দুর্জয় দাশ গুপ্ত »
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তরুণ ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখের। মূলত ঢাকা লিগে নজরকাড়া পারফরম্যান্স দিয়েই আলোচনায় এসেছিলেন তিনি৷ এরপর ডাক মিলে জাতীয় দলে। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েই দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান৷ ভারতের বিপক্ষে তার সেই ৮১ রানের ইনিংসটাই জানান দিয়েছে বাংলাদেশেকে দু’হাত ভরে দিতে চান নাঈম। অথচ সেই নাঈমই মাধ্যমিকে এক সাবজেক্টে ফেল করেছিলেন।
মুঠোফোনে কথা হলো জাতীয় দলের তরুণ তুর্কি নাঈম শেখের সাথে৷ জানিয়েছেন অনেক অজানা গল্প।
পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকারটা তুলে ধরা হলো।
নিউজক্রিকেটঃ কিভাবে ক্রিকেটে আসলেন?
নাঈম শেখঃ আসলে ক্রিকেট খেলা শুরু করি আমার বড়ভাইকে দেখে। তাকে দেখেই শুরু করি। আমার বড় ভাই খুব ভালো খেলতো, আমি তার মত পারতাম না। তার দেখাদেখিই ক্রিকেটে আসা হয় আমার। আমি পাড়ার ক্রিকেট থেকে শুরু করে যেখানেই সুযোগ পেতাম সেখানেই খেলতাম। স্কুল ফাঁকি দিয়েও আমি ক্রিকেট খেলেছি। ছোট হলেও বড়দের সাথে খেলতাম৷ দলে সবচেয়ে ছোট প্লেয়ার আমিই ছিলাম। মাধ্যমিকে আমি ফেল করেছিলাম একটা সাবজেক্টে। একটা সময় বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট খেলা শুরু করি৷ অনূর্ধ্ব-১৮ খেলেছি সেখানে ভালো করে অনূর্ধ্ব-১৯ এর ক্যাম্পে ডাক পাই। এসব জায়গায় প্রতিযোগিতা অনেক। ভালো করতেই হবে। সবসময়ই আমি ভালো করার চেষ্টা করেছি। নেপাল আর আফগানিস্তানের সাথে হোম খেললাম অনূর্ধ্ব-১৯ এর হয়ে। এরপর মালেশিয়াতে এশিয়া কাপ খেললাম। গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচে ফিফটি করলাম। ঐখান থেকেই শুরু। বিশ্বকাপেও মোটামুটি ভালোই খেলেছি। এভারেজ ছিলো ২৪-২৫ এর মত বিশ্বকাপে। আমি যখন বিশ্বকাপ খেলতেছি তখন ডিপিএলের নিলাম হয়। একটা ভয় কাজ করছিলো দল পাবো কিনা। পরে লিজেন্ড অব রূপগঞ্জ আমাকে দলে নেয়। মজার ব্যাপার হলো ওদের স্পিনার প্রয়োজন ছিলো। তাই ওরা নাঈম হাসানকে দলে নিতে চাচ্ছিলো। কিন্তু নাঈমকে নিতে গিয়ে আমাকে দলে নিয়ে নেয়। ওদের সাথে যোগ দেওয়ার পরে জানতে পেরেছে আমি ব্যাটসম্যান৷ আমি খুব হতাশ ছিলাম তখন। কারণ দলে খুব অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা ছিলো। তাই ম্যাচে সুযোগ পাবো কিনা এমন একটা চিন্তা ছিলো। তখন মুশফিক ভাই আসছে (মুশফিকুর রহিম)। মুশফিক ভাই অনেক আগে থেকেই আমাকে চিনতো এবং আমাকে খুব হেল্প করে। মুশফিক ভাই আসার পরে শুনলো যে আমি ম্যাচ খেলি নাই, দুই-তিনটা ম্যাচ হয়ে গেছে কিন্তু আমি সুযোগ পাই নাই। এরপর চতুর্থ ম্যাচে ডিপিএলে আমার অভিষেক হয়। অভিষেক ম্যাচে ৩৩ রান করেছিলাম, এরপরের ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে গিয়েছিলাম। শাইনপুকুরের বিপক্ষে এর পরের ম্যাচে আবার ৯৭ রান করেছিলাম। এভাবেই আর কি সবার নজরে আসি। ১২ টা ম্যাচ খেলে ৪৬ এভারেজে প্রিমিয়ার লিগে প্রায় সাড়ে পাঁচশ রান করেছিলাম। আর আমি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করি যেটার কারণে সবাই আমার দিকে বিশেষ ভাবে নজর দিয়েছে। ঐখান থেকেই শুরু আরকি।
নিউজক্রিকেটঃ আপনার কি মনে হয় জাতীয় দলে সুযোগের জন্য আপনারা যেভাবে খেলে আসছেন এটাই যথেষ্ট?
নাঈম শেখঃ আসলে ভাই আমি এভাবে কখনো চিন্তা করিনা৷ সবসময় চিন্তা করি আরো ভালো করতে হবে। আমার কথা যদি চিন্তা করি আমি তো এখনো খুব বেশি ম্যাচ খেলিনি৷ এভারেজ নিয়ে এখনো এত ভাবছি না। আর টি-টোয়েন্টিতে আমার লক্ষ্য হচ্ছে ১৩০-১৪০ স্ট্রাইক রেটে খেলতে চাই৷ ওয়ানডেতে অভিষেক হলেও ব্যাটিং করার সুযোগ হয়নি। জাতীয় দলে আসার পরে সিনিয়রদের কাছ থেকে খুব ভালো হেল্প পাচ্ছি। তাদের দেখে শিখছি। এখন খেলাটা বুঝতে যেন বেশি সময় না লাগে সেটাই চেষ্টা করছি।
নিউজক্রিকেটঃ আপনি জাতীয় দলে শুরুতে সুযোগ পেয়েছেন টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট হিসেবে। সে হিসেবে বাকি দুই ফরম্যাট নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
নাঈম শেখঃ আমি এখন টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে নিয়েই চিন্তা করছি৷ একদম মানসিক দিক থেকে শুরু করে অনুশীলন বলেন বা যা’ই বলেন সবকিছুই এই দুই ফরম্যাট নিয়ে করতেছি৷ সাদা বল নিয়েই আমার প্ল্যানিং। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে আলাদাভাবে একটা প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। আর বিশেষ করে ফিটনেসেরও একটা ব্যাপার থাকে। আমি আপাতত সীমিত ওভারের ক্রিকেট নিয়েই চিন্তা করছি।
নিউজক্রিকেটঃ বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট খেলেই তারপর ধাপে ধাপে জাতীয় দলে এসেছেন৷ আপনি নিজেও বলেছেন আপনার আত্মবিশ্বাস ছিলো। প্রতিটা ক্রিকেটারেরই কি এমন আত্মবিশ্বাস থাকা উচিত? কি মনে করেন?
নাঈম শেখঃ হ্যাঁ, সেটা তো অবশ্যই৷ আত্নবিশ্বাস ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। তাই এটা থাকতেই হবে।
নিউজক্রিকেটঃ সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে যদি জানতে চাই ড্রেসিংরুমে তারা কতটা সাহায্য করেন?
নাঈম শেখঃ আসলে আমি মনে করি সিনিয়রদের থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। যেমন তামিম ভাই (তামিম ইকবাল) যে লাইভ শো’টা করেছে সেখানে ভিরাট কোহলি আর তামিম ভাইয়ের কথাগুলো থেকে আমার অনেক কিছু জানার এবং বুঝার আছে। তারা কিভাবে সবকিছু সামলে এই জায়গাটায় এসেছে এগুলো জানতে পারলে কাজটা আমাদের মত তরুণদের জন্য সহজ হয়ে যায়। আমার বেলায়ও ড্রেসিরুম থেকে বলা হয়েছিলো আস্তে আস্তে শুরু করতে, আমার স্বাভাবিক খেলাটা খেলার৷ তাড়াহুড়ো না করতে। আমিও সেটাই করেছি।
নিউজক্রিকেটঃ ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি’র কাছ থেকে কতটুকু সাপোর্ট পাচ্ছেন?
নাঈম শেখঃ নেইল আমাকে নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করছে। প্রিমিয়ার লিগ শুরু হওয়ার আগেও আমাকে একটা কাজ দিয়েছে। ফুটওয়ার্ক নিয়েও কিছু কাজ করেছি। আসলে ১৪-১৫ দিনে সবকিছু বুঝা সম্ভব না। তার জন্য সময় লাগে৷ আমিও কাজ শুরু করেছি৷ যদিওবা এখন মাঠের বাইরে তবে মাঠে ফিরে আবারো কাজ শুরু করবো।
নিউজক্রিকেটঃ লম্বা সময় ধরে মাঠের বাইরে আছেন৷ মানসিকতায় এর কোন প্রভাব পড়ছে কি?
নাঈম শেখঃ আসলে এখানে চাইলেও অনেক কিছু করা সম্ভব না৷ তবে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি ঘরে বসে যতটুকু কাজ করা সম্ভব ততোটুকই করার। বিসিবি থেকে যে বাসায় কাজ করার যে রুটিন দেয়া হয়েছে সেটা ফলো করছি। তবে মাঠে ফেরার জন্য খুব উদগ্রীব হয়ে আছি।
নিউজক্রিকেটঃ ব্যাটিংয়ে আপনার আদর্শ কে?
নাঈম শেখঃ আসলে ছোটবেলা থেকেই আমি কুমার সাঙ্গাকারার একজন বড় ভক্ত। তাঁর সাথে আমার দেখা হয়েছে কিন্তু কথা হয়নি তেমন। আমি তাকেই ফলো করি।
নিউজক্রিকেটঃ ক্যারিয়ারের শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
নাঈম শেখঃ আসলে এটা এখন বলা কঠিন। তবে বাংলাদেশের সেরা পাঁচজন ক্রিকেটার (তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ) আছেন তারা এখন যে পর্যায়ে আছেন বা তাদের ক্যারিয়ার শেষ হবে যেখানটায় আমার লক্ষ্য থাকবে পারফরম্যান্স দিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে যাওয়া।
নিউজক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
নাঈম শেখঃ আপনাকেও ধন্যবাদ এবং একইসাথে নিউজ ক্রিকেটের সকল পাঠকদের জন্য শুভকামনা।