নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক উইকেটরক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলট
ব্যাট-প্যাড তুলে রেখেছেন অনেক আগে, সাথে হাতের গ্লাভসটাও। ২০১৪ সালে সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একময়ের সবচেয়ে সেরা উইকেটরক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলট। নিজে এখন ব্যাট-প্যাড পড়ে বাইশগজ না মাতালেও বাইশগজ মাতানো তারকা তৈরিতে ব্যস্ত। এই লক্ষ্যে নিজ জেলা রাজশাহীতে গড়ে তুলেছেন ক্রিকেট একাডেমি। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট ছাড়ার পর থেকেই কখনো আছেন কোচ আবার কখনো আছেন টিম ম্যানেজার হিসেবে বিভিন্ন দলের সাথে। অবসরের পর ক্রিকেটের বাইরের জীবন এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন নিউজ ক্রিকেট টোয়েন্টি ফোরের সিলেট প্রতিনিধি আফজাল হোসেনের সাথে।
প্রশ্নঃ নিউজ ক্রিকেট২৪ এর সাক্ষাৎকারে আপনাকে স্বাগতম।
খালেদ মাসুদ পাইলটঃ ধন্যবাদ ।
প্রশ্নঃ আপনি কেমন আছেন?
খালেদ মাসুদঃ মাশাল্লাহ, ভাল আছি।
প্রশ্নঃ সাউথ জোনের কোচ হিসেবে আছেন, যে দলে খেলছে তুষার ইমরান। তাঁর পারফর্মেন্সকে কিভাবে দেখছেন?
খালেদ মাসুদঃ তুষার ইমরানের ব্যাপারে যেটা বলতে চাই, সে খুবই ভাল পারফর্মার। নিয়মিত রান করে যাচ্ছে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট এনসিএল, বিসিএলে।আমার কাছে মনে হয় যে তার অভিজ্ঞতাটা কাজে লেগেছে। শুধু ট্রেনিং করলে হয়না পারপাস ওয়াইজ ট্রেনিং করতে হবে। তার কাছ অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের তরুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের। কিভাবে বড় রান করতে হয়, ধারাবাহিকতা যে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যেক প্লেয়াররা তার কাছ থেকে শিখতে পারে।
প্রশ্নঃ তুষার ইমরানকে জাতীয় দলে নেওয়া উচিত কি না, আপনি কি মনে করেন?
খালেদ মাসুদঃ আসলে এটা অবশ্যই বিবেচনা করবেন যারা সিলেক্টর হিসেবে আছেন । আমি যেটা মনে করি মাঠে আসলে বয়সটা খুব একটা ফ্যাক্টর না, ইম্পরট্যান্ট হচ্ছে পারফর্মেন্স। আমি আশা করি তুষার ইমরানের সব সময় সুযোগ আছে, যদি নির্বাচকরা মনে করেন সে দলে ভাল একটা কন্টিবিউট করতে পারবে, তাহলে ডাক আসতেই পারে।
প্রশ্নঃ বর্তমান বাংলাদেশ দলটাকে কিভাবে দেখছেন?
খালেদ মাসুদঃ অনেক উন্নতি করেছে বাংলাদেশ দল,আমার মনে হয় যে অনেক ভালো ভালো খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক এই চার-পাঁচ জন প্লেয়ার সুন্দর কন্ট্রিবিউট করে যাচ্ছে বেশ কিছু বছর ধরে। ম্যাচিউরিটিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা কিন্তু তারা দেখিয়ে যাচ্ছে। কোনো অফ ফর্ম নাই। তারা ধারাবাহিকভাবে গত তিন-চার বছর ধরে পারফর্ম করে আসছে। সাথে তরুণ কিছু প্লেয়ার। তরুণ বলতে বোঝাচ্ছি যে উদীয়মান প্লেয়ার যেমন মুস্তাফিজ, সাব্বির, সৌম্য সরকার, মাঝে মাঝে মোসাদ্দেক সৈকত। তাঁরা জানে যে দলে থাকতে হলে অনেক ভাল পারফর্ম করতে হবে। সিনিয়র এবং তরুন প্লেয়ার মিলে দারুন একটা কম্বিনেশন তৈরি হয়েছে এবং বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের যে হ্যাবিট সেটা তৈরি হয়েছে গত দুই তিন বছরে। আগে হয়তো আমরা দুই-একটা ম্যাচ জিততাম। আর বাংলাদেশ এখন যেকোনো দলের বিপক্ষে জয়ের জন্য খেলে ।অভিজ্ঞদের সাথে নতুনরা ধারাবাহিল পারফর্ম করলে দলটা আরো শক্তিশালী দলে পরিনত হবে।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশ দলের উন্নতির এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কি করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
খালেদ মাসুদঃ ঘরোয়া ক্রিকেটের দিকে মনোযোগি হওয়া উচিত। । কারণ আমাদের এই কয়জন খেলোয়াড় নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট চিন্তা করলে হবে না। আমাদের কোয়ালিটি অফ ক্রিকেট ডেভলাপমেন্ট করতে হবে। আমার মনে হয় যে অনেক খেলোয়াড় খেলছে প্রথম শ্রেনির ক্রিকেট কিন্তু আমাদের মাঠটা এখনো দক্ষিন আফ্রিকা বলেন বা অস্ট্রেলিয়া বলেন ঐ মানে পৌছায়নি। ঐ মানে পৌছতে হলে আমাদেরকে ইনভেস্ট করতে হবে,শুধু আর্থিক ইনভেস্ট করলে হবে না, প্লানিং ইভেস্টমেন্ট আছে। আমি বলব যে, প্লানিং ইনভেস্টমেন্ট বলতে অবকাঠামো গুছিয়ে ডিভিশন ভিত্তিক, জেলা ভিত্তিক প্রত্যেকটা জায়গায় ঘরোয়া লিগ আয়োজন করা। এটা প্রত্যেকটা নিজ নিজ জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্ব। প্রতিটি বিভাগে একটি করে ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তোলা। আমার মনে হয় যে বাংলাদেশে একটি মাত্র ক্রিকেট একাডেমী আছে মিরপুরে, এই একটা একাডেমি যথেষ্ট নয়। আমার কাছে মনে হয় যে, সিলেট, রাজশাহী ,খুলনা চট্ট্রগ্রাম সহ সব গুলো বিভাগে যদি একটি করে প্রপার একাডেমি থাকে, তাহলে ঐ এলাকার প্লেয়ার যারা আছে যেমন; অনুর্ধ্ব ১৯ বলেন, ১৭, ১৫ প্রত্যেকে এই সুযোগ সুবিধা পাবে। সেখানে প্রপার কোচ রাখা, যাতে করে প্লেয়ার সেখানে ট্রেনিং করে অনেক আগে থেকে যেন শিখে আসে আমাকে জাতীয় দলে খেলতে হলে বা বাংলাদেশ দলে খেলতে অথবা ঢাকা ডিভিশন ক্রিকেট লিগে, প্রথম শ্রেনির ক্রিকেট খেলতে হলে তাকে কি কি ধরনের নলেজ ডেভলাপ করতে হবে। আমার কাছে মনে হয় কি, জাতীয় দল শেখার কোনো জায়গা না। একাডেমী লেভেল থেকে শিখে আসতে হবে। যত আর্লি শিখব, তত আমি ভবিষ্যতে ভাল একটা লেভেলে গিয়ে ভাল পারফর্ম করতে পারব।
প্রশ্নঃ ঘরোয়া ক্রিকেটের ব্যাপারটা যে বলছেন সেটা কি লংগার ভার্সন নাকি সীমিত ওভারের খেলা?
খালেদ মাসুদঃ না, ঘরোয়া ক্রিকেট বলতে কি, ঘরোয়া ক্রিকেটের বিভিন্ন ধরনের স্ট্রাকচার আছে। যেমন সিলেট যে খেলাটা হচ্ছে, সিলেটে যেন প্রপার লিগ হয়, রেলিগেশন লিগ হয়। প্রতিটি জেলায় যেন প্রপার লিগ হয়। অনেক জেলায় আবার লিগ হয় না। এটার সাথে সাথে আর বেশি করে লিগের আয়োজন করা হয়। ক্রিকেটটাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলা। প্রত্যেকটা প্লেয়ার যেন ক্রিকেটকে প্রফেশন হিসেবে চিন্তা করে। আগে যেমন ছিল; বাবা-মা চিন্তা করতেন ছেলে-মেয়ে যেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়। কিন্তু এখন অনেক বাবা-মা চান যেন খেলোয়াড় হয়।শুধু প্লেয়ার হলে হবে না, প্লেয়ার ইন্ডাস্ট্রি ডেভলাপ করতে হবে। অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে যে আমার ছেলে যদি জাতীয় দলে খেলতে নাও পারে সে যেনো ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলে তার ক্যারিয়ার বিল্ড আপ করতে পারে। সেজন্য আমি বলছি যে প্রচুর খেলার আয়োজন করতে হবে, প্লেয়ার খেলতে খেলতে পরিণত হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ। বাংলাদেশকে আপনি কোথায় দেখতে চান?
খালেদ মাসুদঃ অবশ্যই বাংলাদেশকে ভাল জায়গায় দেখতে চাই। বাংলাদেশ খুব ভাল খেলছে। তবে এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছিনা যে বাংলাদেশ কতটা ভাল খেলবে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে। এখন থেকে প্লান করে এগুতে হবে, প্রত্যেকটা ম্যাচ বাংলাদেশ দলের জন্য পরীক্ষা । কারন আমরা কিন্তু অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিন আফ্রিকা ভারতের মত না ।আমরা কিন্তু নতুন দলগুলোর মধ্যে একটি । আমার কাছে মনে হয় যে প্রত্যেকটা মুহুর্তে আমাদেরকে উন্নতি করতে হবে। প্রত্যেকটা সিরিজেই আমাদেরকে ভাল খেলতে হবে, প্রত্যেকটা সিরিজেই নিজেদেরকে ইম্প্রোভ করতে হবে।
প্রশ্নঃ আপনি মাঠ থেকে অবসর নিতে পারেননি, এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ আছে কি?
খালেদ মাসুদঃ কোনো আক্ষেন নেই, তবে মাঠ থেকে অবসরে যেতে পারলে ভাল লাগত। আমার কাছে মনে হয় যে,আমরা খেলোয়াড়, মাঠে খেলাটা হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব আর কাকে কখন খেলাবে সেটা ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব। হয়তো আমার জায়গায় নতুন কেউ আসছে, ভাল পারফর্ম করছে, হয়তো বা সেখান থেকে কনটিনিউ ভাল করেছে। হয়ত বা সেই সুযোগটা আমার হয় নাই। আমি মনে করি যে তারা হয়তো ভালোর জন্য করেছিলেন। আমি সব সময় এটাকে সাধুবাদ জানাই। যেকোনো সময়, যেকোনো প্লেয়ারের বেলায় এটা হতে পারে।
প্রশ্নঃ প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর থেকে অবসর জীবন কেমন কাটছে?
খালেদ মাসুদঃ খেলা ছাড়ার পরে সময়টা ফ্যান্টাস্টিক কাটছে। খেলায় থাকাকালীন যে কাজগুলো করতে পারিনি, সেগুলোতে এখন সময় দিতে পারছি। কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে যেমন, রাজশাহীতে একটি ক্রিকেট একাডেমী গড়ে তুলেছি। আমার কাছে মনে হয় যে, সিনিয়র প্লেয়াররা যারা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে কন্টিবিউট করেছি,তারা যদি নিজ নিজ এলাকায় ক্রিকেট একাডেমী গড়ে তুলি, যার অবস্থান থেকে যদি কাজ করি তাহলে সেখান থেকে কিছু ট্যালেন্ট প্লেয়ার বের হয়ে আসতে পারে। অনেক গরীব ছেলে আছে যাদের ট্যালেন্ট আছে কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে তারা আসতে পারছে না। আমার কাছে মনে হয় যে আমরা যে জায়গাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, সেই জায়গাতে নিজ এলাকায় কাজ করতে পারি। যেমন আমি খেলোয়াড়, এই জায়গায় কাজ করলে হয়তো,কিছু ট্যালেন্ট প্লেয়ার বের হয়ে আসবে। যেমন সিলেটের অনেক ভাল ক্রিকেটার আছে যারা বাংলাদেশ জাতীয় দলে কন্টিবিউট করছে। যেমন তাপস বৈশ্য, রাজিন সালেহ, অলক কাপালি, এনামুল হক জুনিয়র। তারা যদি সিলেটে ক্রিকেট একাডেমি করে, আকরাম ভাই যদি চট্টগ্রামে একাডেমি করেন। সবাই যদি সচেতন হয়ে এই নিজ নিজ এলাকায় কাজ গুলো করেন, তাহলে আমার কাছে মনে হয় যেসব খেলোয়াড়েরা অল্প বয়সে ঝড়ে যায়, তারা সুন্দর একটা পরিবেশ পাবে। অল্প বয়সে তাদের ক্যারিয়ার থেমে যাবে না। খেলাধুলার সুন্দর পরিবেশ ফেলে তরুনেরা ড্রাগে জড়াবে না। সবাই যে খেলোয়াড় হবে এমন কোনো কথা নয়,তবে সে খেলাধুলার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখার সুযোগ পাবে।
প্রশ্নঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কম বাংলাদেশে একটি ক্রিকেট ভিত্তিক নতুন ওয়েব পোর্টাল। এই পোর্টালে ক্রিকেট ভিক্তিক সব নিউজ প্রকাশ করা হয়। একে শুভেচ্ছা জানিয়ে কিছু বলুন?
খালেদ মাসুদঃ আমার পক্ষ থেকে নিউজ ক্রিকেট২৪ এর প্রতি অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। আমাদের দেশে ক্রিকেট অনেক জনপ্রিয়।এই জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র খেলোয়াড়দের মাধ্যমেই হয়নি। এর পিছনে কাজ করেছে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের ভালবাসা, বিশেষ করে আমি বলব যে মিডিয়া যেমন; ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যা বর্তমান যুগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো জিনিস দেখার জন্য এখন আর আমরা শুধু টিভি কিংবা পত্রিকার দিকে চেয়ে থাকিনা । এখন মোবাইলের মধ্যেই সবকিছুর আপডেট পেয়ে যাই। আমি মনে করি নিউজ ক্রিকেট টোয়েন্টি ফোর আমাদের ক্রিকেটকে অনেক ইম্প্রোভ করবে,ক্রিকেটের ভালো ভালো নিউজ করে সহযোগিতা করবে । আর যারা ক্রিকেট খেলছেন এবং যারা খেলা পরিচালনা করছেন তাঁদের পাশে থেকে গঠনমূলক নিউজ প্রকাশ করবে।
প্রশ্নঃ নিউজ ক্রিকেট টুয়েন্টি ফোরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
খালেদ মাসুদঃ নিউজ ক্রিকেট টুয়েন্টি ফোরকেও ধন্যবাদ।