দুর্জয় দাশ গুপ্ত »
১২ বছর পর এশিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপকে ঘিরে পুরো ভারত জুড়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। কমতি নেই বাংলাদেশেও। অধরা এক স্বপ্নের খোঁজে হাঁটছে টিম টাইগার্স। নেতৃত্বে বাংলাদেশের জান বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসান। টাইগারদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হলো ৭ অক্টোবর ধর্মশালায়। আফগান বধ হবে এমন আশা নিয়েই গোটা দেশের ক্রিকেট ভক্তরা টিভি সেটের সামনে বসেছিলেন। কিন্তু এতটা সহজে বাংলাদেশ জিতবে এমনটা ভেবেছিলেন কয়জন? বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশনের শুরুটা হয়েছে দেখার মত। ভক্তদের উন্মাদনা আরো বেড়েছে। দলের প্রতি চাওয়াটাও বেড়েছে আরো। কেউ কেউ আবার দেশকে সমর্থন জানাতে নিজের অতীব জরুরী কাজকেও তোয়াক্কা না করে পাড়ি জমিয়েছেন ভারতে। লক্ষ্য একটাই, টাইগারদের জন্য গ্যালারী থেকে গলা ফাটানো।
বিশ্বকাপে কেমন করবে বাংলাদেশ এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও সদ্য সাবেক হওয়া বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলিকে গত কয়েকদিন ধরেই বিরক্ত করছিলাম। কিন্তু তাঁর ব্যস্ততার কারণে সেভাবে সময় হয়ে উঠছিলো না। অবশেষে মুঠোফোনে পাওয়া গেল ভারতীয় এই কিংবদন্তিকে। বিশ্বকাপ ও বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কথা হলো মিনিট পনেরোর মত। তাঁর মত মহাব্যস্ত একজন মানুষ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পাঠকদের জন্য ১৫ মিনিট সময় দিয়েছেন সেটা আসলেই অনেক বড় প্রাপ্তি। কথা হলো বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের জয় নিয়ে, কথা হলো বাংলাদেশের সম্ভবনা নিয়ে।
প্রথমেই ভারতীয় এই গ্রেটের কাছে জানতে চাইলাম বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটা কতটা উপভোগ করলেন। তাঁর সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘দারুণ খেলেছে বাংলাদেশ। পুরোদমে টিম ওয়ার্ক। সবাই যার যার রুলটা ভালোভাবে পালন করেছে। বিশেষ করে মেহেদি হাসান মিরাজের কথাটা বলতেই হয়। ব্যাটে-বলে দারুণ পারফরম্যান্স। দল তার কাছে যতটা চেয়েছিলো তার চেয়েও বেশি কিছু দিয়েছে।।এক কথায় দারুণ।’
বিশ্বকাপে কেমন করবে বাংলাদেশ? সৌরভ বললেন, ‘দেখেন বিশ্বকাপ কিন্তু অনেক বড় একটা মঞ্চ। শুধু মাঠের খেলা ছাড়াও আরো অনেক ব্যাপার থাকে এখানে। মাঠের বাইরের একটা প্রেশার থাকে। ভক্তদের চাওয়া-পাওয়া থাকে। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় এটা বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়ায় ক্রিকেটারদের জন্য। সব সামলে তারপরই আপনাকে পারফর্ম করতে হয়। দেশের জন্য খেলছেন, গোটা দেশের মানুষের চোখ আপনার উপর। অবশ্যই, অনেক বড় চাপের ব্যাপার। তারপরও যারা বড় ক্রিকেটার আছেন তাদের কাছে এ ব্যাপারগুলো খুব একটা সমস্যার সৃষ্টি করে না। কিন্তু তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য একটা বড় পরীক্ষা। বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে দারুণ। এটা ধরে রাখতে হবে। পরের ম্যাচটা আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে। বাড়তি চাপ সরিয়ে রেখে মাঠের ক্রিকেটটাকে উপভোগ করতে হবে। আপনি যখন একটা বড় দল হবেন তখন এসব ম্যাচ (আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ) আপনাকে এভাবেই জিততে হবে। ভারতে যেসব উইকেটে খেলা হচ্ছে এখানে কিন্তু প্রচুর রান হবে, একইসাথে বোলারদেরও সুবিধা রয়েছে। বড় দলগুলো কিন্তু এসব কন্ডিশনে খেলতে খেলতে অভ্যস্ত। তারা জানে কখন কি করতে হয়। বাংলাদেশ বরাবরই এই ফরম্যাটটা ভালো খেলে। বাংলাদেশকে রিদমটা ধরে রাখতে হবে। ম্যাচ বাই ম্যাচ পরিকল্পনা করে এগোতে হবে।’
দাদার কাছে পরের প্রশ্ন, ওপেনিংয়ে কি ঘাটতি আছে? ‘আপনি বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন। আপনি অবশ্যই আপনার দলের সেরা ওপেনারকে নিয়ে এখানে এসেছেন। আমি জানি না তামিম ইকবাল কেন নেই, হয়তো ইনজুরি জনিত সমস্যা আছে। তামিম থাকলে কাজটা আরো সহজ হতো। অনেক দিন ধরে বাংলাদেশের হয়ে খেলছে। তামিম ছাড়া যে দুজন আছে লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তারাও কিন্তু ভালো বলেই বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছে। আর লিটন তো দারুণ ব্যাটিং করে। আমরা এর আগেও দেখেছি লিটন কি করতে পারে। সব ক্রিকেটারেরই বাজে ফর্ম যায়, লিটনও সেটার ভেতর দিয়েই যাচ্ছে। দেখবেন বড় ম্যাচে লিটন জ্বলে উঠবে। বাংলাদেশকে ভালো করতে হলে লিটনকে ভালো ব্যাট করতে হবে। তানজিদকে ওয়ার্মআপ ম্যাচে দেখলাম সুন্দর ব্যাটিং করেছে। একটা দলের ওপেনিং ব্যাটারদের উপরই ম্যাচের ৪০% নির্ভর করে। দ্রুত উইকেট হারালে দল চাপে পড়ে, ন্যাচারাল খেলাটা খেলতে পারে না।’

ছবি : বিসিসিআই
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে কিছু বলবেন? গাঙ্গুলি বললেন, ‘সাকিব বরাবরই ভালো ক্রিকেট খেলে। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও সাকিব কি করেছে সবাই দেখেছে। এত এত বছর ধরে যখন আপনি ক্রিকেট খেলবেন তখন এমন পারফরম্যান্স খুবই স্বাভাবিক। সাকিবের হয়তো পঞ্চম বিশ্বকাপ এটা। দল আপনার থেকে এটাই চাইবে। এছাড়া আপনি যখন দলকে নেতৃত্ব দিবেন তখন আপনাকেই গুরু দায়িত্বটা পালন করতে হবে। সাকিব ক্রিকেটটা ভালো বুঝে। মাইন্ড গেইম খেলতে পারে। মডার্ণ ক্রিকেটে এটা খুব জরুরী। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাকিবই কিন্তু ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছে। পুরো দলকে উজ্জীবিত করেছে। এটা ভালো দিক।’
ভারতের সাবেক এই ক্রিকেটারের কথা শুনেই বুঝতে পারছিলাম বাংলাদেশ ক্রিকেটের খবরটা ভালো রাখেই। যেহেতু এত বছর ধরে ক্রিকেটের সাথে যুক্ত আছেন ভালো বোঝারই কথা। বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার সম্ভবনা কতটুকু এমন প্রশ্ন করার লোভটা আর সামলাতে পারলাম না।
দাদা, বাংলাদেশ সেমিতে খেলতে পারবে? দাদার উত্তর, ‘সেমিফাইনাল অনেক বড় ব্যাপার। এখানে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান অনেক বড় বড় দল আছে। এক একটা দলে ৫-৬ জন ম্যাচ উইনার। তাদের সাথে পাল্লা দেয়াটা কঠিন ব্যাপার। একটু আগেই বললাম না বিশ্বকাপের মঞ্চে বাড়তি চাপটা বেশি থাকে। বড় দলগুলো বাড়তি চাপ সামাল দিতে পেরেছে বলেই এতদূর এসেছে। যে পাঁচটা দলের কথা বললাম তারা কিন্তু বিশ্বকাপ জেতার জন্যই ভারতে এসেছে। বাংলাদেশ এখনো এত বড় দল হয়ে উঠেনি। তবে আমি বাংলাদেশের একবারেই সম্ভবনা নেই এমনটা বলবো না। বাংলাদেশ ভালো দল। শুরুটা ভালো হয়েছে। কিন্তু আপনাকে প্রতিটা ম্যাচেই বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষেও এমন ডোমিনেটিং পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। ক্রিকেট এমন একটা খেলা এখানে যেকোনো দিন যেকোনো কিছু হতে পারে। আপনি আজ ভালো করেননি সেটা আজকেই শেষ। কালকের জন্য আপনাকে এই ম্যাচের পরেই পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। বিপক্ষ দলের দুর্বলতা জানতে হবে। এখনকার ক্রিকেট কিন্তু অনেক ফার্স্ট। এখানে খুব বেশি সময় নেই একটা ম্যাচ নিয়ে ভাবার। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে নয়টা ম্যাচ, নয়টা প্রতিপক্ষ। অনেক কঠিন ব্যাপার যেকোনো দলের জন্যই, প্লেয়ারদের জন্য তো আরো বেশি।’