সাকিব শাওন »
অ্যাডিলেড মহাকাব্য থেকে শুরু করে কিউইদের বিপক্ষের বিখ্যাত সিরিজ জয় সবকিছুতেই ছিল তার অবদান। দ্রুতগতির এই পেস বোলার ধারাবাহিক ভাবে পেস ও বাউন্সার করার ক্ষেত্রে ওস্তাদ। রুবেল হোসেন ২০০৭ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে অভিষিক্ত হন। জাতীয় ক্রিকেট লিগে ভালো ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলে মনোনীত হন। তারপর অল্প কিছুদিন পরেই ডাক পান জাতীয় দলে। এখনো পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে শিকার করেছেন ১৯০ উইকেট। ক্যারিয়ার শেষে নিজের নামের পাশে দেখতে চান ৪০০ উইকেট।
বর্তমানে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর কারণে মাঠের ক্রিকেটাররা থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফ সবাই এখন ঘরবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। আর এই অবসর সময়টাতে নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডটকমের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সাথে নিজের বর্তমান ক্যারিয়ার, ক্রিকেটের বিভিন্ন দিক এবং নিজের ক্রিকেটে উঠে আসার গল্প নিয়ে কথা বলেছেন পেসার রুবেল হোসেন।
নিউজ ক্রিকেটঃ কোয়ারেন্টাইনের দীর্ঘ এই সময়টা কিভাবে অতিবাহিত করছেন?
রুবেল হোসেনঃ আসলে লম্বা একটা সময় ধরেই তো ঘরের ভেতরে রয়েছে, ছেলের সাথে খেলাধুলা করছি, পরিবারকে সময় দিচ্ছি। আর বাসার মধ্যেই ফিটনেসের জন্য টুকটাক ছোট ছোট যে সব কাজ রয়েছে সেগুলা করে যাচ্ছি।
নিউজ ক্রিকেটঃ জাতীয় দলের পেসার রুবেল হোসেন হওয়ার গল্পটা কেমন ছিলো?
রুবেল হোসেনঃ আমি ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেট খেলতাম কারণ ক্রিকেটের প্রতি কেনো জানি আমার একটা আলাদা টান ছিলো। এরপর ইন্টার স্কুল ক্রিকেট খেলতাম। বাগেরহাটের লিগ, খুলনার লিগ এগুলোও খেলতাম। তারপর সাতক্ষীরাতে একবার পেসার হান্ট হয় আমি সেখানে অংশগ্রহণ করি এবং সবার মধ্যে থেকে কিভাবে কি করে যেনো প্রথম হয়ে গেলাম, জোরে বোলিং করার কারণে হয়তো কাজটা আমার জন্য সহজ হয়েছিলো। মূলত পেসার হান্টের মাধ্যমেই আমি সকলের নজরে আসি। তারপর সারোয়ার ইমরান স্যার আমাকে একটা ক্যাপ দিলেন এবং বললেন তুমি খুব ভালো করেছো তোমাকে পরে আবার আমরা ডাকবো। এরপর আমাকে আবার ডাকলো একটা ক্যাম্পে সেখানে পুরা বাংলাদেশ থেকে যারা পেসার হান্টে প্রথম হয়েছে তারা ছিলো। সেই বাছাই ক্যাম্পে মোট ২৬ জন ছিলো, তাদের মধ্যে থেকে আমি আবার প্রথম স্থান লাভ করি। এরপর অনুর্ধ-১৯ আমি আর টিপু নামে একটা ছেলে সুযোগ পাই। তারপর আমি বিশ্বকাপ ও খেলেছি অনুর্ধ-১৯ দলের হয়ে। এরপর বগুড়াতে একদিন একাডেমীর হয়ে একটা ম্যাচ খেলছিলাম তখন হঠাৎ করে খবর পেলাম জাতীয় দলের স্কোয়ার্ডে আমি ডাক পেয়েছি। তখন অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়েছিলো সেটা বলে বোঝানো সম্ভব না। তারপর ধীরে ধীরে আজকে এ পর্যন্ত আসতে সক্ষম হয়েছি।
নিউজ ক্রিকেটঃ ড্রেসিংরুমে আপনার কোন ক্রিকেটারের সাথে বেশি আড্ডা হয়?
রুবেল হোসেনঃ আসলে খেলার সময় ড্রেসিংরুমের পরিবেশ টা সবসময়ের জন্য অন্যরকম থাকে। কারণ খেলার পরিস্থিতির উপর সবকিছু নির্ভর করে। তবে বলতে গেলে শফিউল, তাসকিন, রিয়াদ ভাই, তামিম ভাই সবার সাথেই কম বেশি আড্ডা দেওয়া হয়।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার ক্যারিয়ারের সেরা উইকেট কোনটি আপনার কাছে?
রুবেল হোসেনঃ শচীন টেন্ডুলকার। আমি আগেও কয়েকবার বলেছি ক্যারিয়ারে অনেক ভালো ভালো উইকেট আমি পেয়েছি তবে শচীনের উইকেটটি আমার ক্যারিয়ারের সেরা উইকেট বলে আমি মনে করি। কারণ শচীন তো শচীনই।
নিউজ ক্রিকেটঃ ক্যারিয়ারে তো অনেক ব্যাটসম্যানের সামনেই বল করেছেন, কখনো কি কোন ব্যাটসম্যানের সামনে বল করতে নিজের কাছে কষ্টকর বা ভীতিকর মনে হয়েছে?
রুবেল হোসেনঃ না আসলে এরকম কখনো কিছু মনে হয়নি। তবে দেখা গেলো যখন ব্যাটসম্যান পাওয়ারে ব্যাট করছে তখন একটু ঘাবড়ে যাই কিন্তু কখনো ভয় পাই না। বিশ্বাস রাখি সবসময় নিজের উপর। আর আমরা যারা ডেথ ওভারে বল করে থাকি তাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জের বিষয় আছে ধরেন ১২ বলে ২০ রান দরকার। সেক্ষেত্রে কখনো আমরা সফলতা পাই আবার কখনো পাইনা। সফলতা পেলে নায়ক ব্যর্থ হলে খলনায়ক।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনি নিজে তো টুকটাক গান গাইতে পারেন সেক্ষেত্রে আপনার প্রিয় গায়ক কে?
রুবেল হোসেনঃ গান আমি খুবই পছন্দ করি সবসময়ের জন্য। সেক্ষেত্রে বাচ্চু ভাই, জেমস ভাই তারা আমার খুবই পছন্দের। তাদের গান আমি খুব ছোটবেলা থেকেই শুনতাম এখনো শুনি। আর আমি বাংলা গানের একজন ভক্ত।
নিউজ ক্রিকেটঃ দেশের মধ্যে আপনার প্রিয় ক্রিকেটার কে?
রুবেল হোসেনঃ সাকিব আল হাসান। কারণ তার খেলা খুবই ভালো লাগে আমার। সাকিব ভাইয়ের যে অবদান রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে এমন অবদান খুব কম ক্রিকেটারেরই রয়েছে। অনেক ম্যাচ বা অনেক সিরিজ রয়েছে যেখানে সাকিব ভাই একাই জয়ের ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন। আমি নিজে দলের সাথে ছিলাম সামনে থেকেই দেখেছি সবকিছু।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কষ্টদায়ক ম্যাচ কোনটি ছিলো?
রুবেল হোসেনঃ আমি প্রথমে নিদহাস ট্রফির কথা বলবো। আমার কারণেই ফাইনালের ঐই ম্যাচটি হেরেছিলো বাংলাদেশ। সেদিন খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম আমি, নিজের শেষের ওভারটা ভালো করতে পারিনাই। যদি ভালো করতে পারতাম তাহলে ম্যাচের চিত্র অন্যরকম হতে পারতো। আরেকটা ম্যাচ ছিলো ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালের ম্যাচটি। আমরা হেরে যাই ২ রানে যদিও আমি দলের বাইরে ছিলাম। সেদিনও খুব কষ্ট পেয়েছিলাম আমি।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনি তো পেসার সেক্ষেত্রে আপনার পেস বোলিংয়ে কি কেউ আইডল রয়েছেন?
রুবেল হোসেনঃ না আসলে আইডল বলতে তেমন কেউ নেই তবে দেশের বাইরে ফ্লিনটফের বোলিং ছোটবেলাই ভালো লাগতো আমার। আর দেশের মধ্যে মাশরাফি ভাইকে ভালো লাগতো, তার থেকে অনেক কিছুই শিখেছি আমি।
নিউজ ক্রিকেটঃ আজকের রুবেল হোসেন হয়ে উঠার পিছনে সবথেকে বড় অবদান কার বলে আপনি মনে করেন?
রুবেল হোসেনঃ আমি আমার মায়ের কথা বলবো কারণ আমার আব্বা প্রথমে আমার খেলাকে সাপোর্ট করতেন না। মা একাই আমাকে সবকিছুতে সহযোগিতা করতেন যার কারণে আজকে আমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আর সাথে সারোয়ার ইমরান স্যারের ও অবদান রয়েছে। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তিনি আমাকে অনেক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন।
নিউজ ক্রিকেটঃ বর্তমানে করোনা ভাইরাস প্রকোপের কারণে দেখা গেছে আপনি অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন এই কাজটি কি কাউকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন?
রুবেল হোসেনঃ না আমি কাউকে দেখে অনুপ্রাণিত হয় নি। এই সময়ে এই কাজটি করা আমার দায়িত্ব। মানবিক দিক চিন্তা করেই আমি এগিয়ে এসেছি। আমার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা দিয়েই অসহায়দের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি। আমাদের অনেক ক্রিকেটারই এগিয়ে এসেছেন এই খারাপ সময়ে। তাদের দেখে হয়তো অনেকে যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসবে।
নিউজ ক্রিকেটঃ ক্যারিয়ার শেষে নিজের নামের পাশে কত উইকেট দেখতে চান?
রুবেল হোসেনঃ আমি আমার ক্যারিয়ার শেষে নিজের নামের পাশে ৪০০ উইকেট দেখতে চাই। এটা অনেক বড় কিছু হলেও আশা করি আমি পারবো। আর স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়, মানুষ তার স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকে।
নিউজ ক্রিকেটঃ এ বছর টি-২০ বিশ্বকাপ রয়েছে সেখানে বাংলাদেশের সম্ভবনা কতটুকু দেখছেন?
রুবেল হোসেনঃ আশা তো করি অবশ্যই ভালো কিছু করবে, দেখা যাক আল্লাহ ভরসা।
নিউজ ক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডটকমের
পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
রুবেল হোসেনঃ আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ এবং একই সাথে নিউজ ক্রিকেটের সকল পাঠকদের জানাই শুভেচ্ছা।