সাকিব শাওন »
১৬ মার্চ। বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের হৃদয়
থেকে এই তারিখটা মুছে যাওয়ার কথা নয়। এই দিনেই বাংলাদেশর ক্রিকেট তার ইতিহাসের এক বড় শোকের মুখোমুখি হয়েছিল। জাতীয় দলের ক্রিকেটার, জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য এক অংশ, মাশরাফিদের প্রাণপ্রিয় বন্ধু মানজারুল ইসলাম রানা এক সড়ক দুর্ঘটনায় পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ২০০৭ সালে।
রানার মৃত্যুবার্ষিকীর আশেপাশে কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ থাকলে সেটাকে এভাবেই চিহ্নিত করতে পছন্দ করে বাংলাদেশ। আর একটা বিস্ময়কর তথ্য হলো সেই ২০০৭ সাল থেকে এই ব্যাখাতীত ঘটনার শুরু। সে’বারের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ছিল ১৭ মার্চ। ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচ নিয়ে তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে বাংলাদেশ; সব জায়গায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঠিক সেই সময় খুলনা থেকে আসা বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম শোকাবহ সংবাদে কেঁপে উঠল বিশ্ব-বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার মানজারুল ইসলাম রানা আর নেই। আরেক ক্রিকেটার সাজ্জাদুল হাসান সেতুর সঙ্গে একই মোটর সাইকেলের দুর্ঘটনায় ক্রিকেটের এই চেনা দুনিয়া ছেড়ে চলে যান রানা।
রানা শুধু জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার ছিলেন, এটা বললে কিছু বোঝা যাবে না। তার ৬ টেষ্ট ও ২৫ ওয়ানডের পরিসংখ্যান দিয়েও কিছু বোঝা যাবে না তার সম্পর্কে। রানা ছিলেন আসলে তখনকার জাতীয় দলটার প্রাণ। ৬ টেষ্টে ২৫৭ রান ও ৫ উইকেট এবং ২৫ ওয়ানডেতে ৩৩১ রান ও ২৩ উইকেট নেওয়া রানা অনায়াসে সেই বিশ্বকাপের দলেও থাকতে পারতেন। সেটা হয়নি হয়ত নানা কারণে। কিন্তু মাশরাফিরা যখন শুনলেন দেশে রেখে আসা সেই বন্ধুই মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় তাদের ছেড়ে চলে গেছেন, আরেক অর্থেই তাদের দুনিয়া টলে উঠেছিল। তারপর তো ইতিহাস। সেই ভারতকে বন্ধু রানার জন্য ঠিকই ‘ধরে দিয়েছিলেন’ মাশরাফিরা। বিষ্ময়করভাবে এরপর প্রায় প্রতিবছরই রানার মৃত্যুর এই দিনটার আশেপাশে বাংলাদেশ কোনো দলের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে এবং জিতেছে। আর প্রায় প্রতিবারই আবার সেই ম্যাচের নায়ক হয়েছেন কোনো না কোনোভাবে রানার ভাইতুল্য সেই বন্ধু মাশরাফি।
রানার প্রথম মৃত্যুবাষিকীর দুদিন পর ১৮ মার্চ’২০০৮ এই ঢাকায় বাংলাদেশ হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ডকে; মাশরাফি ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছিলেন। ২০০৯ ও ২০১০ সালে মার্চ মাসে বাংলাদেশের কোন খেলা ছিল না। ২০১১ সালের ১১ মার্চ ইংল্যান্ড ও ১৪ মার্চ নেদারল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। আর ২০১২ সালে ঠিক রানার মৃত্যু দিবসের দিন, এই ১৬ মার্চ ঢাকায় ছিল এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ। আবার ম্যাচের আগের রাতে মাশরাফি সতীর্থদের বলেছিলেন, চল, রানার জন্য খেলি।’ সেবার ফলটা নিশ্চয়ই মনে আছে! এর বাইরে ২০১৪ সালে রানার মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ হারিয়েছিল আফগানিস্তানকে।
রানা-মাশরাফি-রাসেলরা মুখের চেয়ে হাতে বেশি
কথা বলতে। কী যে মারামারি করত! দেখা হলেই একজন আরেকজনের সঙ্গে এক পশলা মারপিট করত। হঠাৎ দেখলে ভয় হতো, কেউ ব্যথা না পায়। আর ছিল মোটর সাইকেলের পাগলামি।
এরা সবাই একসঙ্গে মোটর সাইকেল প্রায় ছেড়েই দিল। ঐ ২০০৭ সালের ঘটনার পর থেকে মাশরাফিরা আর মোটর সাইকেল দাবড়ে বেড়ায় না। কেউ কেউ প্রয়োজনে চালায়,সেই পাগলামিটা আর নেই। মাশরাফিদের জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে গেছে ২০০৭ সালের ১৬ মার্চ দিনটায়। পাগলামি, দুষ্টুমি, মারামারি — অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। শুধু একটা ব্যাপার হারায়নি – রানার জন্য লড়াই করার জেদটা হারায়নি। এখনো রয়ে গেছে।
অসময়ে চলে যাওয়া রানার ৩৬তম জন্মদিন আজ। শুভ জন্মদিন রানা।