সর্বজয়ী এক মহানায়ক এমএস ধোনি

কামরুল হাসান রাকিশ »

মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিশ্ব ক্রিকেটে পৃথিবীর যত নামীদামী, তারকাখ্যাতি পাওয়া উইকেটরক্ষক ক্রিকেটার, ব্যাটসম্যান রয়েছে তাদের মধ্যে সেরা ১০ জনকে যে আলাদা করে তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাহলে সেই তালিকায় অবশ্যই সবার উপরে থাকবে একজন ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার। যার খ্যাতির তালিকায় এমন কোন পাওয়া নেই যা তিনি পাননি। যার জাদুতে ভারত ২০০৭ আইসিসি বিশ্ব টোয়েন্টি২০, ২০০৭-০৮ সালের সিবি সিরিজ, ২০০৮ সালের বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি, ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২-০ ব্যবধানে একটি সিরিজ ও ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় করেছে। তার অধিনায়কত্বেই ভারত টেস্টের র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে উঠে এসেছিল। এখনও পর্যন্ত টেস্ট এবং একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার রেকর্ড ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে সেরা। তিনি ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করেন, সেই সাথে বিশ্বের প্রথম অধিনায়ক, যাঁর আইসিসির সব টুর্নামেন্ট জয় করার কৃতিত্ব রয়েছে । আইপিএল ২০১০ ও চ্যাম্পিয়ন্স লীগে তিনি চেন্নাই সুপার কিংস দলের অধিনায়কত্ব করছেন। তার নেতৃত্বে ভারতীয় দল প্রথম শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল সিরিজ জয় করেছে এবং ভারত কুড়ি বছর পর অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হারাতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আর কেউ নন তিনি হচ্ছেন, নাম্বার সেভেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষক মহেন্দ্র সিং ধোনি।

ধোনির জন্ম ১৯৮১ সালের ৭ই জুলাই ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাঁচী নামক শহরে। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতা সম্পন্ন ভারতীয় ব্যাটসম্যান। ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ঘরোয়া ক্রিকেটে ১৯৯৯/০০ – ২০০৪/০৫ বিহার ক্রিকেট দলের হয়ে।
সেই থেকে যার শুরু একের পর এক সাফল্য অর্জন করে বিশ্বের সব বাঘা বাঘা ক্রিকেটারকে পিছনে ফেলে এক অদীপ্ত সাফল্যমন্ডিত খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন এমএস ধোনি।


ধোনি একাধিক সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি ২০০৮ ও ২০০৯ সালে আইসিসি একদিনের ক্রিকেটের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান। তিনিই প্রথম ভারতীয়, যিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া তিনি ভারতের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মান রাজীব গান্ধী খেলরত্ন ও দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী পেয়েছেন।

একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট রেটিংয়ে জানুয়ারী ২০১০ সালে ধোনী সর্বোচ্চ র‌্যাঙ্কিংধারী খেলোয়াড়ের অধিকারী ছিলেন। ২০০৯ সালে ক্রিকেটের বাইবেল নামে পরিচিত উইজডেনের স্বপ্নের টেস্ট একাদশ দলের অধিনায়ক হিসেবে ঘোষিত হন এবং ফোর্বস ম্যাগাজিন কর্তৃক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনী ১০ ক্রিকেটারের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় হিসেবে মনোনীত হন মহেন্দ্র সিং ধোনি।

২০০৯ সালে ধোনি আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট এবং আইসিসি ওডিআই দলের অধিনায়ক হিসেবে তার নাম ঘোষিত হয়। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চূড়ান্ত খেলায় তিনি মাত্র ৭৯ বলে ৯১ রান করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অসাধারণ ব্যাট করেন এবং ভারতীয় দল চ্যাম্পিয়ন হয়। ঐ খেলায় ধোনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করেন। বিশ্বের ইতিহাসে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয় করেন ।

২০১১ সালে ধোনিকে ভারতের সামরিক বাহিনী লেফটেন্যান্ট কর্নেলের পদমর্যাদা প্রদান করে।
জুনিয়র ক্রিকেটে ধোনী ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে বিহার অনূর্ধ্ব-১৯ দলে যুক্ত হন এবং ৭ ইনিংসের ৫ খেলায় ১৭৬ রান করেন। দলটি গ্রুপে ৬ দলের মধ্যে ৪র্থ স্থান দখল করে ও কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ণ হতে পারে নাই।

বিহার দলে ধোনি ১৮ বছর বয়সে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে বিহার ক্রিকেট দলের পক্ষে রঞ্জি ট্রফিতে নিজেকে অভিষিক্ত করেন। অভিষেক ম্যাচে আসাম ক্রিকেট দলের বিপক্ষে অপরাজিত ৬৮ রান করেন। ঐ মৌসুমে তিনি ৫ খেলায় ২৮৩ রান সংগ্রহ করেন। বেঙ্গল ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ২০০০-০১ মৌসুমে ১ম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেন।

২০০২-০৩ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে তিনটি অর্ধ-শতক এবং দেওধর ট্রফি প্রতিযোগিতায় দু’টি অর্ধ-শতক করে হার্ড হিটিং ব্যাটিংয়ের পরিবর্তে নিচের সারির ব্যাটসম্যান হিসেবে রান করার মাধ্যমে জয়ে অংশগ্রহণ ও প্রাধান্য বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।

ধোনি ২০০৩-০৪ মৌসুমে রঞ্জি ওডিআই ট্রফিতে আসামের বিপক্ষে ১ম খেলায় অপরাজিত ১২৮* রান করেন। ইস্ট জোন ক্রিকেট দলের পক্ষে ৪ ম্যাচে ২৪৪ রান করে দেওধর ট্রফি জয়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।

ভারতীয় এ-দলে সাফল্যের সূত্র ধরে ধোনি ২০০৩-০৪ মৌসুমে ভারতীয় এ-দলের পক্ষ হয়ে জিম্বাবুয়ে এবং কেনিয়া সফর করেন। হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে আয়াজিত জিম্বাবুয়ে একাদশের বিপক্ষে ধোনি তার সেরা সাফল্য হিসেবে ৭ ক্যাচ ও ৪টি স্ট্যাম্পিং করেন। কেনিয়া, ভারত-এ এবং পাকিস্তান-এ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় টুর্ণামেন্টে ধোনি পাকিস্তানের ২২৩ রানের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে অর্ধ-শতক রান করেন সাফল্যের পদচারণায় তিনি পাকিস্তান-এ দলের বিপক্ষে ১২০ ও ১১৯* – দু’বার সেঞ্চুরি করেন।

ধোনি টুর্ণামেন্টে ৭ খেলায় ৬ ইনিংসে ৭২.৪০ গড়ে ৩৬২ রান করে ভারতীয় জাতীয় দলের তৎকালীন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী এবং রবি শাস্ত্রী প্রমূখের মনোযোগ ও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু, ভারতীয় এ দলের কোচ সন্দ্বীপ পাতিল দীনেশ কার্তিককে ভারতীয় দলে উইকেট-রক্ষক কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশ করেন।
আইপিএল বা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে এম.এস. ধোনি ১.৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে চেন্নাই সুপার কিংস দলে খেলছেন। এরফলে আইপিএলে অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের তুলনায় প্রথম মৌসুমে সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান তিনি। এছাড়াও, ধোনি চেন্নাই সুপার কিংস দলের বর্তমান অধিনায়ক।

একদিনের ক্রিকেটে দলে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ ম্যাচের সিরিজে সহ-অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন ধোনি। ২ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনি তার প্রিয় তারকা খেলোয়াড় অ্যাডাম গিলক্রিস্টের আন্তর্জাতিক রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়েন।

ইংল্যান্ডের ৫ জন খেলোয়াড়ের ক্যাচ এবং একটি স্ট্যাম্পিং করে এ নতুন রেকর্ডে নাম লেখান ধোনি। ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত আইসিসি ওয়ার্ল্ড টি-২০ ট্রফির ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ী হয়।
এতে ধোনি ভারতের ২য় অধিনায়ক হিসেবে কপিল দেবের বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয়ের পর যে-কোন স্তরের ক্রিকেটে সেরা সাফল্য লাভ করেন। ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০০৯ তারিখে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধোনি প্রথমবারের মতো উইকেট লাভ করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ট্রাভিস ডাউলিনকে বোল্ড করে এ কৃতিত্ব দেখান তিনি। ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের ২য় খেলায় ধোনি মাত্র ১০৭ বলে ১২৪ করেন। ৩য় খেলায় যুবরাজ সিংকে সাথে নিয়ে ৯৫ বলে ৭১ রান করেন ও ভারত ৬ উইকেটে জয়ী হয়। ২০০৯ সালের বেশ কয়েক মাস ধোনি আইসিসি’র একদিনের ব্যাটসম্যানদের রেটিংয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছিলেন। ২০১০ সালের শুরুতে অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড় মাইক হাসি তাকে স্থানচ্যুত করেন।

২০০৯ সালে মাত্র ২৪ ম্যাচে ৭০.৪৩ রান গড়ে ১১৯৮ রান করে তার সফলতম বছর পার করেন। ঐ বছর অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন ধোনি।
ওয়ান-ডে ক্রিকেটে ধোনি’র অসাধারণ ফলাফলে ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের উইকেট-রক্ষক হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে দীনেশ কার্তিকের স্থলাভিষিক্ত হন। বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলায় ধোনি তার অভিষেক টেস্ট ম্যাচে ৩০ রান করেন। যখন তিনি ক্রিজে নামেন তখন ভারতীয় দল ১০৯ রান নিতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে এবং ধারাবাহিকভাবে উইকেট পড়তে থাকলেও তার আগ্রাসী ইনিংসে দলের সর্বশেষ ব্যক্তি হিসেবে আউট হন। ২য় টেস্টেই প্রথম অর্ধ-শতকের দেখা পান তিনি এবং ৫১ বলে করা তার দ্রুত অর্ধ-শতকের সাহায্যে ভারত ৪৩৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে ও শ্রীলঙ্কানরা ২৪৭ রানে অল-আউট হয়ে যায়। জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি, ২০০৬ সালে পাকিস্তান সফরে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত ২য় টেস্টে ধোনি তার প্রথম শতক লাভ করেন। ইরফান পাঠানকে সাথে নিয়ে যখন তিনি জুটি গড়েন তখনও ফলো-অন থেকে দলটি ১০৭ রান দূরে ছিল। এ অবস্থায় তার স্বভাবসুলভ আগ্রাসী ইনিংসে ৩৪ বলে অর্ধ-শত রান করেন এবং মাত্র ৯৩ বলে তার প্রথম সেঞ্চুরি করেন।

২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে ধোনি দু’টি সেঞ্চুরি করেন এবং ৩ ম্যাচের সিরিজে ভারতীয় দল ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়লাভ করে। এ জয়ের ফলেই প্রথমবারের মতো ভারতীয় দল আইসিসি ক্রিকেট রেটিংয়ে ১নং স্থান দখল করে। এছাড়াও, ৩য় টেস্টে ৯ উইকেটের বিনিময়ে ৭২৬ রান ঘোষণা করে তাদের দলের ইতিহাসে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করার কৃতিত্ব দেখায়। খেলার পাশাপাশি অসংখ্য সাফল্য রয়েছে তাঁর জীবনে। ধোনি একাধিক সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি ২০০৮ ও ২০০৯ সালে আইসিসি একদিনের ক্রিকেটের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান। তিনিই প্রথম ভারতীয়, যিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া তিনি ভারতের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মান রাজীব গান্ধী খেলরত্ন ও দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী পেয়েছেন।

একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট রেটিংয়ে জানুয়ারী ২০১০ সালে ধোনী সর্বোচ্চ র‌্যাঙ্কিংধারী খেলোয়াড়ের অধিকারী ছিলেন। ২০০৯ সালে ক্রিকেটের বাইবেল নামে পরিচিত উইজডেনের স্বপ্নের টেস্ট একাদশ দলের অধিনায়ক হিসেবে ঘোষিত হন এবং ফোর্বস ম্যাগাজিন কর্তৃক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনী ১০ ক্রিকেটারের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় হিসেবে মনোনীত হন মহেন্দ্র সিং ধোনি।

২০০৯ সালে ধোনি আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট এবং আইসিসি ওডিআই দলের অধিনায়ক হিসেবে তার নাম ঘোষিত হয়। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চূড়ান্ত খেলায় তিনি মাত্র ৭৯ বলে ৯১ রান করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অসাধারণ ব্যাট করেন এবং ভারতীয় দল চ্যাম্পিয়ন হয়। ঐ খেলায় ধোনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করেন। বিশ্বের ইতিহাসে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয় করেন।

২০১১ সালে ধোনিকে ভারতের সামরিক বাহিনী লেফটেন্যান্ট কর্নেলের পদমর্যাদা প্রদান করে।
আজ ৭ই জুলাই- বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করা একজন যোগ্য মানুষের জন্মদিন।

শুভ জন্মদিন মাহি, এমএস, এমএসডি, ক্যাপ্টেন কুল ডাকনাম খ্যাত ভারতীয় ডানহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মহেন্দ্র সিং ধোনি।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »