শেনওয়ার্নকে খেলে মজা পেতেন নাফিস

নিউজ ডেস্ক »

শাহরিয়ার নাফিস, বাংলাদেশের ক্রিকেটের একজন নক্ষত্র বলা চলে। তরুণ বয়সে ব্যাট হাতে দেখিয়েছেন ঝলক। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১বছরে ১০০০+ রান করার রেকর্ড রয়েছে তার ঝুলিতে। ২০০৬ সালে আইসিসি কর্তৃক নির্বাচিত সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হয়েছিলেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি নাফিস পড়াশোনায় ও ছিলেন দুর্দান্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন নাফিস৷ বাংলাদেশ ক্রিকেটে প্রথম টি-২০ অধিনায়ক হওয়ার রেকর্ডটিও রয়েছে তার দখলে।

ব্যাট হাতে ফতুল্লা টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নাফিসের করা সেই ১৩৮ রানের ইনিংসটির কথা আজও বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের রোমাঞ্চিত করে। ব্রেট লি, শেন ওয়ার্ন, স্টুয়ার্ট ম্যাকগেইল, স্টুয়ার্ট ক্লার্ক, গিলেস্পির মতো বোলার নিয়ে বেশ শক্তিশালী বোলিং লাইনআপ ছিলো সেবার অস্ট্রেলিয়ার। গিলেস্পি এক সাক্ষাৎকারে সেই ম্যাচের বর্ণনা দিয়ে বলেছিলেন- “আমরা পরিকল্পনা করে গিয়েছিলাম তাদেরকে এবার গুঁড়িয়ে দিয়ে আসবো। কিন্তু সেখানে গিয়ে উল্টো আমরাই সমস্যায় পড়ে গেছিলাম।”

টসে জিতে বাংলাদেশ দলের হয়ে ব্যাট করতে নামা তরুণ ওপেনার নাফিস সেদিন বাঘা বাঘা অজি বোলারদের ভয় পাওয়ার বদলে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। অধিনায়ক বাশার ভাই, রাজীন ভাইয়ের সমর্থনের পাশাপাশি বেশ ভালোভাবেই সামলেছিলেন সেদিন। তৎকালীন ব্যাটসম্যানদের আতঙ্কের কারণ দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বোলার শেন ওয়ার্ন ও যার কাছে ঠিকতে পারেননি। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে যেন ওয়ার্নের বোলিং এট্যাককে করেছিলেন বিধ্বস্ত। ওয়ার্নের বলেই মারেন ১০টি চার। ১৮৯ বল মোকাবেলায় করেছিলেন ১৩৮ রান।

বাংলাদেশ সেবার খেলেছিলো ৪২৭ রানে মহাকাব্যিক ইনিংস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হারতে হয় ম্যাচটি। তারপরও এই ম্যাচের কারণে নাফিস আজও সবার হৃদয়ে গেঁথে আছেন সেরা ওপেনারদের একজন হিসেবে। নাফিসের কাছেও ঐ ইনিংসটিই ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। সম্প্রতি “স্কুল অব ইন্জিনিয়ার’স” এ-র একটি লাইভ অনুষ্ঠানে সেই ম্যাচ নিয়ে একটি মজার স্মৃতিচারণা করেন নাফিস।

সবচেয়ে বেশি পিটিয়ে মজা পেয়েছেন কোন বোলারকে? – এই প্রশ্নের জবাবে নাফিস বলেন অজি কিংবদন্তি বোলার শেন ওয়ার্নের কথা। সেই সাথে স্মৃতিচারণা করেন ১৯৯৪ সালে তার খালাতো ভাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক চিফ সিলেক্টর ফারুক আহমেদের সাথে শেন ওয়ার্নকে নিয়ে বলা কথোপকথনের। নাফিস বলেন শেন ওয়ার্নকে দেখে তিনি মনে করতেন খুব সহজেই একে মোকাবিলা করা যায়, সেই সাথে বলেছিলেন ওয়ার্নের বলে খুব মারতে পারবেন তিনি। যা বাস্তবে পরিণত হয় ২০০৬ সালে ফতুল্লায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে।

সেই ম্যাচের স্মৃতিচারণা করে নাফিস বলেন, ‘আমার ঐ সময় মনে পড়েছিলো ১৯৯৪ সালে ফারুক ভাইকে বলা কথাটা। তখনতো বলেছিলাম ওয়ার্নকে খুব মারতে পারবো। এখন যদি না পারি তবে ফারুক ভাই দেখিয়ে দিয়ে বলবেন- তখন তো পিচ্চি বেলায় খুব বলেছিলে পারবে, এখন কি করলে? এরপর ঠিকই সেই ম্যাচে আমার বাউন্ডারিগুলোর মধ্যে ১০টি বাউন্ডারি ওয়ার্নের বলে মেরেছিলাম। ফারুক ভাই ঐ ম্যাচের স্মৃতিচারণ করে একবার কেঁদেছিলেন।’

নিজের উপর অনেকটা আত্নবিশ্বাসী আর বেশ পরিশ্রমী একজন ব্যক্তি নাফিস। জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি পড়াশোনা, ফিটনেস আর ব্যক্তিগত জীবনেও গুরুত্ব দিতেন সমানভাবে। এখনো সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। ক্যারিয়ারের একমাত্র টি-২০ ম্যাচ খেলেছিলেন বাংলাদেশের অভিষেক টি-২০ ম্যাচে। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম টি-২০ অধিনায়ক হওয়ার রেকর্ড অর্জনের পাশাপাশি নাফিসের রয়েছে সেই ম্যাচ জয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের প্রথম এবং একমাত্র টি-২০ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ও।

বাংলাদেশ ক্রিকেট সমর্থকেরা অনেকেই এখনো ইচ্ছে পোষণ করেন, নাফিসকে আবারো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ওপেনিংয়ে দেখার। নিঃসন্দেহে নাফিস নিজেও এই স্বপ্ন মনে লালন করেন। জাতীয় দলের অংশ না হলেও ঘরোয়া দলে তিনি খেলে চলেছেন দাপটের সাথেই। আগামীতে এই দৌড় কতদূর যাবে তা কেবল সময়ের অপেক্ষা।

বাংলাদেশ সময়ঃ ৬:৩০ পিএম

নিউজক্রিকেট/সাজিদা

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »