প্রথম সেঞ্চুরি ও রেকর্ড এর জন্য আমার কোন আক্ষেপ নেই: বিদ্যুৎ

নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »

শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ! অকালে ও অপ্রত্যাশিত ভাবে হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্ভাবনাময় একজন ওপেনার। নব্বই দশকের বাংলাদেশ দলের অন্যতম সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের একজন ধরা হতো তাকে।ব্যাটিংয়ে সবসময় আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাট চালাতেন বলে তখনকার সময়ে হার্ডহিটার তকমাটাও পেয়েছিলেন।অপ্রত্যাশিত ভাবে সম্ভাবনাময় এই ক্রিকেটার মাত্র ২৮ বছর বয়সে  অভিমান করে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। নিজের ছোট্ট ক্রিকেট ক্যারিয়ারে টাইগারদের হয়ে ৩ টি টেস্ট ও ২০ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন এই ওপেনার।

নিউজক্রিকেট টুয়েন্টিফোরের নিয়মিত লাইভ আড্ডায় অতিথি হিসেবে এসে কথা বলেছেন নিজের ক্রিকেট জীবনের গল্প নিয়ে।

মাত্র ৫ রানের জন্য বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার রেকর্ড বঞ্চিত হয়েছিলেন এই ওপেনার! কেনিয়ার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা তৈরি করেও ব্যক্তিগত ৯৫ রানের মাথায় আউট হয়ে প্যাভিলিয়ন ফিরে যান। সেদিনের ৫ রানের জন্য অনন্য এই রেকর্ড বঞ্চিত  হওয়ায় কোন আক্ষেপ কি কাজ করেছিল?  আর ওই মুহুর্তে অনুভুতি কেমন ছিল?

এই ব্যাপারে নিউজক্রিকেট টুয়েন্টিফোরকে বিদ্যুৎ বলেন: আসলে আমার মধ্যে ওইরকম কিছুই কাজ করেনি সেদিন।আমি ওইরকম ভাবে কখনো ভাবিনি বা আগে থেকে কোন লক্ষ্য ঠিক করে ব্যাট করতে নামিনি কখনো।আসলে এই জিনিস গুলো কখনো আমার মধ্যে কাজ করতো না। যেমন, যেদিন ৯৫ রান করে আউট হলাম, সেদিন ৯৫ রানের মাথায় যখন নট আউট ছিলাম, ওই মুহুর্তেও আমার মাথায় একবারও এটা আসেনি, আর ৫ রান হলে আমি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেকর্ড করবো, বা আমাকে এটা করতেই হবে এমন কিছু। ব্যাটিংয়ের সময় আমি শুধু আমার কাজটাই করে যেতাম।আগে থেকে ওইভাবে  প্লেন করে কিছু করা হতো না। যেদিন ৯৫ রান করে আউট হয়ে গেলাম, আমার মধ্যে ওইধরনের কিছু কাজ করেনি তখনও। আমি স্বাভাবিকভাবে প্যাভিলিয়নে ফিরে এলাম। ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি, রেকর্ড এসব মিস হয়ে হয়ে গেল! ওসব কিছু মাথায়ও আসেনি। কিন্তু যখন প্যাভিলিয়নে ফিরলাম তখন আমাদের কোচ গর্ডন গ্রিনিজ আমাকে বলল ” অনেক ভাল একটা সুযোগ মিস করে এলাম।এইরকম সুযোগ সবসময় আসেনা। কোচের মতো বাকীদেরও মধ্যেও এই ব্যাপারে একটা আক্ষেপ কাজ করতে দেখেছি। আমার কাছে ওইরকম কিছু মনে হয়নি সেদিনও।

ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সতীর্থদের মধ্যে যে ব্যক্তিগুলো কাছ থেকে সবসময় সব ধরনের সহযোগীতা এবং অনেক কিছু  শিখেছেন।নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যে মানুষ গুলোর অনেক ভূমিকা আছে তাদের কথা স্মরন করে তিনি বলেন: আমি অনেক ভাগ্যবান, আমি আমার সময়ে সতীর্থ হিসেবে আকরাম ভাই, নান্নু ভাই, আতাহার ভাই,বুলবুল ভাই উনাদের মতো মানুষদের সাথে পেয়েছি।উনাদের থেকে সবসময় সহযোগীতা পেয়ে এসেছি। উনাদের সাথে থেকে অনেক কিছু শিখেছি।কোন সমস্যা হলে উনাদের পরামর্শ এবং নির্দেশনা পেয়েছি। এককথায় আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এই মানুষ গুলোর ভূমিকা অনেক।

ওপেনার শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ কে ওইসময় হার্ডহিটার বলেও সম্বোধন করতো অনেকে! এই তকমাটা কিভাবে পেয়েছেন?

এই ব্যাপারে নিউজক্রিকেটকে বিদ্যুৎ জানান: এটা হয়তো আপনারাও জানেন আমার ব্যাটিং এর ধরন শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল। আমি সবসময় শটস খেলতে পছন্দ করতাম, আর সবসময় এগ্রেসিভ ভাবেই ব্যাট করতাম। আমি শটস খেলতে সবসময় পছন্দ করতাম। আমার কাছে সবসময় ডিফেন্সিভ থেকে এগ্রেসিভ ব্যাটিংটাই পছন্দের ছিল। আমি আক্রমণাত্মক ভাবে যখন ব্যাট করতাম তখন নিজের মধ্যে একটা আলাদা আত্মবিশ্বাস সবসময় কাজ করতো, যেটা ডেফেন্সিভ খেলতে গিয়ে পেতাম না। সবসময় শটস খেলতে পছন্দ করতাম, আর ম্যাচের বেশিরভাগ সময় এগ্রেসিভ থেকে ব্যাট করতাম।আমার ব্যাটিংয়ের ধরনের কারনে ওই নামটায় অনেকে ডাকতো তখন।

ক্যারিয়ারে মোট ৩ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন।
এর মধ্যে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের অভিষেক ম্যাচটাও ছিল। স্বপ্নের টেস্ট খেলা, আবার দেশের টেস্ট অভিষেক ম্যাচের প্রতিনিধিদের একজন হওয়া, সবমিলিয়ে এই অনুভুতিটা কেমন ছিল?

এমন প্রশ্নের জবাবে নিউজ ক্রিকেটকে নিজের অনুভুতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেনঃ টেস্ট ম্যাচ! একজন ক্রিকেটারের জন্য স্বপ্নের ফরম্যাট।আলাহামদুলিল্লাহ আমি আমার ক্যারিয়ারে দেশের হয়ে টেস্ট ম্যাচ খেলতে পেরেছি এই অনুভুতিটা অসাধারণ।আমার কাছে এই ৩ টেস্ট থেকে থেকেও প্রাপ্তি কম নয়। দেখুন আমি গর্ব করে বলতে পারি আমি বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটারদের একজন।
আমি এটাও গর্ববোধ করে বলতে পারি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের সূচনা যারা করেছিল,  আমি সেই অভিষেক টেস্ট ম্যাচের প্রতিনিধিদের একজন।এছাড়া আমি নিজেকে নিয়ে  আরো গর্ববোধ করতে পারি এইজন্য, আমি একমাত্র প্রথম ব্যক্তি, যে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ম্যাচের প্রথম বল খেলেছি, দেশের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম রান ও প্রথম বাউন্ডারিও আমি হাঁকিয়েছি। নিঃসন্দেহে আমার জন্য গর্ব করার মতো অর্জন এগুলো।

বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় দলটিকে নিয়ে  নিজের বক্তব্য ও বর্তমান দলটিকে কিভাবে মুল্যয়ন করবেন? এই সমন্ধে নিজের মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন: বাংলাদেশের বর্তমান দলটি অসাধারণ।
বর্তমান দলটিতে এমন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার আছে, যারা একাই ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।ফরম্যাট অনুযায়ী যদি মুল্যয়ন করতে যাই তাহলে আমি বাংলাদেশকে ওয়ানডে ফরম্যাটে সেরা ৩ দলের মধ্যেই রাখবো। কারন এই দলটি যেকোন পরাশক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে। টেস্ট ফরম্যাটেও আমরা খুব একটা খারাপ অবস্থায় আছি বলে আমি মনে করিনা।আমাদের টেস্ট ফরম্যাটের জন্য কার্যকরী ওইধরনের প্লেয়ারও আছে। ওরা নিজেদের কাজটা ধারাবাহীক ভাবে করতে পারলে টেস্টেও আমরা ওয়ানডের মতো একটা শক্তিশালী দল হয়ে উঠবো।

২০ বছর আগে সতীর্থ মেহরাব হোসেন অপিকে নিয়ে ১৭০ রানের একটা পার্টনারশিপ করে রেকর্ড গড়েছিলেন অপি- বিদ্যুৎ জুটি। গত ২০ বছর ধরে এই রেকর্ডটি অক্ষত থাকলেও কিছুদিন আগে ২০ বছর আগের সেই পুরনো রেকর্ডটি তামিম-লিটনের কাছে খোয়াতে হয়েছে।
২০ বছর আগের ওই রেকর্ড আর ২০ বছর পরের এই রেকর্ড! আপনাদের পুরনো ওই রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়ার এই বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ বলেন: হ্যাঁ, আমাদের ওই রেকর্ডটি কিছুদিন আগে তামিম-লিটন ভেঙেছে। ২০ বছর ধরে রেকর্ডটা অক্ষত ছিল, এখন নতুন করে আবার হয়েছে। হয়তো দেখা যাবে কিছুদিন পর এটা ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড হবে। এইভাবে চলুক রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়া।তবেই আমাদের ক্রিকেট আরো উন্নত হবে।

নিজের বক্তব্যে বর্তমান বাংলাদেশের ওয়ানডে দলপতি তামিম ইকবালকে প্রশংসা ভাসিয়ে তামিমের সাথে একদিন  ইনিংস উদ্বোধন করার ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি বলেনঃ তামিমও আমার মতো শটস খেলতে পছন্দ করে আর আমার সাথে ওর অনেক মিল রয়েছে।তামিম যখন ব্যাট করে তখন আমার কাছে মনে হয় আমি ব্যাট করছি।মাঝে মধ্যে ইচ্ছা হয়, যদি আমরা দুজন একসাথে ইনিংস উদ্বোধন করতে পারতাম তাহলে দারুণ কিছু একটা হতো।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সে অভিমান ও রাগের বশে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন এই ক্রিকেটার।ক্রিকেট থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে এই মুহুর্তে পরিবার ও ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে আছেন এই ক্রিকেটার।

নিউজক্রিকেট টুয়েন্টিফোর / ইফতি মারুফ

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »