নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
বিপদ যখন আসে পুরো পরিবার একসাথে নিয়ে আসে। বাংলার ক্রিকেটের সময়টা ছিলো বড্ড খারাপ। এতটাই খারাপ যে ভাগ্যদেবীও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বারবার। বিলেত থেকেই আমাদের ক্রিকেট আকাশে দেখা দিয়েছিলো কালো মেঘের এক বিশাল আস্তরণ। হতাশা নিয়ে বিশ্বকাপ থেকে ফিরে এসে শ্রীলঙ্কা সফর। সেখানেও ঝড়ের কবলে বাংলাদেশ। দিন কয়েক বাদে ঘরের মাঠ চট্টগ্রামে আফগানদের বিপক্ষে লাল বলের ক্রিকেটে লজ্জাজনক পরাজয়, সব মিলিয়ে দিশেহারা বাংলার ক্রিকেট।
চট্টগ্রাম টেস্টে ভাগ্যদেবী মুখ তুলে তাকিয়েছিলেন একবার। রাশিদ ভেলকি থেকে মুক্তির রাস্তাও খুব সুন্দর করে এঁকে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা হলাম ব্যর্থ। এতেই যেন ভাগ্যদেবী আরো রেগে বসলেন। একটা ভয় ছিল মনে। ঘরের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফিটাও কি দস্যুর মত ছিনিয়ে নিবে আফগানরা? বাংলার টাইগাররা এই লড়াইয়ে জিততে পারবে?
সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বড় লড়াইয়ের আগে নিজেদের প্রস্তুত করে নিয়েছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু পরের ম্যাচেই আবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে শোচনীয় পরাজয় সবকিছু উলটপালট করে দেয়। রাশিদ-নবীরা যেন কোন বর নিয়ে এসেছিলো। আর এই বরেই বারবার হেসেখেলে টাইগারবধ করছে তারা।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে দাপুটে জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে টিম টাইগার্স। আর তখনই যেন একটু একটু বাংলার ক্রিকেট আকাশে রোদের আগমন ঘটতে শুরু করে। বিলেতের মেঘগুলো ফিরতে শুরু করে নিজেদের স্থায়ী ঠিকানায়। পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের সাথে বড় পরাজয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় রাশিদ খানের দল। নিয়মরক্ষায় ম্যাচেও বাংলাদেশকে চেপে ধরার চেষ্টা রাশিদ-নবীদের। কিন্তু এবার আর সহজে হালছাড়া যাবে না। অধিনায়ক সাকিবের দৃঢ়তায় টানা চার ম্যাচ পর ক্রিকেটের সবচেয়ে ক্ষুদ্র সংস্করণে আফগান বধ হয় লাকি গ্রাউন্ড খ্যাত চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। বাংলার ক্রিকেট আকাশে অনেকদিন পর দেখা মিলে সূর্যি মামার। বিলেতের মেঘগুলো হারিয়ে যেতে থাকে একটু একটু করে।
ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণে আফগানরা আমাদের থেকে এগিয়ে,বাস্তবতা এটাই। তবে পরাক্রমশালী হয়ে ওঠা আফগানদের বিপক্ষে জয় পাওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না জানালেন হেড কোচ ডোমিঙ্গো। কেনই বা বিস্ময়কর হবে? রাশিদ-নবীদের কাছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যখন একটি স্বপ্ন আমরা তখন বড় বড় দলগুলোর বিপক্ষে টক্কর দিয়েছি।
বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছে দুদলকে। নিজেদের সামর্থ্যে প্রবল আস্থা থাকলেও ফাইনালে রাশিদ-নবীদের থেকে কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিলো বাংলাদেশ। সাকিবের হাসানের দল যেন পুরনো রাস্তা খুঁজে পেয়েছিলো এতদিন পরে। তবে মাঠের ক্রিকেটে কেমন ফলাফল হতো সেটা বলার ক্ষমতা আমাদের নেই।
কয়েক বছর ধরে যে টিম টাইগার্সকে আমরা দেখে আসছি সেই পারফর্মটাই যেন এখন করতে পারছে না। দলের মূল ভরসা যারা তাদের ব্যাটেই নেই রান। অভাব ধারাবাহিকতার। ব্যাটিং, বল আর ফিল্ডিং তিন বিভাগেই যে উজ্জীবিত বাংলাদেশ সেই বাংলাদেশই যেন হুট করে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলো ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে। তবে শেষ দুই ম্যাচে আবারো নিজেদের ফিরে পাওয়ার যে প্রেরণা ছিল দলের মধ্যে সেটা অবশই প্রশংসার দাবি রাখে। আফগানদের সাথে সিরিজ ভাগাভাগি করে নিলেও হয়তো এই সিরিজের মধ্যে দিয়ে অবসান হয়েছে সেই কালো মেঘের। যাবার বেলায় মেঘেরা যেমন মিরপুরের ফাইনাল ভাসিয়ে নিয়ে গেল ঠিক তেমনি দেশের ক্রিকেট নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা করার বার্তা দিয়ে গেল।