আশরাফুলের দুই দশকের সেরা টেস্ট একাদশ!

দুর্জয় দাশ গুপ্ত »

১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক৷ আর অভিষেক ম্যাচেই বাজিমাত। বাংলাদেশের তথা বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকেই সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোঃ আশরাফুল৷ বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী ক্রিকেটার বলা হয় তাকে। দেশের হয়ে লাল বলের ক্রিকেটে ম্যাচ খেলেছেন ৬১ টি। এই ৬১ টেস্ট খেলতে গিয়ে আশরাফুল খুব কাছ থেকে দেখেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক কিংবদন্তিদের৷

এবার নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের জন্য মোঃ আশরাফুল নির্বাচন করেছেন গত দুই দশকের সেরা টেস্ট একাদশ। মূলত আশরাফুল যাদের সাথে খেলেছেন বা যাদের খেলা দেখেছেন তাদের নিয়েই এই একাদশ তৈরি করেছেন। আশরাফুলের সেরা টেস্ট একাদশে নেই কোন বাংলাদেশি ক্রিকেটার। সবচেয়ে বেশি তিনজন করে ক্রিকেটার আছেন অস্ট্রেলিয়া ও ভারত থেকে। দু’জন আছেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার। অবাক করা ব্যাপার হলো আশরাফুলের বাছাই করা এই একাদশে যারা আছেন সবাই ইতিমধ্যে ক্রিকেটকে “গুডবাই” জানিয়েছেন।

দুই দশকের সেরা ওয়ানডে এবং টেস্ট উভয় একাদশেই শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা, মুত্তিয়া মুরালিধরন ও শেন ওয়ার্নকে রেখেছেন আশরাফুল। তিনি জানান, ‘টেস্ট এবং ওয়ানডে দুই ফরম্যাটের জন্যই এই চারজন ক্রিকেটার অটোচয়েজ। তাঁদের রেকর্ড এমনটাই বলে। আমার টেস্ট ও ওয়ানডে উভয় একাদশেই এই চারজন থাকছেন।’

সেরা টেস্ট একাদশের ওপনিংয়ে আছেন সাবেক ভারতীয় ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ ও অস্ট্রেলিয়ান তারকা ক্রিকেটার ম্যাথু হেইডেন। ১০৪ টেস্ট ম্যাচে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করা শেবাগ প্রায় ৫০ গড়ে রান করেছেন ৮৫৮৬। অবাক করা ব্যাপার হলো টেস্ট ক্রিকেটে শেবাগের স্ট্রাইক রেট ৮২.২ যা এক দিনের ক্রিকেটেও অনেক ওপেনারের নেই। অন্যদিকে শেবাগের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলা হেইডেনের রান ৮৬২৫, আর গড় ৫০.৭। এই দুজনকে ওপেনিংয়ে বেছে নেবার কারণ জানিয়েছেন আশরাফুল। তিনি বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে শেবাগের দুটি ট্রিপল সেঞ্চুরি রয়েছে এবং ২৯৫ রানের আরো একটি দুর্দান্ত ইনিংস রয়েছে। হেইডেন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ওপেনারদের একজন। তাঁর ৩৮০ রানের সেই ইনিংসটা এখনো চোখে ভাসে। দু’জনের রান আর গড় দেখলেই বুঝা সম্ভব টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনার হিসেবে তাঁরা কতটা সফল। তাঁদের সময়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা সেভাবে ছিলো না। ফরম্যাটটা টেস্ট হলেও এই দুজন প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর চড়াও হতেন শুরু থেকেই। পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই নিজেদের স্বভাবজাত ক্রিকেট খেলেছেন এ দুজন। আমার প্রিয় দুই ওপেনারকে এই একাদশের ওপনিংয়ে রেখেছি।’

টেস্ট ক্রিকেটে তিন নম্বর পজিশন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ সব দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান এই পজিশনে ব্যাট করে থাকে। আশরাফুল তিন নম্বর পজিশনে রেখেছেন “দ্য ওয়াল” খ্যাত ভারতের সাবেক অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়কে। এই পজিশনে ভারতের হয়ে সফল ছিলেন রাহুল। ১৬৪ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ৫২.৩ গড়ে রাহুলের রান ১৩২৮৮ রান।

চার নম্বর পজিশনে আছেন ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকার। সর্বকালের সেরা এই ক্রিকেটার ২০০ টেস্ট ম্যাচ খেলে প্রায় ৫৪ গড়ে ১৫৯২১ রান করেছেন। আশরাফুল ভুল করেন নি নিজের পছন্দের একাদশে ক্রিকেট ঈশ্বরকে বাছাই করে নিতে।

আশরাফুলের বাছাই করা দুই দশকের সেরা টেস্ট একাদশে পাঁচ নম্বর পজিশনে আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ব্রায়ান লারা। টেস্ট ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মালিক লারা। লাল বলের ক্রিকেটে ১৩১ টেস্টে ১১৯৫৩ রান লারার, গড় ৫৩। এ ব্যাপারে আশরাফুল বলেন, ‘শচীন টেন্ডুলকার এবং ব্রায়ান লারাকে ছাড়া সেরা টেস্ট একাদশ চিন্তা করা অসম্ভব। এই দুজন গ্রেট ক্রিকেটারকে সবাই নিজেদের একাদশে চাইবে। আমার একাদশেও এই দুজনকে রেখেছি।’

এরপরেই আছেন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার দক্ষিণ আফ্রিকান সাবেক ক্রিকেটার জ্যাক ক্যালিস। সাদা পোষাকে ১৩ হাজার রানের পাশাপাশি ২৯২ উইকেট আছে ক্যালিসের। আশরাফুলের মতে ক্যালিসের মত একজন অলরাউন্ডার টেস্ট ক্রিকেটের সেরা একাদশে জায়গা পাওয়ার জোর দাবি রাখেন।

সাত নম্বর পজিশনে আছেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা। ১২ হাজার রানের মালিক সাঙ্গাকারাকে এই একাদশের অধিনায়ক করেছেন আশরাফুল। এছাড়া উইকেটরক্ষকের ভূমিকাও পালন করবেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে কুমার সাঙ্গাকারাকে সফলও বলা চলে৷ ১৫ টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ৫ জয়ের পাশাপাশি ছিলো ৭ টি ড্র, আর হার ৩টি ম্যাচে। আশরাফুল বলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে আমার পছন্দ কুমার সাঙ্গাকারা৷ কারণ তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত দলের জন্য বেশ কার্যকর।’

গত দুই দশকের সেরা টেস্ট একাদশে আশরাফুল রেখেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের কিংবদন্তি দুই স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন ও শেন ওয়ার্নকে। ক্রিকেটের লম্বা সংস্করণে মুরালিধরন ও ওয়ার্ন যথাক্রমে ৮০০ ও ৭০৮ উইকেটের মালিক। পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই এ দুজনের মধ্যে ছিলো এক প্রতিযোগিতা। আশরাফুলের বাছাই করা এই একাদশে দুজনেই আছেন সতীর্থ হিসেবে।

আশরাফুল বলেন, ‘মুত্তিয়া মুরালিধরন ও শেন ওয়ার্নকে টেস্ট ক্রিকেটে সামলানো কোন চাট্টিখানি কথা না। দুজনই যেকোনো দলের জন্য বড় হুমকি। তাদের নিজেদের দিনে যেকোনো ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামাতে পারেন। আমি এ দুজনকেই একসাথে রাখছি।’

আর পেস বোলার হিসেবে আছেন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সফলতম দুই পেসার শোয়েব আখতার ও গ্লেন ম্যাকগ্রা।

১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের জার্সিতে ৪৬টা টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন শোয়েব। উইকেট নিয়েছেন ১৭৮ টি। ইনজুরিতে না পড়লে শোয়েবের টেস্ট ক্যারিয়ার আরো লম্বা হতো। গতি আর সুইংয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের বেশ ভুগিয়েছেন শোয়েব।

অন্যদিকে গ্লেন ম্যাকগ্রা টেস্ট ক্রিকেটে ১২৪ টেস্টে ৫৬৩ উইকেট শিকার করেছেন। ম্যাকগ্রা তাঁর দীর্ঘ ১৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নিজের শিকারে পরিণত করেছেন বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের। মোঃ আশরাফুলও নিজের পছন্দের একাদশে বোলিংয়ের গুরু দায়িত্ব এই দুজনের কাঁধে দিয়েছেন।

এক নজরে মোঃ আশরাফুলের দুই দশকের সেরা টেস্ট একাদশঃ

বীরেন্দর শেবাগ, ম্যাথু হেইডেন, রাহুল দ্রাবিড়, শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা, জ্যাক ক্যালিস, কুমার সাঙ্গাকারা (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), শেন ওয়ার্ন, মুত্তিয়া মুরালিধরন, শোয়েব আখতার ও গ্লেন ম্যাকগ্রা।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »