কামরুল হাসান রাকিশ »
সময়কাল টা ২০০৫ সাল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বের দরবারে আস্তে আস্তে নিজেদের পরিচয় জানান দিচ্ছিল। অল্প পরিসরে সবকিছুই ছিল, ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং। ডানহাতি পেসার, স্পিন বোলার, নান্দনিক ব্যাটিং লাইনআপ। অভাব ছিল একজন বামহাতি পেসারের। ঠিক একই সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটে বামহাতি পেসার দিয়ে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড রীতিমত শাসন করে চলেছিলেন ক্রিকেটে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে তখন বাঁহাতি পেস বোলারের চরম আকাল তখনই অভিষেক হয়েছিলো একজন সম্ভবনাময়, ক্রিকেটীয় ভাবমূর্তি সম্পূর্ণ বামহাতি পেসারের। সেই উদীয়মান তরুণ পেসার সৈয়দ রাসেল।
বোলিং এ নিজের একটা ভিন্ন স্টাইল ছিলো তাঁর। মিডিয়াম পেসের সাথে দুর্দান্ত সুইং এর কারণে ভড়কে যেত যেকোনো দানবীয় ব্যাটসম্যান। সুইংয়ে অসাধারণ দখল এ বোলার এক সময় ছিলেন দলের অপরিহার্য সদস্য। খেলার শুরুতে ব্রেকথ্রু এনে দেয়া ও রান কম দেয়ার অসাধারণ ক্ষমতা ছিলো তার। সময়ের যে কোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সেসময়ে বেশ ভালো ক্রিকেট শৈলী উপহার দিয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেটে বাঁহাতি পেস বোলিংয়ের রোমাঞ্চ প্রথম দেখিয়েছিলেন রাসেলই।
সৈয়দ রাসেলকে বলা হতো ‘বাংলার চামিন্দা ভাস’। বোলিং অ্যাকশন এবং বল সুইং করানোর দারুণ দক্ষতা থাকায় তাকে এমন খ্যাতি দেওয়া হয়েছিলো। এই রাসেলই জাতীয় দলে অভিষেকের আগে অস্ট্রেলিয়ায় বিসিবি’র এক প্রশিক্ষণ সফরে গ্রেট অজি ব্যাটসম্যান জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে পরপর ৪ বার আউট করেন। মূলত ল্যাঙ্গারই প্রথম রাসেলকে লঙ্কান গ্রেট চামিন্দা ভাসের সাথে তুলনা করেন।
অথচ সেই রাসেল ২০০৫ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর ২০০৭ সালে টেস্ট ২০১০ সালে শেষ ওয়ানডে খেলেছেন। ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গেই ক্রিকেটে তাঁর যাত্রা শুরু। তাদের বন্ধুত্বও বেশ মজবুত। কিন্তু সে সময়ের কোচ জেমি সিডন্সের কাছে তিনি একপ্রকার ব্রাত্য হয়ে ছিলেন। মাত্র ৬ টেস্টে খেলানোর পরই তার শেষ দেখে ফেলেছিলেন সিডন্স। পরে আর তার ফেরা হয়নি। মাঝখানে দুর্ঘটনায় পড়ে খেলায় বিরতি দেন তিনি। পরে অবশ্য সুস্থ হয়ে ফিরলেও দলে ফেরার রাস্তা তৈরি হয়নি। কিংবা বলা যায়, তৈরি করতে পারেন নি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সর্বশেষ আসর দিয়ে মাঠে ফিরেছেন রাসেল। লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জের হয়ে খেলেন ছয়টি ম্যাচ, উইকেট নেন আটটি। প্রিমিয়ার লিগের সর্বশেষ ম্যাচে ৩৮ রান খরচায় নেন চার উইকেট।
সৈয়দ রাসেল- জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৮৪ সালের আজকের এই দিনে ৩রা জুলাই যশোরে। ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেটই তাঁর ধ্যানধারণার প্রতীক হয়ে কাজ করেছিল, ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছিলেন খুলনা বিভাগ ও বরিশাল বিভাগের হয়ে। প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে ৬৬টি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ম্যাচে ১৮৫ উইকেট, ১১১ লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ১২৯ উইকেট এবং ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে ১৭ ম্যাচ খেলে ১২ উইকেট অর্জন করেছেন রাসেল।
ছয় বছরের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে ৫২ টি একদিনের ম্যাচ খেলে ৬১ টি মহামূল্যবান উইকেট ছিল তাঁর ঝুলিতে। খেলেছেন একাধিক টেস্ট ম্যাচও। অভিষেক ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সাথে ১০ ওভারে ৪২ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট।
বগুড়ায় শ্রীলঙ্কার সাথে জয়ের দিনে তিনি ১০ ওভারে ২৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন এর মধ্যে মেইডিন ছিলো দূই ওভার। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপে ভারত কে হারানোর ম্যাচে ১০ ওভারে ৩১ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন রাসেল।যার কারনে ভারত বেশি রান করতে পারেনি। সেই বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকার সাথে ও খুব ভালো খেলেন তিনি। ওই ম্যাচে ও তিনি ২ উইকেট নেন ৪১ রানে। জোহানেসবার্গে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ওভারেই ক্রিস গেইলকে শূন্য রানে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দিয়েছিলেন বিরাট ধাক্কা। ক্রিকেটের ছোট দৈর্ঘ্যে বড় দলের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম জয় সেই ম্যাচেই।
ক্রিকেটে অনেক দূরের পথ পাড়ি দেয়ার স্বপ্ন নিয়ে ক্রিকেট শুরু করেন সৈয়দ রাসেল। সেভাবেই এগিয়ে চলছিলেন তিনি। তবে হঠাৎই কেন জানি ছন্দপতনের দেখা মিললো। হঠাৎ করেই ক্রিকেট জোয়ার থেকে হারিয়ে গেলেন আর ফিরতে পারেননি ক্রিকেটের স্রোতে। বাংলাদেশ যখন একজন বা’ হাতি পেসারের ক্রান্তিকালে চলমান ঠিক তখনই আবির্ভাব হয় সৈয়দ রাসেলের। সৈয়দ রাসেলের বলে আহামরী পেস ছিলো না তবে নিজের বোলিংয়ে একটা শৈল্পিকতা ছিলো।সেই অবহেলিত একজন তরুণ উদীয়মান, সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার সৈয়দ রাসেলের জন্মদিন। জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা রইল।