বাংলার বাঘিনীদের ঐতিহাসিক এশিয়া জয়

কামরুল হাসান রাকিশ »

২০১৮ সাল মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে বিশ্বকাপ পরে সবচেয়ে বড় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হিসেবে বিবেচিত এশিয়া কাপ ক্রিকেটের প্রমিলাদের ফাইনালে মুখোমুখি হয় বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি শক্তিশালী ভারত মহিলা দলের। মাশরাফি, সাকিব, তামিমরা যা কখনো পারে নি সেটাই করে দেখিয়েছে সালমা-জাহানারারা।

নারী এশিয়া কাপ টি২০’র রুদ্রশ্বাস উত্তেজনাময় ফাইনালে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জয়লাভ করে দেশের নারী ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক পরিমলে দেশের প্রথম কোন শিরোপা এই নারী ক্রিকেটারদের হাত ধরেই আসে গৌরবগাঁথা এক সাফল্য এনে দিয়েছে প্রথমে তারাই।

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে কিনরারা একাডেমি ওভালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সালমা খাতুন। এ ভেন্যুতে যে পরে ব্যাটিং করেই বারংবার জিতেছে বাংলাদেশ। এবারও তাই হলো। ভারত নারী ক্রিকেটাররা আগে ব্যাটিং করার সুযোগটি ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারেননি।

মূলত রুমানা আহমেদ (২/২২) ও খাদিজা তুল কোবরা (২/২৩) তাদের ব্যাটিং লাইন আপকে সেই কাজ ঠিকভাবে করতে দেয়নি। দুইজনের বোলিং ঘূর্ণির সামনে পড়ে ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১১২ রানের বেশি করতে পারেনি ভারত নারী দল। অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌর সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেন।

জবাব দিতে নেমে নিগার সুলতানার ২৭, রুমানার ২৩, আয়েশা রহমানের ১৭ ও শামীমা সুলতানার ১৬ রানের উপর ভর করে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১১৩ রান করে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। বল ও ব্যাট হাতে নৈপুণ্য দেখানোয় রুমানা আহমেদ ম্যাচসেরা হন। এইবারই প্রথম এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করেছিলো নারী দল। ফাইনালে ভারতকে হারানো মানেই যে ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ করা। সেই ইতিহাস লিখলো বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটাররা। পুরুষ দল যেখানে বারবার শিরোপার কাছে গিয়েও অর্জন করতে পারেনি।


শেষ বলে গিয়ে, শেষ বেলায় ঠিকই দম ফুরিয়েছে তাদের। আর সেখানে নারী ক্রিকেটাররা অর্জনের খাতায় নিজেদের ইতিহাসের সঙ্গী করে ফেলেছেন এশিয়া কাপ। অথচ এই মহিলা দল তাদের প্রথম মুখোমুখি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেই শুরু করেছিল তাঁদের এশিয়া কাপের সূচনা। এর পর টানা চার ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ।

পাকিস্তান, ভারত, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াকে সর্বশেষ হারিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে। লীগপর্বে ভারতকেও হারিয়েছে। বাংলার বাঘিনীদের দলনেতা সালমা খাতুন তো বিমানে উঠার আগেই বলেছিলেন যদি ম্যাচের ফল আমাদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে অবশ্যই ফাইনালে খেলা সম্ভব।

বাংলাদেশ যেখানে প্রথমবার ফাইনালে খেলেছিল, সেখানে ভারত প্রতিবারই ফাইনালে খেলেছিল। এবার নিয়ে সপ্তমবারের মতো হয়েছে এশিয়া কাপ। প্রথম চারবার (২০০৪, ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৮ সাল) ওয়ানডে ফরম্যাটে হয়েছে এ টুর্নামেন্ট। এবারসহ আগের তিনবার (২০১২, ২০১৬ ও ২০১৮ সাল) হয়েছে টি২০ ফরম্যাটে। প্রতিবারই ভারত ফাইনালে খেলেছে। টানা ছয়বার চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। নারী এশিয়া কাপ টুর্নামেন্ট মানেই ভারত চ্যাম্পিয়ন। সেই কথা সবার মুখেই ছিল। কিন্তু এবার এমন এক দলের বিপক্ষে ফাইনাল খেলেছে ভারত, যে দলটি প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলেছে। লীগপর্বে হারিয়েছেও। এবার আর ভারতকে চ্যাম্পিয়ন হতে দেয়নি বাংলাদেশ। টানা ছয় আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দল ভারতকে এবার হারিয়ে সপ্তম আসরের শিরোপা ঘরে তুলেছে বাংলাদেশ।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »