নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
শত বাধা পেরিয়ে মাঠে আসেন আফগান নারী ক্রিকেটাররা। আফগান ক্রিকেটার রয়া শামিম যখন প্রথম খেলা শুরু করেন, কখনো কল্পনাও করেননি যে তিনি একদিন খেলবেন দেশের জার্সি গায়ে। আসলে তাঁর প্রতিভায় ঘাটতি ছিল, ব্যাপারটা এমন না। ওই সময় কোনো মেয়েদের ক্রিকেট দলই যে ছিল না আফগানিস্তানে।
তালেবানদের ক্ষমতা হারানোর পর যখন আফগানিস্তানের ছেলেদের ক্রিকেট দল বিশ্বের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে বিস্ময়করভাবে সাফল্য পাচ্ছিল, তাদের মেয়েদের ক্রিকেট দলটা একটু হলেও পিছিয়ে পড়ছিল। ২০১০ সালে আফগানিস্তানে প্রথম নারী ক্রিকেট দল গড়া হয়। কিন্তু ভয় আর নিরাপত্তার খাতিরে মেয়েরা সেভাবে খেলতে পারছিলেন না। ছেলেদের সাফল্যের পর এখন আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) নতুন করে মেয়েদের দল গড়েছে। সম্প্রতি ক্রিকেট বোর্ড ২৫ জন খেলোয়াড়কে চুক্তিবদ্ধও করেছে। কাবুল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ট্রায়াল দেওয়া সেই ক্রিকেটারদেরই একজন শামিম। সমাজের সব বাধা পেরিয়ে খেলতে পেরে উচ্ছ্বসিত শামিম, বলেন: ‘যখন আমি খেলা শুরু করি, জানতাম না যে আদৌ জাতীয় দলে খেলতে পারব কি না। কারণ, মানুষ সব সময় আমাকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলত। আমাকে খেলতে নিরুৎসাহিত করত এবং এমন কিছু কথা বলত, যাতে মন ভেঙে যেত। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি।’
কয়েক মাস পরই একজন বিদেশি কোচের অধীনে মেয়েদের অনুশীলন শুরু হবে। শামিমেরও স্বপ্নের সীমানা বাড়ছে। স্বপ্ন দেখছেন প্রিয় ক্রিকেটার ভারতের স্মৃতি মানধানা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক স্টেফানি টেইলরের মতো খেলবেন। কিন্তু আফগানিস্তানে এখনো মেয়েদের ক্রিকেট খেলাটা যুদ্ধ জয়ের চেয়ে কঠিন। কারও বোন বা মেয়ে জনসমক্ষে ক্রিকেট খেলবে, সেটা যেন কল্পনায়ও আনতে পারে না কেউ। এমনকি আফগান ক্রিকেট বোর্ডে অনেকেই মেয়েদের ক্রিকেট খেলাটা পছন্দ করেন না।
এখানে নিরাপত্তা একটা বড় বিষয়। আগামী বছর মে মাসে আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সৈন্য চলে যাবে। কিন্তু তালেবানদের হুমকিটা উড়িয়ে দিতে পারছে না অনেকে। কারণ, তালেবানরা এমনকি মেয়েদের শিক্ষিত হওয়ারই বিরোধী। এখনো সে দেশের অনেক এলাকা তালেবানের নিয়ন্ত্রণে আছে এবং অনেক শিক্ষিত নারীদের ওপর আক্রমণ করছে তালেবানরা। যদিও সরাসরি ক্রিকেটারদের ওপর কোনো হুমকি আসেনি। কিন্তু গত মাসে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী আক্রমণের পর এসিবির কর্মকর্তারা এসব নিয়ে একটু ভয়েই আছেন। গত মাসে দল ঘোষণার পর এসিবি বলছে, ঐতিহ্যবাহী আফগান ও ইসলামির মূল্যবোধ মাথায় রেখেই অনুশীলন ক্যাম্প করা হবে।
সমাজের সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে রশিদ–নবীদের মতো খেলতে চান নারী ক্রিকেটাররা।
মেয়েদের দল গড়ার ব্যাপারে বোর্ডের বিরোধিতা সম্পর্কে সচেতন এসিবির চেয়ারম্যান ফারহান ইউসুফজাই। পাকিস্তান, কুয়েত, ওমানের মতো দেশে মেয়েদের ক্রিকেট দল রয়েছে। তাই তিনি এসব নিয়ে মোটেও হতাশ নন, ‘অনেক মুসলমান দেশেই তো মেয়েদের ক্রিকেট দল রয়েছে। আফগানিস্তানে মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দল, ভলিবল দল, সাঁতার দল রয়েছে। তাহলে কেন ক্রিকেট থাকবে না!’ এই মেয়েদের প্রতিভারও তিনি প্রশংসা করেন।
অনেক মেয়ে খেলতে উৎসাহ পাচ্ছেন। শামিমের সতীর্থ জাতীয় দলের অলরাউন্ডার নাহিদা সাপান্দ বলছিলেন, তাঁর মা–বাবার সমর্থন থাকা সত্ত্বেও এই পর্যায়ে আসতে তাঁকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি, ‘নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতায় আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এমনকি আমি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়েও বাধার মুখে পড়েছি। কিন্তু কখনো আমার উৎসাহে ভাটা পড়েনি।’
দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো অনুশীলনের অপেক্ষায় আফগান নারী ক্রিকেটাররা। তাঁদের একটাই লক্ষ্য, আগামী বছর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা। তাঁদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আফগান তারকা ক্রিকেটার রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী, মুজিব উর রেহমানরা। ২০১৫ সালে আফগানিস্তানের বিশ্বকাপে অভিষেক হয়েছে। এখন তো পূর্ণ সদস্যই হয়ে গেছে দেশটি। আর এতেই তারা মেয়েদের ক্রিকেট দল গড়তে উৎসাহ পায়। এত ভয়, হুমকির পরও এসিবির চেয়ারম্যান ইউসুফজাই আশাবাদী, ‘আমি আমার ক্রিকেট বোর্ডের মেয়েদের দলের সব খেলোয়াড় ও সদস্যদের আমার বোনের মতোই দেখি। তাদের এতটাই শ্রদ্ধা করি।’
নিউজক্রিকেট / শাহীন