময়ে কখনোই তার দল হারেনি।
ব্রেট লি ওয়ানডেতে ৯ বার ৫ উইকেট নেন। ফাস্ট বোলারদের মধ্যে শুধু ওয়াকার ইউনুস তার চেয়ে এগিয়ে, ইউনুস নিয়েছিলেন ১৩ বার।
★ ব্রেট লি দলে থাকাকালীন সময়ে তার দলের সাফল্যঃ অস্ট্রেলিয়া ২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো।
অস্ট্রেলিয়া ২০০৬ ও ২০০৯ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো।
বিশ্বের ১ নম্বর টেস্ট দলের সদস্য (২০০০-২০০৮)। ব্রেট এ সময়ে ৭৬টি টেস্ট খেলেন ও ৫৪টিতেই জয়ী হন।
২০১২ সালে সিডনি সিক্সার্সের হয়ে বিগব্যাশ টি-টোয়েন্টি লীগে চ্যাম্পিয়ন।
২০০৯ সালে নিউ সাউথ ওয়েলজ ব্লুজের হয়ে টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়।
২০১২ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন।
ব্রেট লির অবসরঃ ২০০৮ সাল থেকেই শারীরিক অক্ষমতাজনিত কারণে ব্রেট লি টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি তার বন্ধু এবং ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের পরামর্শ মোতাবেক টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি বলেন, “পাঁচদিন ধরে দেড়শ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করা তার পক্ষে বেশ দূরূহ ব্যাপার।”
৭৬ টেস্টে তিনি ৩১০ উইকেট লাভ করেছেন, যা অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে চতুর্থ সর্বোচ্চ। তার উপরে আছেন শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং ডেনিস লিলি।
২০১২ সালের ১৩ জুলাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তর থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। ইংল্যান্ড সফরে অস্ট্রেলিয়ার একদিনের আন্তর্জাতিক দলে খেলার সময় হাঁটুর আঘাতপ্রাপ্তিই এর মূল কারণ। তারপরও লি আইপিএল এবং বিগ ব্যাশ লীগ মাতিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বিগ ব্যাশ লীগ শেষে ব্রেট লি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন।
নিজের শক্তিশালী বোলিং ও গতির ঝড় তুলে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের কাবু করার পটু ছিলেন এই ‘গতি দানব’। আর এমন একজন লিজেন্ডারি বোলারকে সারাজীবন মনে রাখবে ক্রিকেটবিশ্ব।