শোয়েব আক্তার »
স্বপ্নের বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখার লক্ষ্য নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমিয়ে ছিলেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করতে। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফেরার কথা বলে গিয়েছিলেন অনুর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলি। এমনকি গতকাল ও বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। আকবর আলি নিজের কথা রেখেছেন।
ভারতীয় বোলারদের শাসন করে দলকে জিতিয়ে তবেই মাঠ ছেড়েছেন তিনি। পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে মাঠে নামার খুব একটা সুযোগ না পেলেও আজ সুযোগ পেয়ে সুদে-আসলে পুষিয়ে দিয়েছেন জুনিয়র টাইগার অধিনায়ক।
১৭৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দুই উদ্ভোধনী ব্যাটসম্যান তামিম-ইমন দূর্দান্ত শুরু এনে দিলেও ভারতীয় লেগ স্পিনার রবি বিষয়ন এর ঘূর্নিতে মূহুতেই চার উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অনেক দর্শক, সমর্থক যখন আরও একটি ফাইনালের স্বপ্ন ভঙ্গের অপেক্ষা করছেন তখন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হোন আকবর আলি।
ইনিংসের ২০তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ৮৫ রানের মাথায় শামীম হোসাইন আউট হয়ে গেলে ক্রিজে আসেন আকবর। জয় থেকে তখনও ৯৩ রান দূরে জুনিয়র টাইগার’রা। দ্রুত উইকেট পড়ায় আক্রমনাত্মক বোলিং ফিল্ডিং আর ক্রমাগত ভারতীয় বোলার, ফিল্ডারদের স্লেজিং উপেক্ষা করে ঠান্ডা মাথায় বাটিং করে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
হ্যামস্ট্রিং ইঞ্জুরিতে পড়ে মাঠ ছেড়ে গেলেও দলের ব্যাটিং বিপর্যয় সামাল দিতে আবারও মাঠে নামেম পারভেজ হোসাইন ইমন। তাঁর সাথে ৪১ রানের জুটি ও পরবর্তিতে বাঁহাতি স্পিনার রবিকুল হাসানের সাথে অবিচ্ছিন্ন ২৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথে রাখেন। উইকেট ধরে রাখতে ৩২ ওভারের পর ব্যাট থেকে রান নিতে খেলেন আরও প্রায় পাঁচ ওভার। তবুও ভারতীয় বোলারদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন নি।
শেষ পর্যন্ত ৭৭ বল থেকে ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ১টি ছয় ও ৪ টি চারের সাহায্যে তাঁর ৪৩ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হয়ে যায়। এমন অধিনায়কোচিত ইনিংসের ফলে জিতে নিয়েছেন প্লেয়ার অব দ্যা ফাইনালের পুরুষ্কার ও।
ব্যাটসম্যান কিংবা উইকেট রক্ষক আকবর আলি থেকে ও তিনি সবচেয়ে সফল অধিনায়ক হিসেবে। মাঠের ক্রিকেটে সবসময় ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তিনি। উইকেটের পেছনে থেকে সবসময়ই বোলারদের বোলিং করার জন্য দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় বুদ্ধি দ্বিপ্ত বোলিং পরিবর্তন অনেক ম্যাচের ফল বাংলাদেশের পক্ষে আনতে সাহায্য করেছে। তাঁর অধিনায়কত্বে ২০১৮ যুব বিশ্বকাপে পর ম্যাচ জয়ের দিক দিয়ে ভারতের পর ই অবস্থান ছিল বাংলাদেশের। খেলেছে ত্রিদেশিয় সিরিজ ও এশিয়া কাপের ফাইনাল।
মাঠের মধ্যে এমন ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁকে ভারতীয় বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ও উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান মাহেন্দ্র সিং ধোনীর সাথে তুলনা করেন।
আকবর আলি প্রথম বাংলাদেশি অধিনায়ক যার নেতৃত্ব বাংলাদেশ আইসিসি’র বড় কোন প্রতিযোগীতায় শিরোপা জিতেছে। তাই, পচেফেস্ট্রুমে বিশ্বজয়ের মালা গলায় দিয়ে আকবর আলি হয়ে গেলেন ইতিহাসের অংশ।
ভারত সপ্তম বারের মতো যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলছিলো অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল। ভারত পঞ্চম বারের মতো শিরোপা জয়ের জন্য লড়ছিলো অন্য দিকে বাংলাদেশ লড়ছিল প্রথম শিরোপা জয়ের স্বাদ নিতে। ভারতের পঞ্চম শিরোপা জয়ে দেয়াল হয়ে দাঁগিয়ে পড়লেন আকবর আলি। ভারতীয় বোলারদের শাসন করে জয় ছিনিয়ে আনলেন লাল সবুজের পতাকার জন্য।
জালালউদ্দিন মোহাম্মদ আকবরকে বলা হয় ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। তিনি ‘মহামতি আকবর’ নামেও পরিচিত। আর আজ ভারতের ক্রিকেটারদের শাসন করে বিশ্বজয়ের মুকুট মাথায় তুলে নিলেন বাংলাদেশের আকবর। এমন দূর্দান্ত খেলা প্রদশর্নের পর তাঁকে ‘আকবর দ্য গ্রেট’ বলা যেতেই পারে!