শোয়েব আক্তার »
রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ১৩তম অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত অনুর্ধ্ব-১৯ দলকে তিন উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ দল! দলীয় অধিনায়ক আকবর আলির ব্যাটিং দৃঢ়তায় দূর্দান্ত এ জয়ে ইতিহাস রচনা করলো টাইগার যুবারা।
দলীয় ৮৫ রানে শাহাদাত হোসাইন আউট হয়ে গেলে ক্রিজে আসেন দলীয় অধিনায়ক আকবর আলি। উইকেটের অন্য প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেপ পড়তে থাকলেও টেল এন্ডারদের নিয়ে বুদ্ধিদ্বিপ্ত ও ঠান্ডা মাথায় অধিনায়কচিত ৪২(৭৬)* রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশ কে প্রথম শিরোপা এনে দেন এ উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান। ১ ছয় ও ৪ চারে আকবর আলি’র ইনিংসটি সাজানো ছিল।
১৭৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দারুণ সূচনা এনে দেন দুই উদ্ভোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিম ও পারভেজ হোসাইন ইমন। শুরু থেকেই আক্রমনাত্মক ব্যাটিং করে ভারতীয় বোলারদের লাইন ল্যান্থ বিগড়ে দেন তারা। ৮.২ ওভারে দলীয় ৫০ পূর্ণ করার পর ওই ওভারের পঞ্চম বলে তামিম ব্যক্তিগত ১৭ রানে রবি বিষয়ন কে উইকেট উপহার দেন।
আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয় ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিলেও মাত্র ৮ রানে আবারও বিষয়নের বলে বোল্ড হয়ে যান। মূহুতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার। পারভেজ হোসাইন ইমন হ্যামস্ট্রিং ইঞ্জুরিতে পড়ে মাঠের বাইরে চলে গেলে দ্রুত বিদায় নেন তৌহিদ হৃদয়(০), শাহাদাত হোসাইন(১), শামিম হোসাইন(৭) ও অভিষেক দাস(৫)। এরমধ্যে ৪টি উইকেট-ই বিষয়ন এর এবং বাকি দুটি সুশান্ত মিসরা’র।
পরিস্থিতি বিবেচনায় আবারও ব্যাট হাতে মাঠে নামেম ইমন। অধিনায়ক আকবর আলির সাথে গড়ে তুলেন ৪১ রানের জুটি। জেসওয়ালের করা ৩২তম ওভারের শেষ বলে আকাশ সিং এর হাতে ক্যাচ দিয়ে ৪৭ রানে আউট হয়ে যান ইমন। জয় থেকে তখনও ৩৫ রান দূরে জুনিয়র টাইগার’রা। তবে কোন অঘটন নয়, ইতিহাস গড়ে-ই ম্যাচ শেষ করেছে আকবর আলি’রা।
ভারতের পক্ষে রবি বিষয়ন ১০ ওভার বল করে ৩০ রানের বিনিময়ে ৪ টি উইকেট লাভ করেন। এছাড়া সুশান্ত মিসরা ৬ ওভার বল করে ১৯ রানে ২টি ও যস্বসি জেসওয়াল ৩ ওভার বল করে ১৫ রানে ১ টি উইকেট লাভ করেন।
শেষ দিকে বৃষ্টি আসলে বাংলাদেশের সামনে নতুন লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৪৬ ওভারে ১৭০ রানের৷ আকবর আলী ও রাকিবুলের দৃঢ়তায় খুব সহজেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছায় বাংলাদেশ।
এর আগে পচেফেস্ট্রুমে আগের রাতের বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে টস জিতে বোলিং এর সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলি। পিচের আদ্রতা কে কাজে লাগাতে বল তুলে দেন দুই পেসার শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিবের হাতে। দুই বোলার ও অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন। আটোসাটো বোলিং ও দিশেহারা হয়ে যায় ভারতের ব্যাটিং লাইন।
ইনিংসের সপ্তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ৯ ও ব্যক্তিগত ২ রানে সাক্সসেনা কে মাহমুদুল হাসান জয়ের ক্যাচ বানান মুরাদ হাসানের পরিবর্তে একাদশ ভুক্ত হওয়া অভিষেক দাস। নিজের প্রথম ওভারেই দলকে সাফল্য এনে দেন তিনি। পাওয়ার প্লে’র দশ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৩ রান সংগ্রহ করে ভারত। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৯৪ রানের জুটি গড়ে তুলেন উদ্ভোধনী ব্যাটসম্যান যস্বসি জেসওয়াল ও তিলক বার্মা। ২৯তম ওভারের শেষ বলে ব্যক্তিগত ৩৮ রানে তিলক বার্মা কে তানজিম হাসান সাকিব শরিফুল ইসলামের ক্যাচ বানিয়ে আউট করেন।
তিন ওভার পর অধিনায়ক প্রিয়ম গর্গ কে মাত্র ৭ রানে তানজিদ হাসানের ক্যাচে পরিণত করেন বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান। তবে, উইকেটের অন্য প্রান্তে দারুণ ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক জেসওয়াল। ৮৯ বল থেকে ৫০ তুলে নিয়েও দলকে বড় সংগ্রহের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
৪০তম ওভারের পঞ্চম বলে জসওয়াল কে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেন শরিফুল ইসলাম। ব্যক্তিগত ৮৮ রানে তানজিদ হাসানের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ১ টি ছয় ও ৮টি চারে সাজানো ছিল তার ইনিংস। ম্যাচের শুরু থেকেই দূর্দান্ত বোলিং করে আসছিলেন শরিফুল। তবে কাঙ্খিত উইকেটের দেখা পাচ্ছিলেন না। অবশেষে জেসওয়াল কে আউট করার পরের বলে সিদ্ধাস ভির কে ও খালি হাতে ফেরান তিনি। শেষ দিকে দুটি রান আউট ও তানজিম হাসান সাকিব আরও ১ টি উইকেট দুলে নিলে ৪৭.২ ওভারে ১৭৭ রানে অল আউট হয়ে যায় ভারত অনুর্ধ্ব-১৯ দল।
বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেক দাস ৯ ওভার বল করে ৪০ রানের বিনিময়ে ৩ টি উইকেট লাভ করেন। এছাড়া শরিফুল ইসলাম ১০ ওভার বল করে ৩১ রানের বিনিময়ে ২টি, তানজিম হাসান সাকিব ৮.২ ওভারে ২৮ রানে ২টি ও বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান ১০ ওভার বল করে মাত্র ২৯ রানে ১ টি উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত অনুর্ধ্ব-১৯: ১৭৭/১০ (৪৭.২) জেসওয়াল ৮৮(১২১), তিলক বার্মা ৩৮(৬৫) ; অভিষেক ৩/৪০(৯), শরিফুল ইসলাম ২/৩১(১০)।
বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯: ১৭০/৭ (৪২.১) পারভেজ হোসাইন ইমন ৪৭(৭৯), আকবর আলি ৪৩(৭৭)
রবি ৪/৩০(১০), সুশান্ত মিসরা ২/১৯(৬)।
ফলাফল: বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী।