নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
নাফিস ইকবাল খান! সম্ভাবনাময় একজন ওপেনার হয়ে জাতীয় দলে এসেছিলেন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক চাচা আকরাম খানকে অনুসরণ করে খান পরিবারের দ্বিতীয় প্রতিনিধি হয়ে বাইশ গজে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।পরবর্তীতে খান পরিবারের আরেক সন্তান তামিম ইকবাল খানও চাচা ও ভাইয়ের দেখানো পথে হেটে গায়ে জড়িয়েছেন লাল-সবুজের জার্সি।চাচা আকরাম খান ও ছোট ভাই তামিমের মতো নিজেকে মেলে ধরা হয়নি সাবেক এই ওপেনারের। অভিশপ্ত ইনজুরি ও ভাগ্যের নির্মমতায় ক্যারিয়ার লম্বা করা হয়নি নাফিসের।
নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের গল্প,প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি ও অজানা অনেক কিছু জানাতে নিউজক্রিকেট টুয়েন্টিফোরের নিয়মিত ফেসবুক লাইভ আড্ডায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এসে কথা বলেছেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।
কিছুদিন আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন! করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে আবার সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। করোনা আক্রান্ত হওয়া এবং এর থেকে রিকভার করে ফিরে আসার এই অভিজ্ঞতা সমন্ধে জানতে চাইলে নিউজক্রিকেট টুয়েন্টিফোরকে নাফিস ইকবাল জানান: কিভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছি সেটা বলাটা কঠিন। আমি এবং আমার ফ্যামিলি শুরু থেকেই সবকিছু ম্যান্টেইন করে চলার চেষ্টা করেছি। করোনার জন্য যেসকল স্বাস্থবিধী ম্যান্টেইন করতে বলা হয়েছিল সেই অনুযায়ী চলেছি।ফ্যামিলির সবাই আইসোলেটেড ছিল। তবুও ফ্যামিলিতে প্রথমে আমার আম্মু এবং পরে আমি আক্রান্ত হই। করোনা পজেটিভ হওয়ার পর কিছুটা ভয়ও কাজ করেছিল।প্রতিটা দিন একটা পরিক্ষা ছিল, প্রতিটা দিন একটা বাড়তি আতঙ্ক কাজ করেছিল মনে। আসলে সেই ভয়াবহ অনুভুতি গুলো বলে বুঝানো সম্ভব না। যাই হোক আলাহামদুলিল্লাহ ১৮ দিন পর যখন আল্লাহ’র রহমতে সুস্থ হই তখন একটা স্বস্তি কাজ করেছিল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়া ও অভিষেক মুহুর্তের অনুভুতি জানতে চাইলে নিউজক্রিকেটকে তিনি বলেন: জাতীয় দলের হয়ে খেলা সব ক্রিকেটারের জন্য স্বপ্নের। এর অনুভুতিটা আসলে বলে বুঝনোর মতো না। আমার জন্য বাড়তি আনন্দের ছিল, আমার অভিষেকটা চট্রগ্রামে আমার ঘরের মাঠ এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে হয়েছিল।
ক্রিকেটে আসার পিছনে যে ব্যক্তিগুলোর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি ছিল! তাদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নিউজক্রিকেটকে নাফিস ইকবাল জানান: আমার চাচা জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তার থেকে অনুপ্রাণিত হই।তিনি অনেক সাহায্য করেছেন। তবে ক্রিকেটার হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা আমার বাবা এবং নানার। আমার বাবা আমাদের সবদিক দিয়ে সর্বোচ্চ সমর্থন দিয়ে গেছেন ছোটবেলা থেকে।আমার ক্রিকেটার হওয়ার ক্ষেত্রে আমার নানার কাছ থেকে যে সাপোর্ট পেয়েছি সেটা বলে বুঝানোর মতো নয়। আমি যখন পড়াশোনার জন্য ঢাকায় শিপট করি ওইসময়টায় আমার এই ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে বেশি শ্রম দিয়েছেন আমার নানা। ক্রীড়া পরিবারের সন্তান হওয়ায় অনুপ্রেরণার ঘাটতি ছিল না কখনো। তবুও স্পেশাল ভাবে আমার বাবা এবং আমার নানার ভূমিকার কথা বলতেই হয়।
সম্ভাবনাময় একজন ওপেনার হয়ে জাতীয় দলে অভিষেক হয় নাফিস ইকবালের। যদিও দুর্ভাগ্যের কারনে ক্যারিয়ার লম্বা করার সুযোগ হয়নি। প্রতিভা অনুযায়ী বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরো বেশি কিছু দেওয়ার সামর্থ্য ছিল আপনার।সবমিলিয়ে অপ্রাপ্তি গুলো থেকে কোন আক্ষেপ কি কাজ করেছে?
এই ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নাফিস ইকবাল বলেন: আক্ষেপ তো সবসময় কাজ করে নিজের ভিতর। কিছু জিনিস আল্লাহ’র হাতে থাকে, যেমন আমার ওইসময়কার ইনজুরির ব্যাপারটা! আমি একটা প্রাইম টাইমে তখন ইনজুরির কারনে দল থেকে ছিটকে পড়েছিলাম। ওইসময়টায় তামিম সহ অনান্য ওপেনাররা নিজেদের দারুণ ভাবে মেলে ধরায় একটা প্রতিদ্বন্দ্বীতা চলে এসছিল।তখন আমার জন্য কাজটা আরো কঠিন হয়ে পড়ে।তবুও আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি আবার কাম ব্যাক করার।আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় মাঝে দুই-একবার আমার ফেরার সুযোগ ছিল।কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত আর ফেরা হয়নি। ক্যারিয়ার লম্বা করতে ব্যর্থ হওয়ার আক্ষেপটা অবশ্যই আছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, দেশের ক্রিকেটকে আমার আরো কিছু দেওয়ার ছিল যেটা আমি পারিনি।
নাফিস ইকবালের জন্মদিনে ক্রিকেট পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ।নিজের জন্মদিনে এইরকম একটা প্রাপ্তি সেদিন কেমন অনুভূতি হয়েছিল নাফিস ইকবালের? পুরনো বিশেষ সেই দিনটার কথা মনে করিয়ে দেওয়ায়, সেই দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নাফিস ইকবাল জানানঃ
জন্মদিনের মতো বিশেষ একটা দিনে, এইরকম একটা পুরস্কার সত্যিই অসাধারণ ছিল আমার কাছে।সেদিন আশরাফুল যেভাবে নিজেকে চিনিয়েছে সেটা এককথায় অসাধারণ।আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসে ওইসময়ের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল এটি আর আমি সেই দলের একজন ছিলাম। তবে অপ্রত্যাশিত ভাবে জন্মদিনের সেই বিশেষ উপহারের ওই ম্যাচটাই আমার শেষ ওয়ানডে ম্যাচ হয়েছিল জাতীয় দলে হয়ে, যেটা আমার অজানাই ছিল তখন।
জাতীয় দলে খেলার সুযোগ থাকলে বা আবার ফেরা হলে ওপেনার হিসেবে সঙ্গী কাকে চাইতেন? এই প্রশ্নের জবাবে নাফিস ইকবাল বলেন: অবশ্যই তামিমকে চাইতাম।
শুধু ভাই বলে নয়, এই মুহুর্তে ওর চাইতে ভাল অপশন কেউ হতে পারেনা। এছাড়া আমার পরিবার ও অনেকের পুরনো ইচ্ছা ছিল, যদি আমরা দুই ভাই একসাথে ইনিংস উদ্বোধন করতাম! আমি এবং তামিমও এমনটা চাইতাম। তাই যদি এই ধরনের সুযোগ হতো তাহলে তামিমের সাথেই ওপেন করতাম।
অনুজ তামিম এখন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক। অধিনায়ক হিসেবে তামিম কেমন করবে বলে মনে হয়?
তামিম ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে অগ্রজের প্রত্যাশা কি?
নিউজক্রিকেট টুয়েন্টিফোরের এই প্রশ্নের জবাবে নাফিস ইকবাল জানান: আমার বিশ্বাস তামিম ভাল করবে অধিনায়ক হিসেবে। লাস্ট ২-৩ বছর ধরে সে নিজেকে প্রস্তুত করে আসছিল।আমি মনে করি তামিম এই মুহুর্তে যথেষ্ট পরিপক্ব হয়েছে একটি দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য।
ব্যক্তিগত ভাবে চাই বোর্ড ওর উপর আস্থা রেখে যেভাবে ওকে দায়িত্ব দিয়েছে, সেই আস্থা ভরসাটা রেখে তামিমকে অধিনায়ক হিসেবে প্রাপ্য সুযোগ যেন দেওয়া হয়। কয়েকটা সিরিজ যেন সে পায় একজন কাপ্তান হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার।
আমি আশা করছি অধিনায়ক হিসেবে সে ভাল করবে এবং দলের প্রত্যাশা পূরন করবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় দলের সাবেক এই ওপেনার ইনজুরির কারনে ২০০৬ সালে দল থেকে ছিটকে যান।পরবর্তীতে নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আর গায়ে জড়ানো হয়নি লাল সবুজের জার্সি।আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১১ টি টেস্ট ও ১৬ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন নাফিস। সাদা পোশাকে ১১ টেস্টে ১ সেঞ্চুরি ও দুই অর্ধশতকে রান করেছেন ৫১৮। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৬ ম্যাচ খেলে ১৯.৩১ গড় ও দুই অর্ধশতকে ৩০৯ রান করেন এই ওপেনার। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়া বধের ম্যাচে দেশের হয়ে সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন তিনি। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলার পর ইনজুরির কারনে দল থেকে ছিটকে যান এই ওপেনার। পরবর্তীতে নিজেকে প্রমাণ করে আর জাতীয় দলে ফেরা হয়নি এই ক্রিকেটারের।এইভাবে অচিরেই হারিয়ে যান সম্ভাবনা জাগিয়ে দলে আসা এই ওপেনার।
নিউজক্রিকেট টুয়েন্টিফোর/ ইফতি মারুফ