টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে মনোযোগ দেওয়ার বিকল্প নেইঃ শুভ

দুর্জয় দাশ গুপ্ত »

যদি ঘরোয়া ক্রিকেটের মত আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ব্যাটে-বলে পারফর্ম করতে পারতেন নিয়মিত তবে হয়তো আরো একটা সাকিব পেতো বাংলাদেশ। সাকিবের মতই বাঁহাতে ব্যাটিং আর বোলিং করেন। সাত-আট নম্বরে ব্যাটিংটাও বেশ কার্যকর। ২০১০ সালে অভিষেকের পর প্রায় এক টানা দেড় বছর ছিলেন জাতীয় দলে। এই সময়ে ১৭টি ওয়ানডে, ১টি টেস্ট ও ১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে তার। বলছিলাম সোহরাওয়ার্দী শুভ’র কথা। দারুণ সম্ভাবনাময় এই অলরাউন্ডার ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটে-বলে পারফর্ম করছেন। স্বপ্ন দেখছেন আবারো জাতীয় দলে ফেরার।

করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর কারণে পুরো বিশ্ব হয়েছে স্থবির। অচল হয়ে পড়েছে ক্রীড়াঙ্গন। মাঠের ক্রিকেটাররা এখন ঘরে বন্দী। কোয়ারেন্টাইনের এই সময়টাতে নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের প্রতিবেদক দুর্জয় দাশ গুপ্ত কথা বলেছেন ক্রিকেটার সোহরাওয়ার্দী শুভ’র সাথে।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ কোয়ারেন্টাইন কেমন কাটছে?

সোহরাওয়ার্দী শুভঃ আসলে খুব ভালো কাটছে এমনটা বলবো না, খুব একটা উপভোগ করছি এটাও না। খারাপ লাগছে খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে। যারা চাকরি করেন তাদের অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে গেছে। যারা ব্যবসা করেন তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বস্তরের মানুষই এখন কষ্টে আছে। আপনি নিজে একজন রিপোর্টার, আপনারও কষ্ট হচ্ছে। আসলে সবাই বিপদে পড়ে গেছে। প্রথম কয়েকটা দিন ভালো লেগেছে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কখন এটা শেষ হবে। আল্লাহ’র কাছে দোয়া করতেছি যেন শীঘ্রই করোনাভাইরাসের প্রভাব আমাদের দেশ থেকে চলে যায়।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ নিজেকে ফিট রাখতে কি করছেন?

সোহরাওয়ার্দী শুভঃ এখন তো রোজা শুরু হয়ে গেছে। কাজেই খাওয়াদাওয়া কম হবে। ঘরের মধ্যেই চেষ্টা করছি কিছু ব্যায়াম করার। বাসার সামনের যে জায়গা আছে সেটাকে ব্যবহার করছি।বাসার সিঁড়িতে রানিং করছি। ফিটনেসের উন্নতি করতে না পারলেও ফিটনেস ধরে রাখতে পারছি।

নিউজ ক্রিকেটঃ অনেকদিন হলো ক্রিকেটের বাইরে। ক্রিকেট মাঠে ফিরলে মানিয়ে নেওয়াটা কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে?

সোহরাওয়ার্দী শুভঃ অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হবে। কারণ আমরা বাসায় ব্যাটিং-বোলিং করতে পারছি না। বাসায় বসে কেবল ফিটনেস ধরে রাখতে কিছু কাজ করতে পারছি, এর বেশি কিছু না। আসলে পরিস্থিতির শিকার। সবারই সমস্যা হবে মানিয়ে নিতে। কেবল আমার যে হবে তা কিন্তু না। বাকি ক্রিকেটারদেরও একই সমস্যা হবে। তবে আমরা যেহেতু প্লেয়ার আমাদের অভিজ্ঞতা আছে খেলা সম্পর্কে। আমরা জানি আমাদের কি করা উচিত। মানিয়ে নিতে খুব বেশি সময় লাগবে তা কিন্তু না। হয়তোবা দুই একটা ম্যাচের পরেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

নিউজ ক্রিকেটঃ জাতীয় দলে ফেরার জন্য কোন বিশেষ পরিকল্পনা আছে?

সোহরাওয়ার্দী শুভঃ অবশ্যই আছে। প্রিমিয়ার লীগটাকে ভালো কিছু করার পরিকল্পনা ছিলো। জাতীয় লীগটা খুব ভালো কেটেছে। প্রিমিয়ার লীগটা যদি হতো আর ভালো খেলতে পারতাম তবে হয়তো নির্বাচকদের নজরে আসতাম। শুধু একটা টুর্নামেন্টে ভালো করলেই তো হয়না। ধারাবাহিকতা থাকতে হয়। আমারও এমনই লক্ষ্য ছিলো। ভালো একটা শুরু হয়েছিলো এই সিজনটাতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত প্রিমিয়ার লীগ বন্ধ হয়ে আছে।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ জাতীয় দল আর দলের বাইরে থাকা এই দুটো ব্যাপারের পার্থক্যটা আসলে কি?

সোহরাওয়ার্দী শুভঃ পার্থক্য সেরকম কিছুই না, আবার অনেক কিছুও। জাতীয় দলে থাকলে প্র্যাকটিসের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। যার জন্য নিজেকে ফিট রাখাটা খুব সহজ হয়। এছাড়াও জাতীয় দলে থাকলে আরো বিভিন্ন ধরণের সুবিধা পাওয়া যায়। আর দলের বাইরে থাকলে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন ইনডোর পাওয়া যায় না, ভালো উইকেট পাওয়া যায় না। যখন আমি এসব কিছু থেকে দূরে থাকবো তখন নিজের সেরাটা দেওয়া আমার জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ কত বছর বয়স পর্যন্ত ক্রিকেট খেলে যেতে চান?

সোহরাওয়ার্দী শুভঃ একটা ভালো জিনিস হলো এখন আমাদের ট্রেন্ডটা পরিবর্তন হয়েছে। আগে যেমন একটু সিনিয়র হলেই বাতিলের তালিকায় রাখা হতো এখন কিন্তু এমনটা নেই। কিন্তু এখন বিশ্ব ক্রিকেটে এই ট্রেন্ডটা নেই। শুরুটা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকা দিয়ে এখন এশিয়াতেও এমন কালচার শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের মিসবাহ, ইউনুস খান, আশীষ নেহেরা অনেক বেশি বয়স নিয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছে। ৪০ বা তার আশেপাশে বয়স যাদের তারাও খেলছে। এটা শুরু হয়েছে আজ থেকে ৮-১০ বছর আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে। এখন আমাদের দেশেও এটা এসেছে। বয়স তেমন কোন বড় ব্যাপার না যদি আপনার ফিটনেস বা পারফরম্যান্স ঠিক থাকে। তবে আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্যরকম। আমি একজন অলরাউন্ডার। স্পিন বল করে থাকি। এজন্য শরীরের উপর খুব বেশি প্রভাব পড়ে না পেসারদের মত।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত কোনটি?

সোহরাওয়ার্দী শুভঃ আমার দৃষ্টিতে ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত নিউজিল্যান্ডকে আমরা যে সিরিজটাতে হোয়াইটওয়াশ করি। প্রথম কোন বড় দলকে আমরা হোয়াইটওয়াশ করি ঐ সিরিজে যেটাকে ‘বাংলাওয়াশ’ নামকরণ করা হয়েছিলো। এটা আসলে কারো ভাবনাতেই ছিলো না তখনকার সময়ে নিউজিল্যান্ডের মত একটা দলকে আমরা হোয়াইটওয়াশ করতে পারবো।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ এ বছর তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভবনা কতটুকু দেখছেন?

সোহরাওয়ার্দী শুভঃ আল্লাহ’র রহমতে আমাদের দল খুবই ভালো করছে। আর বড় কথা হলো অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মত বড় দলগুলোও আমাদের সমীহ করে। আমি মনে করি আমাদের খুব ভালো সম্ভবনা আছে। যদি সাকিবও দলে ঢুকে যায় তাহলে দলটা আরো শক্তিশালী হবে।

নিউজ ক্রিকেটঃ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের উন্নতির জন্য কি করা উচিত?

সোহরাওয়ার্দী শুভঃ আমি মনে করি টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করতে হলে আপনাকে আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে মনোযোগ দিতে হবে। কেবল বড়গুলোর বিপক্ষে সিরিজ আয়োজন করলেই হবে না। উন্নতির জন্য একদম গোঁড়া থেকে উন্নতি করতে হবে। ক্রিকেটের এই লম্বা সংস্করণের জন্য যদি আপনি একটা ক্যালেন্ডার তৈরি করেন, ক্রিকেটারদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেন তবেই উন্নতি সম্ভব। পুরো বিশ্বে ঘরোয়া ক্রিকেটের নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার আছে কিন্তু আমাদের দেশে নেই। এমনকি এখানে একটা টুর্নামেন্ট খেলবেন আপনি অথচ আপনি সেটা জানবেন মাত্র দশদিন আগে। প্রিমিয়ার লীগেরও কোন নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার নেই। যদি ক্যালেন্ডার না থাকে তবে একটা ক্রিকেটার নিজেকে কিভাবে তৈরি করবে বলুন! এই জিনিসগুলো ঠিক করা উচিত যত দ্রুত সম্ভব। এই ব্যাপারগুলো না থাকলে একজন ক্রিকেটারের কাছ থেকে সেরাটা পাওয়া সম্ভব না। ক্রিকেটের তিনটা ফরম্যাটের জন্যই আলাদাভাবে নিজেদের তৈরি করতে হয় ক্রিকেটারদের। তাই একটা নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার তৈরি করে ক্রিকেটারদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিলে তবেই এই ফরম্যাটে উন্নতি সম্ভব।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

সোহরাওয়ার্দী শুভঃ আপনাকেও ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »