জাকির মামুন »
ক্রিকেট নিয়ে কত আবেগ, ভালোবাসা ই না জড়িয়ে আছে বহু যুবকের মাঝে৷ ক্রিকেটেই ধ্যান-জ্ঞান, ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখে তেমনি একজন অদম্য ক্রিকেটপ্রেমি তানিন৷ ছোটবেলায় পাড়ার বড় ভাইদের সাথে এদিক ওদিক দাপিয়ে বেড়াতেন আর খেলাধুলায় মগ্ন থাকতেন৷
ক্রিকেটের প্রতি এত টান ভালোবাসা যে স্কুল কামাই করে ম্যাচ খেলতে যেতেন৷ মেধাবি ছাত্র হওয়ায় শিক্ষকদের আশা ছিলো ছেলেটি ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার কিংবা বড় সরকারি চাকুরিজীবি হবে৷ শিক্ষকরা অফিসসহকারী পাঠিয়ে ও মাঠ থেকে স্কুলে নিতে পারেন নাই৷
বাবা মা বুঝালেও মননে সৃজনে যে তার শুধুই ক্রিকেট তা তাদেরকে বুঝাতে সমর্থ হন নাই৷তাই প্রতিদিনই ব্যাট বল নিয়ে বের হয়ে পড়তেন৷ ক্রিকেটের চর্চাটা অভ্যাসে পরিণত হলো৷ এলাকার বড় ভাই আলম, মামা রোমানের অনুপ্রেরণায় ক্রিকেট টা তার অন্তরে গেঁথে গেছে আরও বেশি৷ শিপুর নেতৃত্বে সুজন(চাচা), দিদু(স্যার),ফরহাদ, জুয়েল,আরকান,ফয়সাল, রেহানদের সাথে খেলতেন৷ বন্ধু মাহমুদুল হাসান রেহান ছিলো সবসময়ের শুভাকাঙ্খী৷ আলম সবসময় বলতেন , তানিন তুই বুমবুম আফ্রিদির মত৷ সিঙেলের চেয়ে ছয় মারিস বেশি৷ তুই একজন দেশসেরা অলরাউন্ডার হবি৷
দ্রুত গতিতে বল আর ব্যাট হাতে তানিন ছিলো দুর্দান্ত৷ তাই এলাকার বাইরেও ছোট তানিন কে খেলতে নিয়ে যেতো সবাই৷ ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আশরাফুলের কাব্যিক ইনিংসে পরাজিত হয় স্বাগতিক রা৷ তা দেখে তানিন নিজের মাঝে স্বপ্ন বাঁধেন একজন ক্রিকেটার হবেন৷ দেশের পতাকা নিয়ে বিশ্বে চষে বেড়াবেন৷ ২০০৭ সালে বিশ্বকাপে মাশরাফির অসাধারণ পারফরমেন্সে লন্ডভন্ড হয় হয়ে বাংলাদেশের নিকট পরাজিত হয় শক্তিশালী ভারত৷ ক্ষীপ্রগতিতে বল করা মাশরাফিকে দেখে স্বপ্নটা আরও রঙিন হতে শুরু করলো৷ মাশরাফিকে আদর্শ মেনে নিজের নামটাই পরিবর্তন করে রাখলেন তানিন মোর্ত্তজা!
আসল নাম মোঃ শাহরিয়ার তানিন ডালি৷ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের মাইজবাড়ি কুকসাইর গ্রামে এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম তানিনের৷বাবা সাহাবুদ্দিন ডালি বেসরকারি চাকুরি করতেন আর মা লাভলী আক্তার ডালি ও চাকুরি করতেন৷ দুই ভাইয়ের মাঝে তানিনই বড় ৷ মায়ের স্বপ্ন ছিলো তানিন বড় চাকুরি করবে কিন্তু সে চেয়েছিলো ক্রিকেটার হতে৷
২০১১ সালে এসএসসি ও ২০১৪ সালে এইচএসসি পাশ করে তানিন৷ খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশুনাও ছিলো অনেক ভালো৷ বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত তানিন৷
তানিনের স্বপ্নটা অবশেষে বাবা বুঝতে পারলেন৷ তিনি ও তার পাশে দাঁড়ালেন৷ তানিন গুলশান ইয়ুথ ক্লাব, ধানমন্ডি আবাহনী ডিসকভারি ক্লাব ও উত্তরা ফ্রেন্ডসক্লাবে অনুশীলন করেন৷ কিন্তু মাঝপথে আসলো বিপত্তি৷ তানিনের জীবনে নেমে আসলো এক কালো অধ্যায়৷ ২০১৪ সালে বাবা অনেক অসুস্থ হয়ে গেলেন৷ বার্ধক্য আর অসুস্থ বাবার একমাত্র আশার প্রদীপ তানিন৷ তাই ব্যাট-বল নিয়ে থাকা তানিন থাকতে হতো বাবার সাথে৷ তাকে দেখাশুনা করতে হতো৷ দিন দিন স্বপ্নটা ফিকে হতো লাগলো৷
পরিস্থিতির কাজে যে তানিন বড় অসহায়৷ একটি বেসরকারি এনজিও’র ব্যাংকিং শাখায় চাকুরি হয় তানিনের ৷ বেশিদিন করতে পারেন নি৷ কর্মক্ষেত্রে যে মন বসাতেই পারেন না৷ ক্রিকেটের প্রতি এত ভালোবাসা দেখে অবাক হন বিসিবিতে কর্মরত তার এলাকার মামা মোহাম্মদ নাসির ৷ নাসিরের সহায়তায় ২০১৭ সালে বিসিবিতে(ব্রডকাস্টিংবিভাগ) চাকুরির ব্যবস্থা হয় তানিনের৷পরবর্তীতে বিসিবিতে কর্মরত হাবিবুল্লাহ্ লিটনের সহায়তায় বিসিবির মিডিয়া বিভাগে স্থানান্তরিত হয় তানিন৷ বিসিবিতে চাকুরি করার মুল কারণ ছিলো মাশরাফিদের কাছ থেকে দেখতে পারবে সে৷ জাতীয় দলের খেলা ছাড়াও ঘরোয়া লীগের মাশরাফির কোনো খেলাই মিস করতেন না তানিন মোর্ত্তজা৷ এবারের বিপিএলে সিলেট থান্ডার্স এর হয়ে নেট বোলার হিসেবে ও বল করেছেন তানিন৷
চাকুরীর পাশাপাশি ‘Bangladesh Tigers Supporter Association(BTSA)’ এর সাথে সংযুক্ত থেকে মাঠে বসে বাংলাদেশ দলকে সবসময় সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন৷
শ্রীলংকায় ম্যাশের টি-টোয়েন্টি অবসর তানিনকে অনেক কষ্ট দেয়৷ সর্বশেষ কষ্টটা পেয়েছেন কিছুদিন আগে ম্যাশ অধিনায়কত্ব থেকে নাম প্রত্যাহার করায়৷ নিরবে নিঃস্তব্দে চোখ ভাসিয়েছেন৷ যে ম্যাশকে দেখে নিজের নাম পরিবর্তন করলেন সে তানিন ম্যাশকে না দেখে থাকবেন কিভাবে!
তানিনের ক্রিকেটের প্রতি অকৃত্তিম ভালোবাসা ও বাংলাদেশের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন হাজারও তরুণকে অনুপ্রাণিত করবে৷
তানিনদের ভালোবাসা আর সমর্থন আছে বলেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বদরবারে অধিক জনপ্রিয়৷