কামরুল হাসান রাকিশ »
ক্রিকেট ভদ্র মানুষদের খেলা। খেলার ধরণসহ যাবতীয় বিষয়াবলির পর্যবেক্ষণই তা প্রতিয়মান হয়। এই ভদ্র খেলাটিকে খেলতে ভদ্র ব্যক্তির প্রয়োজন। ক্রিকেট যারা খেলে নিঃসন্দেহে সকলেই ভদ্র। সেই ভদ্রতার এক অপরুপ নিদর্শন, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে পঞ্চম বিশ্বকাপ ছিনিয়ে আনার জন্য যার অবদান অনস্বীকার্য, স্যার অ্যালান বোর্ডার পদক জয়ী, বিশ্বের প্রায় সব ক্রিকেট লীগকে জয় করা একজন অস্ট্রেলিয়ান, অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের অল-রাউন্ডার হিসেবে পরিচিত খেলোয়াড়, ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও ডানহাতি ফাস্ট মিডিয়াম বোলার হিসেবে সর্বত্র পরিচিত মুখ নাম শেন রবার্ট ওয়াটসন।
আজ থেকে বেশকিছু বছর আগে ১৯৮১ সালের আজকের এই দিনে (১৭ই জুন) অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের ইপসুইচ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিশিষ্ট অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার। ক্রিকেটকে ঠিক ক্রিকেটের মত ব্যবহার করা একজন খেলোয়াড় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যার ডাকনাম “ওয়াটো, ডেঞ্জার ম্যান” ১.৮৩ মিটার উচ্চতার একজন ভদ্র ছেলে সে হচ্ছে শেন ওয়াটসন। আজ তাঁর জন্মদিন।
ক্রিকেট ক্যারিয়ারের কোন অর্জনটি তাঁর নেই? কি জয় করেননি তিনি? খুঁজে পাওয়া বিরল!!
যার শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে ওয়াটসন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট একাডেমী’র বৃত্তিধারী খেলোয়াড় ছিলেন। নিজ প্রদেশ কুইন্সল্যান্ড ত্যাগ করার পর তাসমানিয়ার পক্ষ হয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের মাধ্যমে খেলা শুরু করেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষিক্ত হবার পর পুণরায় কুইন্সল্যান্ডে ফিরে এসে প্রাদেশিক দলে অংশগ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে ইংলিশ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে হ্যাম্পশায়ারের পক্ষ হয়ে খেলেন।
২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ক্রিকেট দলের পক্ষ হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে অভিষিক্ত হন। এরপর থেকেই একদিনের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া দলের নিয়মিত সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তিনি কিছু টেস্ট ম্যাচও খেলেছেন। জানুয়ারি, ২০০৫ সালে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয়। কিন্তু আঘাতপ্রাপ্তির কারণে প্রায়শঃই তাকে টেস্ট দলের বাইরে অবস্থান করতে হয়। এরপরও তিনি ২০০৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে সাইমন ক্যাটিচের সাথে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানরূপে মাঠে নামছেন।
ক্রিকেট তাঁকে সব দিয়েছে, দিয়েছে সন্মান, দিয়েছে শ্রদ্ধা, ভক্তি খ্যাতি। খেলোয়াড়ী জীবনে সবকিছু জয় করে তিনি কিংবদন্তি।
শেন ওয়াটসন ২০১০ সালে অ্যালান বর্ডার পদক পান। ঐদিনই তিনি বছরের সেরা একদিনের ক্রিকেট খেলোয়াড়, বছরের সেরা ২য় টেস্ট খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করেছিলেন। এছাড়াও, ২০১১ সালে অ্যালান বর্ডার পদক লাভ করেন। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের পর তিনি হচ্ছেন দ্বিতীয় খেলোয়াড়, যিনি পরপর দুইবার এ পদক লাভ করেছেন।
২০১২ সালের আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতায় তিনি ৪৯.৮০ গড়ে ২৪৯ রান সংগ্রহের পাশাপাশি বল হাতে ১১ উইকেট পান। এরফলে তাকে ম্যান অব দ্য সিরিজ ঘোষণা করা হয়। আইসিসির ক্রিকেট ইতিহাসে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ধারাবাহিকভাবে চারবার ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। এছাড়াও, ২০০৮ ও ২০১৩ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের প্রতিযোগিতায় ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট ঘোষিত হন তিনি।
ফোর্বসের মতে, ২০১২ ও ২০১৩ সালে ওয়াটসন বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত ব্যক্তি। তিনি ৫.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ উপার্জন করেন। এছাড়াও, ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত খেলোয়াড় তিনি।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানাসব ঘরোয়া লীগেও নিয়মিত মুখ ছিলেন শেন ওয়াটসন। ২০০১ সালে তাসমানিয়া দলের হয়ে যার শুরু, সর্বশেষ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০১৯ এ রংপুর রেঞ্জার্সের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন দ্য ড্যাঞ্জারম্যান খ্যাত, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা শেন ওয়াটসন।
ক্রিকেট খেলোয়াড়ের পাশাপাশি একজন ভালো মনের মানুষ তিনি, আজ এই মহান ব্যক্তিটির জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন মিস্টার জেন্টলম্যান, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটীয় স্বর্গ শেন রবার্ট ওয়াটসন।