দুর্জয় দাশ গুপ্ত »
তুষার ইমরান দেশের ক্রিকেটের এক বড় নাম। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা এত লম্বা না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে তুষার ইমরান আলো ছড়িয়েছেন বহুদিন। তার ব্যাটে বয়েছিলো রানের ফোয়ারা। সেই তুষার ইমরান ক্রিকেটার হিসেবে অবসরে গেলেও এখনো যুক্ত আছেন ক্রিকেটের সাথেই। নিজেকে জড়িয়েছেন কোচিং পেশায়। বিপিএলের গেল আসরে সিলেট স্ট্রাইকার্সের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পালন করা তুষার ইমরান বিপিএলের দশম আসরে আছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হেড কোচের ভূমিকায়।
আসন্ন বিপিএল সহ কোচ তুষার ইমরানের বর্তমান ব্যস্ততা, ভবিষ্যত পরিকল্পনা সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের প্রতিনিধি দুর্জয় দাশ গুপ্ত।
প্রশ্নঃ কেমন আছেন? বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে?
তুষার ইমরানঃ ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। আমি মাঠের মানুষ, ক্রিকেট নিয়েই ব্যস্ততা। কোচিং করাচ্ছি।
প্রশ্নঃ ক্রিকেটার হিসেবে পারফর্ম করা নাকি কোচিং করানো, কোনটা বেশি কঠিন?
তুষার ইমরানঃ দেখেন আসলে সবকিছুই কঠিন যদি আপনি কাজটা না জানেন। আমি ক্রিকেটার হিসেবে সবসময় চেষ্টা করেছি আমার দলকে নিজের সেরাটা দেওয়ার। অনেক সময় সফল হয়েছি আবার অনেক সময় ব্যর্থও হয়েছি। কিন্তু আমার লক্ষ্যটা স্থির ছিলো। কোচিংয়েও আমার একই লক্ষ্য। নিজেকে নিংড়ে দিতে চেষ্টা করি সবসময়। তাই কোনটাই কঠিন মনে হয়না।
প্রশ্নঃ কোচিং করানো কতটা উপভোগ্য?
তুষার ইমরানঃ আসলে এটা পুরোটাই নির্ভর করে আপনার দল কতটা পারফর্ম করলো তার উপর। দল ভালো করলে আপনার ভালো লাগবে। আবার দল খারাপ করলে তখন আপনার নিজেরই সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগবে। তবে এই পেশাটা আমি বেশ উপভোগ করছি।
প্রশ্নঃ এবারের বিপিএলে প্রথমবারের মত আপনি হেড কোচের ভূমিকায়। কতটা চ্যালেঞ্জ থাকবে?
তুষার ইমরানঃ আমি এর আগেও বিপিএলে কাজ করেছি, ঘরোয়া ক্রিকেটে কাজ করেছি। বিপিএলের গত আসরেও আমি সিলেট স্ট্রাইকার্সের ব্যাটিং কোচ দিলাম। বেশ ভালো একটা টুর্নামেন্ট কাটিয়েছিলাম। আমার কাছে তেমন কোন প্রেশার মনে হচ্ছে না। আপনি আপনার কাজকে ভালোবাসলে যত কঠিনই হোক না কেন আপনার কষ্ট হবে না, চ্যালেঞ্জ মনে হবে না। তবে হেড কোচ হিসেবে যখন প্রথমবারের মত কাজ করতে যাচ্ছি তখন আরো ভালো কিছু করার চেষ্টা তো অবশ্যই থাকবে।
প্রশ্নঃ কোচ হিসেবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের স্কোয়াড নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট?
তুষার ইমরানঃ আসলে প্লেয়ার ড্রাফট থেকে আপনি চাইলেও অনেক সময় পছন্দের প্লেয়ারকে ডাকতে পারবেন না। কারণ সে সুযোগটা আপনার আসে না। এই যেমন আমাদের টার্গেট ছিলো পারভেজ হোসেন ইমন, জাকের আলী অনিক এদেরকে দলে নিবো। কিন্তু সে সুযোগটা আমাদের আসেনি। এর আগেই অন্য আরেকটা দল তাদেরকে ডেকে ফেলছে। এছাড়া মনে করেন, প্রথমে আমি একটা ব্যাটার নিলাম, এরপর তো আমাকে একটা পেস বোলার নিতেই হবে। তবে এবারের আসরের প্লেয়ারগুলো আগের আসরগুলোর চেয়ে ভালো। এই যেমন তানজিদ হাসান তামিম আছে, শাহাদাত হোসেন দিপু আছে এরা বাংলাদেশের ভবিষ্যত। এ দুজনকে দল নিতে পেরে আমার ভালো লাগছে। এছাড়া বিদেশি ক্রিকেটাররাও খারাপ না। পরিচিত বেশ কয়েকজন প্লেয়ার আছে। তাদের সকলের স্ট্রাইট রেটই ১৪০ এর উপরে। স্কোয়াড ওতটাও খারাপ না। কিন্তু আপনাকে এটা চিন্তা করতে হবে কুমিল্লা, রংপুরের মত দল তারা ড্রাফটের বাইরে থেকেই অনেক ভালো ভালো প্লেয়ার আগেই দলে ভিড়িয়েছে। আর আমরাই সবচেয়ে কম বাজেটের দল। ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার দল আমাদের, সে হিসেবে আমি বলবো যদি প্লেয়াররা পারফর্ম করতে পারে তাহলে ভালো রেজাল্ট আসবে।
প্রশ্নঃ আপনি যে দুটো দলের কথা বললেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং রংপুর রাইডার্স, এত এত বড় নাম তাদের দলে, আপনার দল নিয়ে তাদের সাথে পাল্লা দিতে পারবেন?
তুষার ইমরানঃ দেখেন ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। যেকোনো দিন যেকোনো কিছু হতে পারে। একটু আগেই যেটা বললাম আপনার লক্ষ্যটা স্থির রাখতে হবে এবং সেজন্য আপনাকে কাজ করে যেতে হবে। আমাদের দলটা ঐ দুটো দল থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হতে পারে তাই বলে এমন না যে আমাদের দলে ভালো প্লেয়ার নেই। হয়তো তেমন বড় কোন নাম নেই। কিন্তু যারা আছে তারা যদি জ্বলে উঠতে পারে তাহলে অবশ্যই ভালো করা সম্ভব। আর বিদেশি প্লেয়ার তো খেলবে মাত্র ৪ জন। আসল কাজটা করতে হবে লোকাল ক্রিকেটারদেরই। আমার কাছে দলটা মোটামুটি ব্যালেন্সই মনে হচ্ছে। বাকিটা দেখা যাক কি হয়। সময়ই বলে দেবে।
প্রশ্নঃ সাব্বির রহমান যিনি এর আগেও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে খেলেছেন। কিন্তু তিনি এবারের বিপিএলে দলই পাননি। আপনাদের কি কোন প্ল্যান ছিলো সাব্বির রহমানকে নিয়ে যেহেতু আপনাদের ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে এর আগেও তাকে খেলতে দেখা গিয়েছে?
তুষার ইমরানঃ দেখেন সবকিছু তো আমাদের হাতে থাকে না। এখানে মালিকপক্ষের একটা ব্যাপার থাকে, বাজেটের ইস্যু থাকে, ড্রাফটের আগে একটা পরিকল্পনা থাকে। তবে এটা শুনে খারাপ লাগছে যে সাব্বিরকে ড্রাফট থেকে ডাকা হয়নি। আসলে এ ব্যাপারটা পুরোপুরি আমার হাতে নেই। তবুও আমি আমার মতামতটা মালিকপক্ষকে জানিয়েছি। আমাকে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স নিয়েছে হেড কোচ হিসেবে, আমাকে বলাই আমি কেবল কোচিং করাবো। তাই এ ব্যাপারে বেশি কিছু বলতে পারবো না।
প্রশ্নঃ কোচ হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাটা জানতে চাচ্ছি। জাতীয় দলে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন?
তুষার ইমরানঃ স্টেপ বাই স্টেপ এগোতে থাকি। সময় হলেই বুঝা যাবে। অবশ্যই, যদি সবকিছু মিলে যায় তাহলে কেন কাজ করবো না। তবে এখানে বেশ কিছু ব্যাপার আছে, পেমেন্ট ইস্যু আছে। যেমন ধরেন আমাদের বিদেশি কোচ নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৩৫ লক্ষ টাকায়, আমার তো এত চাহিদা নেই কিন্তু যদি এর আশেপাশে বা মোটামুটি একটা এমাউন্টের অফার আসে তাহলে কাজ করবো না কেন। বিদেশি কোচের প্রতিদিনের বেতন ১ লক্ষ টাকার উপরে। আমরা যদি সারা মাস কাজ করে ২-৩ লক্ষ টাকা না পাই তাহলে তো হবে না। দিনশেষে আমাদেরও একটা লাইফ আছে। আর ক্রিকেটার থাকা অবস্থায় জীবনটা এরকম আর অবসরে যাওয়ার পরের সময়টা অন্যরকম। অনেক স্ট্রাগল থাকে, নানা সমস্যায় পড়তে হয়। সব মিলিয়ে যদি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় তাহলে কেন কাজ করবো না।
প্রশ্নঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভকামনা।
তুষার ইমরানঃ আপনাকেও ধন্যবাদ। আমার জন্য দোয়া করবেন।