নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
চায়ের নগরী সিলেট থেকে বেশ প্রতিভা নিয়েই বাংলাদেশের ক্রিকেটে অলোক কাপালির আগমন। যাত্রাটা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট দিয়ে ২০০০ সালে। তিন বছর পর ২০০৩ সালের ২৯ আগস্ট দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম টেস্ট হ্যাটট্রিকের নজির গড়েন অলোক। প্রায় দুই দশক (১৯ বছর) পর একই দিনে থামলো তার প্রথম শ্রেনীর ক্যারিয়ারও। মাঝে জমে রইলো অসংখ্য কীর্তিগাঁথা। বিদায়গাঁথায় উঠে আসে সবই।
জাতীয় দলে লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে তার আগমন। পরে দেখা গেলো ব্যাটিং কিংবা ফিল্ডিংটাও দুর্দান্ত করেন অলক। রেকর্ড-পরিসংখ্যান-তথ্য, এসব দিয়ে তার ব্যাটিং বিচার করা যাবে না। তার ব্যাটিংয়ের একেকটা শটে ছিলো রাজকীয় সৌন্দর্যের ছোঁয়া। লিটন দাস নামের ঘোর লাগানো এক ব্যাটসম্যানের আবির্ভাবের আগে বাংলাদেশের সবচেয়ে নান্দনিক ব্যাটসম্যান ছিলেন সম্ভবত এই তিনিই।
সবচেয়ে দর্শনীয় ছিলো তার কবজির মোচড়ে ফ্লিক কিংবা গ্লান্স। তার কাভার ড্রাইভ আর স্ট্রেট ড্রাইভ ছিলো আরও মোহনীয়। অন ড্রাইভ আর পুলগুলো ছিলো দু’চোখের শান্তি।
জাতীয় দলের হয়ে শুরুতে অলোক কাপালির ব্যাটিংটা ছিলো স্রেফ সোনায় মোড়ানো। সে সময়ের বিচারে ওরকম ব্যাটিং আর কেউ করতো না। ভারতের বিপক্ষে করাচীতে করা তার সেই শতকও আজও চোখে মায়াঞ্জন বুলিয়ে যায়।
ঘরোয়াতে অলোক কিংবদন্তি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেন ১৭২ ম্যাচ। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ। রান করেছেন ৯১৩৮। যা দেশী ব্যাটারদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ। সেঞ্চুরি আছে ২০ টা। বল হাতেও দখল করেছেন ২১৭ উইকেট। সাথে ১৮২ ক্যাচ নিয়ে তিনি হয়ে আছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একজন কিংবদন্তি।
ফিল্ডার কাপালি ছিলেন আরও দুর্দান্ত। বিশেষ করে বৃত্তের ভেতরে তার ডাইভ, তার রিফ্লেক্স, তার অ্যান্টিসিপেশন, থ্রোয়িং, এসব ছিল বিশ্বমানের। ওই সময়টায় বৃত্তের ভেতরে তার মানের দুর্দান্ত ফিল্ডার বাংলাদেশে খুব কমই ছিলো।
সর্বশেষ চার মৌসুম ধরে অবশ্য খুব একটা ভালো ছিল না তার পারফরম্যান্স। তবে অতীতের আঙিনায় খুব বেশি পেছনে হাঁটতে হবে না। ২০১৪-১৫ মৌসুমে ৮৮.৯২ গড়ে ১১৫৬ রান ও ১৫ উইকেট, ২০১৫-১৬ মৌসুমে ৭৯২ রান ও ১৮ উইকেট, ২০১৬-১৭ মৌসুমে ৮২৫ রান ও ১৫ উইকেট। এগুলো স্বাক্ষ্য দেয় দুর্দান্ত এক অলরাউন্ডার অলোকের।
এবার লাল বল আর সাদা পোশাকটা তুলে রাখলেন। ১৭ ম্যাচের এক টেস্ট ক্যারিয়ার তার, সবশেষটি খেলেছেন সেই ২০০৬ সালে। টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে তার সম্পর্ক চুকে গেছে আসলে অনেক আগেই। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম শ্রেণীর সঙ্গেও ইতি টানাও হয়ে গেলো। তবে খেলে যাবেন সীমিত ওভারের ক্রিকেট। আরেকটু দেখাবেন তার সৌন্দর্য্য!
জাতীয় দলের আশা বাদ দিয়ে বছরের পর বছর নিবেদন নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে গেছেন, সিলেটের ক্রিকেটকে পরম মমতায় লালন করেছেন। এবার তরুণদের সুযোগ করে দিতেই সরে দাঁড়ালেন। বিদায় ঘোষণায়ও সেটা বলে দিলেন। তার নিবেদন দেশের ক্রিকেটের জন্য অনেক।
অলোক বলেন, “আমি মনে করি এখন তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য আরো বেশী প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার সুযোগ করে দেওয়া উচিত । তরুণ ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে আসার জন্য এবং আমার পরিবারকে বেশী সময় দেওয়ার লক্ষ্যে আমি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ২০২২/২৩ মৌসুম থেকে শুধুমাত্র লিমিটেড ওভার ক্রিকেট অংশগ্রহণ করবো।”
সবাই তো আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তারকা-মহাতারকা হতে পারেন না। দেশের ক্রিকেট আকাশেও নক্ষত্র লাগে। অলক কাপালী আমাদের সেই নক্ষত্র কিংবা ধ্রুবতারা। লাল সবুজের সেই ধ্রুবতারার পরবর্তী জীবনের জন্য শুভকামনা।