শুভ জন্মদিন ক্রিকেটের বরপুত্র!

সাকিব শাওন »

যে বয়সে মা-বাবা তাদের ছেলেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিজ হাতে স্কুলে নিয়ে যায়, ঠিক সেই বয়সেই ছেলেটা কি না ভর্তি হলো ক্রিকেট শেখার স্কুলে। এগারো ভাই-বোনের মধ্যে সে ছিল দশম, সবার পছন্দের এবং আদরের ‘প্রিন্সি’। বাবা আর বড় বোনের কল্যাণে মাত্র ছয় বছর বয়সেই ভর্তি হলেন স্থানীয় হার্ভার্ড কোচিং ক্লিনিক নামে এক ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সেখান থেকেই ক্রিকেট জীবনের শুরু, আর শেষ হয়েছে সেই ক্রিকেট ব্যাট হাতে ক্রিকেটের বরপুত্রের খেতাব নিয়ে. ছোটবেলায় খুবই পারদর্শী ছিলেন টেবিল টেনিসে। কিন্তু তিনি যে ঐই ছোট টেবিলে নয় রাজত্ব করবেন বাইশ গজে মাঠ মাতাবেন চার ছয়ে, তাই তো তার জীবনের সবটুকু জুড়েই ছিল শুধু ক্রিকেট।

উপরের এতো সব কথা বলছিলাম ১৯৬৯ সালের ২রা মে জন্ম নেওয়া ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ত্রিনিদাদের স্যান্টা ক্রুজ শহরের ছোট্ট প্রদেশ কান্তারো থেকে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্রিকেটের বরপুত্র হয়ে উঠা ব্রায়ান চার্লস লারার কথা।

তার ক্রিকেটের নায়ক হয়ে ওঠার সত্যিকারের গল্প শুরু হয়েছিল কলেজ জীবনে ভর্তির হওয়ার মাধ্যমে। বয়স তখন মাত্র চৌদ্দ। সেখান থেকেই কোচ হ্যারি রামদাসের সাথে কাজ করার মাধ্যমে লারার প্রথম নায়ক হয়ে ওঠা শুরু হয়। ইন্টার স্কুল ক্রিকেট কম্পিটিশন টুর্নামেন্টে ১২৬ গড়ে ৭২৪ রান করে জায়গা করে নেন ত্রিনিদাদের অনূর্ধ্ব-১৬ দলে। এক বছর পর লারার বয়স যখন হয় পনেরো, তিনি হঠাৎ করে ডাক পান ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে।

সেবার ১৯৮৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে ৪৯৮ রানের ইনিংসের মাধ্যমে কার্ল হুপারের ৪৮০ রানের রেকর্ড ভাঙেন লারা। পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে লারার অভিষেক, প্রতিপক্ষ ছিল লিওয়ার্ড আইল্যান্ড। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বার্বাডোসের বিপক্ষে প্রায়৩০০ মিনিট ক্রিজে থেকে দেখালেন ৯২ রানের এক ম্যারাথন ইনিংস। প্রতিপক্ষের বোলিং লাইন আপে ছিলেন সেসময়কার গতিময় বোলার, দুই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ম্যালকম মার্শাল আর জোয়েল গার্নার। তার ঐই পারফরমেন্সের পরের বছরই ভারত অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষে খেলেন ১৮২ রানের আরেকটি কার্যকারী ইনিংস। সেবার ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের অধিনায়ক। নিজের এই ধারাবাহিকতার কারণে প্রথমবারের মতো ডাক পান ওয়েস্ট ইন্ডিজের জাতীয় দলে। এর পরের গল্পের সবকিছু ত জানা জাতীয় দলে জায়গা পেয়ে হয়েছেন নায়ক থেকে মহানায়ক। দিনের পর দিন নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্যান্য উচ্চতায়। তখনকার সময়ে একা লড়েছেন দলের হয়ে শিরোপা জিততে পারেন নি জেতাতে বড় কোন শিরোপা। কিছু তারকার যে নামের পাশে পালক লাগে না তারা এমনিতেই সেরা। ব্রায়ান লারা তাদেরই একজন নামের পাশে নেই কোন বড় টুর্নামেন্ট জয়ের কাপ তবুও তিনি নায়ক। নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪৩০ ম্যাচে ২২,৩৫৮ রান করেছেন। ১১১টি অর্ধশতকের সাথে করেছেন ৫৩টি শতক। ৯টি ডাবল সেঞ্চুরি এবং ২টি ত্রিপল সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ার সেরা ৪০০*।

আজ এই ক্রিকেটের বরপুত্রের ৫১তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন ব্রায়ান লারা।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »