দুর্জয় দাশ গুপ্ত »
বাংলাদেশ জাতীয় ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান। ২০০৭ সাল থেকে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের জন্য লড়ে যাচ্ছেন তিনি। এমনই আরেক লড়াকু, ক্ষ্যাপাটে তামিমকে পেয়েছে বাংলাদেশ। বলছিলাম অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমের কথা। তামিম ইকবাল খানের মত তিনিও বাংলাদেশ যুব দলের ইনিংসের গোড়াপত্তন করেন। সিনিয়র তামিমের সাথে অনেক মিল জুনিয়র তামিমের। তিনিও যে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বেশ পারদর্শী।
এবার নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কম বিশ্বকাপজয়ী যুবা তামিমের সাথে কথা বলেছে। জানতে চেয়েছে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো।
নিউজক্রিকেটঃ ক্রিকেটে হাতেখড়ি কিভাবে?
তামিমঃ আসলে একদম ছোটবেলা থেকেই। ক্লাস থ্রি’তে পড়া অবস্থায়। আমার বাসার পাশে একটা বড় ভাই ছিলো, সজল ভাই। উনি সবসময় অনুশীলন করতো। উনাকে দেখেই আগ্রহটা বাড়তে থাকে। পড়াশোনার পরে বিকেলে সজল ভাইয়ের কাছে যেতাম। এভাবেই শুরু।
নিউজক্রিকেটঃ বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে প্রতিযোগিতা কেমন থাকে?
তামিমঃ বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে চ্যালেঞ্জটা বেশি থাকে। আমি বগুড়ার হয়ে অনূর্ধ্ব ১৪-১৫-১৬ খেলেছি আবার বিভাগীয় দলের হয়েও খেলেছি। তখন আমার পারফরম্যান্স আশানুরূপ ছিলো না। খুব বেশি ভালো খেলতে পারি নি। মোটামুটি পারফরম্যান্স ছিলো। এজন্য জাতীয় ক্যাম্পে ডাক পাইনি। কিন্তু যখন শেষবার অনূর্ধ্ব -১৮ খেললাম তখন হান্নান স্যার (হান্নান সরকার) ছিলেন আমাদের নির্বাচক। আমার পারফরম্যান্স খুব একটা ভালো ছিলো না। পরে এক বছর ভালো করে রাজশাহীতে অনুশীলন করলাম। এরপর ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে সুযোগ পাই। উত্তরা দলের হয়ে সে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান ছিলো আমার। এরপর আমাকে বাছাই করলেন। এভাবেই অনূর্ধ্ব -১৯ দলে ডাক পাই।
নিউজক্রিকেটঃ বিশ্বকাপের জন্য কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন?
তামিমঃ সত্যি কথা বলতে ভাই যখন আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পাই তখনকার সময়টা আমার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিলো। কারণ তখন কারো সাথে আমার পরিচয় ছিলো না, কোন কোচও আমার পরিচিত ছিলেন না। সবার সাথে মানিয়ে নেওয়াটা কঠিন ব্যাপার ছিলো। প্রথম আমরা দেড় মাসেক একটা ক্যাম্প করেছিলাম এরপর একটু একটু করে সবার সাথে মিশতে থাকি। যখন এশিয়া কাপের জন্য ডাক পেলাম তখন থেকেই পরিকল্পনা ছিলো দেশের জন্য ভালো কিছু করার। সুযোগটা কাজে লাগানো বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছিলো। কারণ অনেক ব্যাকআপ প্লেয়ার থাকে। কাজেই খারাপ করলে বাদ পড়ে যাবার শঙ্কা থাকে। তাই নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করেছি মানসিকভাবে। আর বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে আমাদের লম্বা সময়ের একটা পরিকল্পনা ছিলো। বিশ্বকাপের আগে আমরা দেশ এবং দেশের বাইরে অনেকগুলো সিরিজ খেলেছিলাম তাই মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়নি।
নিউজক্রিকেটঃ বিশ্বকাপের আগে দেশের বাইরের সিরিজগুলো কতটা সাহায্য করেছে মানিয়ে নিতে?
তামিমঃ এই ব্যাপারটা অনেক সাহায্য করেছে। আমরা ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাতে ট্যুর করেছি। ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন আমাদের থেকে অনেক ভিন্ন। এসব দেশে খেলে আসার পরে আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যায়। ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডকে বেশি ম্যাচ খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে আমরা খুব সাহায্যে পেয়েছি। আর মানিয়ে নেওয়াটা হয়েছে আরো সহজ। এগুলো ভবিষ্যতেও অনেক সাহায্য করবে।
নিউজক্রিকেটঃ বিশ্বকাপ জয় করে আসলেন। এখন কিভাবে পরিকল্পনা করছেন?
তামিমঃ জাতীয় দলে ঢুকতে হবে এভাবে এখনো কিছু চিন্তা করিনি। বিশ্বকাপের পরে জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলেছি, বিসিএলে খেলেছি। আমরা বিশ্বকাপ জয় করে আসায় ভালো ফর্মে ছিলাম, সময়টা বেশ ভালো ছিলো। কিন্তু এরপরে আর খেলার সুযোগ পাচ্ছি না। কারণ করোনাভাইরাসের জন্য খেলাধুলা সব বন্ধ হয়ে আছে। বিশ্বকাপের পরে এখন এভাবেই পরিকল্পনা করবো যে যেহেতু অনূর্ধ্ব-১৯ লেভেল শেষ এখন পরবর্তী পর্যায়ের জন্য নিজেদের তৈরি করবো। স্কিল, ফিটনেসের দিকে নজর দিবো। এভাবেই পরিকল্পনা সাজাবো।
নিউজক্রিকেটঃ এখন তো বয়স খুবই কম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত মনে হচ্ছে নিজেকে?
তামিমঃ অবশ্যই না। অনূর্ধ্ব-১৯ লেভেল আর জাতীয় লেভেলে অনেক পার্থক্য। আমাদেরকে সেভাবে তৈরি করতে হবে। তাই এখন থেকেই সবার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত এটা ঠিক। সবকিছু ঠিক করে একদম যোগ্য হয়েই যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেতে পারি সে লক্ষ্যে এগোচ্ছি।
নিউজক্রিকেটঃ সে দিক থেকে মানসিকতা কি তৈরি হয়েছে?
তামিমঃ আসলে সেটা নির্ভর করছে ফরম্যাটের উপরে। এখানে তিনটা ফরম্যাট। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্য একটা পরিকল্পনা করতে হবে আবার লম্বা সংস্করণের জন্য আরেকটা পরিকল্পনা। আমি মূলত তিনটা ফরম্যাটের জন্যই নিজেকে তৈরি করতে চাই। মানসিকতার কথা যেহেতু বলেছেন তাই বলবো নিজেকে যতটা চাপমুক্ত রাখা যায় সেভাবেই তৈরি করার চেষ্টা করছি। সুযোগ আসলে সে সুযোগটা যেন কাজে লাগাতে পারি ভালো ভাবে। মাঠের ক্রিকেট এখন বন্ধ থাকায় ফিটনেসে জোর দিচ্ছি।
নিউজক্রিকেটঃ ঘরে বসে কিভাবে কাজ করছেন?
তামিমঃ ফিটনেসের জন্য কিছু গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে সেগুলো ফলো করছি। আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ট্রেনার লাইভে এসে কিছু জিনিস দেখিয়ে দিচ্ছেন সেগুলো করছি। যেহেতু ক্রিকেট বন্ধ তাই এভাবেই কাজ করতে হবে। মাঠের ক্রিকেট শুরু হলে তখন বিশেষ কিছু জিনিস নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে।
নিউজক্রিকেটঃ ক্রিকেটে আদর্শ কে?
তামিমঃ আমি একদম ছোটবেলা থেকেই তামিম ভাইয়ের খেলা দেখতাম। উনার ব্যাটিং ভালো লাগে। উনার এগ্রেসিভ ব্যাটিংটা আমার পছন্দের। তামিম ভাইকে দেখেই শুরু করেছিলাম। উনিই আমার আদর্শ। আর দেশের বাইরে বলতে হলে বলবো কুমার সাঙ্গাকারার কথা।
নিউজক্রিকেটঃ নিজেকে নিয়ে কতটা আশাবাদী ভবিষ্যতের জন্য?
তামিমঃ বিশ্বকাপ জয় করে আসার পরে সবার আত্মবিশ্বাসটা অনেক ভালো অনেক। বিশ্বকাপে ভালো করার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে এবং ভালো দিক হচ্ছে আমাদের সবার ভেতরেই সে ইচ্ছেটা আছে। চেষ্টা করবো অবশ্যই ভালো পর্যায়ে সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দেবার।
নিউজক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
তামিমঃ আপনাকেও ধন্যবাদ এবং নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের সকল পাঠকদের জন্য শুভেচ্ছা।