সাকিব শাওন »
ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ততা ছিলো জাহানারা আলমের। ইন্টার স্কুল পর্যায়ে তিনি ভলিবল, হ্যান্ডবল খেলতেন। তারপর খুলনা ডিভিশনের কোচ প্রয়াত শেখ সালাউদ্দিনের হাত ধরে ক্রিকেটে আসা তার। এরপর দলে এসেছেন দেখেছেন আর সব জয় করেছেন। ২০১০ সালে চীনের গুয়াংজুতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসের মহিলা ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় চীন জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক রৌপ্যপদক লাভ করে বাংলাদেশ নারী দল। জাহানারা সেই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের অন্যতম একজন খেলোয়াড় ছিলেন। ২০১৫ সালে টি-২০ ফরম্যাটে অধিনায়কের দায়িত্ব পান জাহানারা আলম। সর্বশেষ বাংলাদেশ নারী দল এশিয়া কাপে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই ম্যাচেও জাহানারা ছিলেন দলের অন্যতম একজন খেলোয়াড়। ম্যাচ জয়ের শেষ রানটি আসে তারই ব্যাট থেকে।
বর্তমানে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর কারণে মাঠের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফরা সবাই ঘরবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। আর এই অবসর সময়টাতে নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডটকমের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সাথে নিজের বর্তমান ক্যারিয়ার এবং ক্রিকেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের পেসার জাহানারা আলম।
নিউজ ক্রিকেটঃ কোয়ারেন্টাইনের এই সময়ে কি করছেন?
জাহানারা আলমঃ রোজা রাখি, নামায-কালাম করি, আর ছোট ছোট কিছু অনুশীলন করি, বাসার ভেতরেই যত টুকু করা যায় আরকি। যেহেতু পরিবারের সাথে নেই সে কারণে রান্নাটাও নিজেকে করতে হয়।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার ক্রিকেট শুরুর গল্পটা কেমন ছিলো?
জাহানারা আলমঃ আমি ইন্টার স্কুল লেভেলে হ্যান্ডবল, ভলিবল খেলতাম। তারপর ২০০৭ সালে শুনলাম সারা বাংলাদেশ থেকে একটি জাতীয় নারী ক্রিকেট দল গঠন করা হবে। প্রথমে ডিভিশন দলের হয়ে খেলতে হবে। আমি সেখানে ডিভিশন দলের হয়ে পুরো দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করি। তারপর জাতীয় দলে ডাক পাই। আর শুরু থেকেই পরিবারের সাপোর্ট ছিলো আমার সাথে, যে কারণে কাজটা আমার জন্য একটু হলেও সহজ হয়েছিলো।
নিউজ ক্রিকেটঃ ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই কি বোলিং করতেন?
জাহানারা আলমঃ না আমার শুরুই হয়েছিলো একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে। এরপর ক্যাম্পের প্রথম মাসে বোলিং প্র্যাকটিস করি। সেখানে পেস বোলিংটা ভালো হতে থাকলো, এরপর ডিভিশন খেলায় ১৩ উইকেট শিকার করি আমি। তারপর থেকেই বোলার হিসেবে পরিচিতি লাভ করি।
নিউজ ক্রিকেটঃ বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে টি-২০ তে আপনার পাঁচ উইকেট শিকার এটা কতটা আনন্দদায়ক আপনার কাছে?
জাহানারা আলমঃ অবশ্যই, অনেক আনন্দের। তখন আমি বুঝিনি আসলে কি আমি পাঁচ উইকেট পেয়েছি। ঐ দিন যখন প্রথমে চার উইকেট পেলাম তখনই অনেক খুশি হয়ে গিয়েছিলাম, কারণ ক্যারিয়ারে তিন উইকেট অনেক বার পেয়েছি কিন্তু চার উইকেট কখনো পাইনি। যখন চার উইকেট পেলাম খুব ভালো লাগছিলো নিজের কাছে। তারপর আরো একটা উইকেট পেয়ে গেলাম। সবমিলিয়ে অন্যরকম এক অনুভূতি।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার প্রিয় পোশাক কি?
জাহানারা আলমঃ আসলে আমার প্রিয় পোশাক শাড়ী। আমি শাড়ি পরতে খুবই পছন্দ করি।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনি কোন খাবারটি সব থেকে ভালো রান্না করেন?
জাহানারা আলমঃ আমার সবচেয়ে পছন্দের খাবার বিরিয়ানি। আর এই বিরিয়ানি রান্নাটাই আমি খুবই ভালোভাবে করতে পারি।
নিউজ ক্রিকেটঃ আবার যদি অধিনায়ক হওয়ার প্রস্তাব পান তাহলে কি করবেন?
জাহানারা আলমঃ আগে যখন অধিনায়ক ছিলাম তখন আমি এই দায়িত্বটি খুবই উপভোগ করেছি, কারণ দেশের হয়ে অধিনায়কত্ব করতে পারাটা অনেক বড় একটি গর্বের বিষয়। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বিসিবি যদি মনে করে আমাকে অধিনায়কের এই দায়িত্বটি আবার দিবে তাহলে অবশ্যই সেটি আমি গ্রহণ করবো।
নিউজ ক্রিকেটঃ আইপিএলের লম্বা সময়টা কেমন ছিলো আপনার জন্য?
জাহানারা আলমঃ আমার জন্য আইপিএল অন্যরকম একটা সফর ছিলো। ফাইনাল খেলেছি তবে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে নিজের কাছেও অনেক ভালো লাগতো। আরেকটি বিষয় হলো সেখানে বিশ্বের অনেক দেশের খেলোয়াড়ই ছিলো তাদের সাথে একই ড্রেসিংরুম শেয়ার করা, ক্রিকেটের অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা সবমিলিয়ে উপভোগ করেছি। আইপিএল খেলে নিজেই অনেক কিছু শিখেছি।
নিউজ ক্রিকেটঃ প্রিয় নায়ক কে আপনার?
জাহানারা আলমঃ অনেক নায়কই তো রয়েছে পছন্দের। তবে সেক্ষেত্রে শাহরুখ খান, সালমান খান, আমির খান এনাদেরকে ভালো লাগে আমার।
নিউজ ক্রিকেটঃ এশিয়া কাপ জয়লাভের পর মাঠে আপনাদের মনের অবস্থা কেমন হয়েছিলো?
জাহানারা আলমঃ অসাধারণ একটা অনুভূতি, যেটা আগে কখনো এতো বেশি হয়নি। ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম ভাবতেই অনেক ভালো লাগে। তারপর বিসিবি থেকে শুরু করে সবার কাছ থেকেই অনেক শুভেচ্ছা পেয়েছিলাম। সেদিন ক্যারিয়ারের স্মরণীয় একটি দিন ছিলো।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার আইডল কে?
জাহানারা আলমঃ মাশরাফি ভাইয়া আমার আইডল। উনাকে সবসময় ফলো করি আমি।
নিউজ ক্রিকেটঃ করোনার এই কঠিন সময়ে অসহায়দের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, এটা কি কাউকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন?
জাহানারা আলমঃ প্রথমেই দেখলাম অনেক ক্রিকেটার অসহায় দরিদ্রদের জন্য এগিয়ে আসছেন, তারপর কয়েকটি সংগঠনকে দেখলাম কাজ করতে। বিভিন্ন ব্যক্তিকেও দেখেছি নিজ উদ্যোগে অসহায় গরিবদের জন্য কাজ করতে। তারপর আমি ভাবলাম, আমার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়ে অসহায়দের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো উচিত, সেটা ভেবেই আমি অসহায়দের সাহায্য করেছি এবং এখনো করে যাচ্ছি।
নিউজ ক্রিকেটঃ বিয়ে করবেন কবে?
জাহানারা আলমঃ দেখেন জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে সবকিছুই আল্লাহর হাতে। যেটা আমরা চাইলেও ইচ্ছা করে কিছু করতে পারবো না। তবে ইচ্ছা আছে ওডিআই বিশ্বকাপ খেলার পরে বিয়ে করার, দেখা যাক কি হয় আল্লাহ ভরসা।
নিউজ ক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডটকমের
পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
জাহানারা আলমঃ আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ এবং একই সাথে নিউজ ক্রিকেটের সকল পাঠকদের জানাই শুভেচ্ছা।