দুর্জয় দাশ গুপ্ত »
তাকে বলা হতো বাংলাদেশ ক্রিকেটের আশার ফুল। যদি ফিক্সিংয়ে না জড়াতেন আর ৫ বছরের লম্বা সময়ের নিষেধাজ্ঞায় না পড়তেন তবে আজ আশরাফুল কোথায় থাকতেন?
অনেকেই মনে করেন সামর্থ্য আর প্রজ্ঞার মত শতভাগ সৎ থেকে পারফর্ম করলে মোহাম্মদ আশরাফুল কেবল বাংলাদেশ ক্রিকেটের নয় বরং বিশ্ব ক্রিকেটের এক বড় তারা হয়ে জ্বলতেন। কিন্তু দেশের ক্রিকেটের আশার ফুল কোথায় ছিলেন আর আজ কোথায় আছেন এই সমীকরণটা ছুঁড়ে দেয় আরো অনেক প্রশ্ন।
তিনটা ফরম্যাটেই খেলার যে সামর্থ্য আশরাফুলের ছিলো সেটা থেকে বলাই যেতে পারে হয়তো দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ডটাও আশরাফুলের দখলে থাকতো। কিন্তু পাতানো খেলায় জড়িয়ে আশার ফুলটা ঝড়ে গিয়েছে। যদিওবা আশরাফুলের দাবি এখনো দেওয়ার মত অনেক কিছু আছে।
কার্ডিফের সেই ঐতিহাসিক অস্ট্রেলিয়া বধ কিংবা ২০০৭ বিশ্বকাপে তারকাসমৃদ্ধ আফ্রিকা বধের নায়ক ছিলেন আশরাফুল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ২৭ বলে ৬১ রানের আগুন ঝড়ানো ইনিংসে বাংলাদেশের জয়। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডটা মুশফিকুর রহিমের দখলে। কিন্তু সুযোগ ছিলো আশরাফুলেরও। ঐ একই টেস্টে মুশফিকের সাথে দারুণ এক পার্টনারশিপ গড়ে ১৯০ রানের রাজকীয় ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
এ সবই আজ স্মৃতি। কোয়ারেন্টাইনের এই অবসর সময়ে স্মৃতিগুলো আবারো ফিরে দেখা গেল। কথা হল দেশের ক্রিকেটের আশার ফুলের সাথে। কথা বলেছেন নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের প্রতিবেদক দুর্জয় দাশ গুপ্ত।
নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ কি করছেন কোয়ারেন্টাইনে?
মোঃ আশরাফুলঃ কোয়ারেন্টাইন ভালোই কাটছে। নামাজ পড়তেছি, লুডু খেলতেছি। বিকেলে ক্রিকেট খেলি ছাদে। চলে যাচ্ছে আরকি।
নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ ফিটনেস ধরে রাখতে কি করছেন এখন?
মোঃ আশরাফুলঃ এইতো বিকেল বেলা ক্রিকেট খেলি। এশার নামাজের পরে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা ক্যারাম বোর্ড খেলি, দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এটায় ফিটনেসের কাজ হচ্ছে। আর খাওয়ার দিকটায় নজর রাখছি। একবেলা যদি খাওয়া হয় তবে পরের বেলায় খাই না।
নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ আপনাকে বলা হত বাংলাদেশ ক্রিকেটের আশার ফুল। অথচ আজ আপনি দলেই সুযোগ পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারটা আপনার নিজের কাছে কেমন লাগছে?
মোঃ আশরাফুলঃ যখন আমাকে আশার ফুল বলা হতো তখন তো আমি খেলেছি। পরে একটা দূর্ঘটনা ঘটেছে। তবুও আমার ক্যারিয়ার প্রায় ১৩ বছরের। অনেকের তো এত লম্বা ক্যারিয়ার হয়না। তবুও নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এখন যে খেলতেছি আবার এটাই ভালো লাগছে। এখনো সেরাটা দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদি সুযোগ আসে তবে আবার খেলবো। যতটুকু পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে আপনার। দেশের কেউ কি আপনার এই রেকর্ডটা ভাঙতে পারবে? কি মনে হয়?
মোঃ আশরাফুলঃ যদি এই রেকর্ড কেউ ভাঙে তবে আমাদের এশিয়ার কোন ক্রিকেটারই ভাঙবে। কারণ এশিয়াতেই আমি দেখেছি এত কম বয়সে কেউ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুযোগ পায়। আমি মনে করি এই রেকর্ড ভাঙলে ভারত, পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কার কেউই ভাঙবে।
নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ অসহায় মানুষদের জন্য নিজের ব্যাট নিলামে তুলছেন। এমন ভাবনাটা আসলো কিভাবে?
মোঃ আশরাফুলঃ ইচ্ছা ছিলো বুড়ো বয়সে নিলামে দিবো (হেসেহেসে)। কিন্তু এই সময়টাতে আমি মনে করি যদি কোনভাবে এগিয়ে আসা যায় আরকি। তবে সাকিব আর মুশফিকের নিলামটা দেখবো। তারপর যদি মনে হয় যে ভালোই হচ্ছে তাহলে আমার ব্যাটও দিবো।
নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক ছিলেন আপনি। ঐ সেঞ্চুরিটাকে আপনি নিজে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মোঃ আশরাফুলঃ অবশ্যই অসাধারণ একটা ইনিংস ছিলো। ঐ সময়ে অস্ট্রেলিয়ার মত দলকে হারানো বিশাল ব্যাপার। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি তখন। ঐ জয়টাকে এখনো বলা হয় বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ‘আপসেট’। অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশ মাত্র একটা ম্যাচেই হারিয়েছে আর সে ম্যাচে আমি সেঞ্চুরি করেছি এটা অবশ্যই ভালো লাগার ব্যাপার।
নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ বাংলাদেশের অনেক জয়ের পেছনে রয়েছে আপনার অবদান। কিন্তু ক্রিকেটে ফেরার পরে আর দলে সুযোগ মেলেনি। এর কারণ কি হতে পারে?
মোঃ আশরাফুলঃ একটা নিষেধাজ্ঞার কারণে আমি ভালোভাবে ফিটনেস নিয়ে কাজ করিনি। পারফরম্যান্স প্রথম দিকটায় ভালো হয়নি। তবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খুব ভালো পারফর্ম করেছিলাম। ৫ টা সেঞ্চুরি করেছি। আবার ফিরতে পারতেছি না কারণ আমার ফিটনেসটা ভালো ছিলো না এখনের মত। এখন ফিটনেস ঠিকঠাক এবার যদি পারফর্ম করত পারি তবে সুযোগ আসতে পারে।
নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ বর্তমান বাংলাদেশ দলটাকে কীভাবে দেখছেন?
মোঃ আশরাফুলঃ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ খুব একটা ভালো করতে পারছে না। ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিলো দেখার মত। অসাধারণ খেলেছে। যারা সিনিয়র আছে তারা সবাই বেশ কিছু বছর ধরে নিয়মিত ভালো খেলে যাচ্ছে আর এজন্যই বাংলাদেশ দলটা ভালো করছে।
নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ অধিনায়ক মাশরাফির বিদায়টা কি সঠিক সময়েই হয়েছে?
মোঃ আশরাফুলঃ সব দিক যদি চিন্তা করি তবে আমি বলবো সঠিক সময়েই হয়েছে। কারণ মাশরাফি একজন সংসদ সদস্য এখন। একসাথে সমানভাবে সবকিছু চালিয়ে নেওয়াটাও মাশরাফির জন্য কঠিন ব্যাপার। আমার দৃষ্টিতে যদি সংসদ সদস্য না থাকতো তবে হয়তোবা আরো কিছুদিন অধিনায়ক মাশরাফির সার্ভিস পাওয়া যেতো।
নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ বয়স ৩৫ পেরিয়ে ৩৬ ছুঁইছুঁই। এই বয়সে জাতীয় দলে ফেরাটা কতটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার জানেন নিশ্চয়ই। তবুও স্বপ্ন দেখেন?
মোঃ আশরাফুলঃ আমাদের দেশে এমন কিছু এখনো হয়নি। কিন্তু অন্যান্য দেশগুলোতে হয়। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত এ ধরণের উদাহরণ নেই। মোশাররফ হোসেন রুবেল একটা সুযোগ পেয়েছিলো কিন্তু খুব বেশিদিন টিকতে পারেনি। আমি যেহেতু ব্যাটসম্যান তাই চেষ্টা করে যাই। যদি একটা সিজন অসাধারণ খেলতে পারি তবে অসম্ভব না। আর টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশকে আমার দেওয়ার মত আরো অনেক কিছু আছে।
নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ কোয়ারেন্টাইন থেকে মাঠে ফিরে নিজেদের মানিয়ে নেওয়াটা ক্রিকেটারদের কাছে কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে?
মোঃ আশরাফুলঃ আমার কাছে মনে হচ্ছে না খুব বেশি সমস্যা হবে। এখন কথা হচ্ছে আরো কত লম্বা সময় আমাদের মাঠের বাইরে থাকতে হবে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০-৪২ দিনের মত হয়েছে। আর এখন সিজনও প্রায় শেষ। বৃষ্টির সিজন চলে আসতেছে। আবার হয়তোবা সেপ্টেম্বরে শুরু হবে। যারা অভিজ্ঞ ক্রিকেটার তাদের জন্য কোন সমস্যা হবে বলে মনে হয়না।
নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
মোঃ আশরাফুলঃ আপনাকেও ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
