অবহেলিত নান্নু ঝলকেই এসেছিলো বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয়

সুফিয়ান আল হাসান »

১৯৯৯ বিশ্বকাপ, অচেনা পরিবেশ, প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ড এর বিপক্ষে ম্যাচে চরম বিপর্যয়ের মুখে দলটি। ২৪ রানে চার উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা বাংলাদেশ দল। প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন পাইলট, অপি, আমিনুল আর আকরাম। তখন ক্রিজে থাকা ফারুক আহমেদকে সঙ্গ দিতে নামেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। রানের খাতায় মাত্র ২ রান যোগ হতেই ব্লেইন এর বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ফারুক আহমেদও। ক্রিজে আসেন নাইমুর রহমান দুর্জয়।

দুর্জয়কে সাথে নিয়ে লড়াই শুরু করে নান্নু। মনে জয়ের আশা ও বিশ্বাস নিয়ে লড়ে যান দুজন। নাইম-নান্নু গড়ে তুলেন ৬৯ রানের জুটি। দলীয় ৯৫ রানে ৩৬ রান করে ফিরে যান দুর্জয়, অন্য প্রান্ত থেকে শুধুই দেখে গেলেন নান্নু। সুজন আসলেন, এক রান যোগ হতে তিনিও চলে গেলেন। ৮ম উইকেটে এনামুল হক মনিকে সাথে নিয়ে আবারো প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সাবেক এই ক্রিকেটার।

১৩৩ রানের মাথায় মনি ফিরে গেলেও একপাশ আগলে খেলে যান নান্নু, মাঞ্জারুলকে সাথে নিয়ে ৫০ ওভার শেষে দলের সংগ্রহকে দাঁড় করান ১৮৫/৯ এ। নান্নু খেলেন ৬৮ রানের হার না মানা ইনিংস। ছিলেন অপরাজিত। ৬৮ রান খেলতে নান্নু মোকাবেলা করেছিলেন ১১৬ টি বল। কোন ছক্কা না থাকলেও মেরেছিলেন ৪ টি চার। দলের বিপর্যয় এর সময় খেলা এই ইনিংসটিকে নিজের সেরা ইনিংস বলেন বাংলাদেশের জার্সিতে ২৭ টি ওয়ানডে খেলা মিনহাজুল আবেদীন নান্নু।

ব্যাট হাতে দুর্দান্ত খেলা নান্নু সে ম্যাচে বল হাতে উইকেটও নিয়েছিলেন ১টি। সে ম্যাচের ম্যাচ সেরাও ছিলেন তিনি। শুধু এই ম্যাচে নয় পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নান্নু খেলেছিলেন ৫৩ রানের ইনিংস। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের এই প্রথম সৃজনশীল ব্যাটসম্যানকে দলে রাখা নিয়ে হয়েছিল অনেক জল ঘোলা, নির্বাচকরা এক প্রকার তাকে দলে নেওয়ার বিপক্ষেই ছিলো, শেষ পর্যন্ত মিডিয়ার চাপে দলে রাখা হয়েছিলো তাকে, আর সেই নান্নুই বাংলাদেশকে উপহার দিলো বিশ্বকাপে প্রথম জয়।

নান্নুকে বলা হয় বাংলাদেশের সব থেকে দুর্ভাগা ব্যাটসম্যান, দেশের প্রথম সৃজনশীল ব্যাটসম্যান হয়েও নানান সময় শিকার হয়েছে অনেক অবহেলার। বোর্ড কর্তাদের অবহেলায় ফর্মের তুঙ্গে থেকেও খেলা হয়নি দেশের অভিষেক টেস্ট, শুধু অভিষেক টেস্টই নয়, তার গায়ে জড়ানো হয়নি বাংলাদেশের সাদা জার্সি, খেলা হয়নি লাল বলের ক্রিকেট। তবে ২৭ ওয়ানডেতে ২ ফিফটিতে নান্নু করেছেন ৪৫৩ রান, সে সময়ের হিসেবে খারাপ বলা যায় না। নির্বাচক আর বোর্ড কর্তাদের অবহেলার শিকার না হলে নান্নুর ক্যারিয়ার হয়তো আরো বড় হতে পারতো, হতে পারতো আরো উজ্জল। সেসব খারাপ সময়কে পিছনে ফেলে নান্নু এখন নিজেই বাংলাদেশ দলের নির্বাচক, প্রধান নির্বাচক। একসময়ের অবহেলিত হীরা এখন নিজেই জহুরি!

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »