দীর্ঘ সময় ধরে জাতীয় দলে টিকে থাকতে নিজেকে প্রস্তুত করছিঃ মিজানুর

দুর্জয় দাশ গুপ্ত »

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পরিচিত এক নাম মিজানুর রহমান। ব্যাট হাতে নিয়মিতই জ্বলে উঠেন তিনি। দুই বছর আগে ২০১৮ সালে টানা পাঁচ ইনিংসে সেঞ্চুরি করে আলোচনায় এসেছিলেন মিজানুর। জাতীয় দলের আশেপাশে থাকলেও এখনো নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতে পারেন নি।

করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর কারণে বন্ধ হয়ে আছে সব ধরণের ক্রিকেটীয় ইভেন্ট। আর তাই ঘরে বসেই সময় কাটাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। এই অবসরে নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের প্রতিবেদক দুর্জয় দাশ গুপ্ত কথা বলেছেন ক্রিকেটার মিজানুর রহমানের সাথে।

নিউজ ক্রিকেট২৪ঃ কেমন আছেন? কোয়ারেন্টাইন কেমন কাটছে?

মিজানুর রহমানঃ জ্বী, মাশাআল্লাহ, ভালোই কাটতেছে। কখনও আশা করি নাই এতো সময় ধরে বাসায় থাকবো। বাচ্চাদের সময় দিতে পারবো। ভালো সময় কাটতেছে।

নিউজ ক্রিকেট২৪ঃ ফিটনেস কিভাবে মেইনটেইন করছেন?

মিজানুর রহমানঃ ফিটনেস আসলে যেসব ইনস্ট্রুমেন্ট বাসায় ধরেণ হাতের কাছে আছে যেমন ওয়েট, আপনারা হয়তো দেখছেন সিলিন্ডার নিয়ে কাজ করতেছি বা পানির বোতল নিয়ে কাজ করতেছি। এসব নিয়েই করতেছি। ওয়েট বাসায় তো সেরকম নাই। জিমের একজনকে বলছিলাম ও সেভাবে জোগাড় করে দিতে পারে নাই। এজন্য বাসাতে যেসব আছে সেসব নিয়েই করতেছি। সিঁড়িতে প্রতিদিন ২ বার ওঠানামা করি।

নিউজ ক্রিকেট২৪ঃ এখনতো রমজান চলতেছে। খাওয়া দাওয়ার কোন ইফেক্ট পড়ছে কিনা?

মিজানুর রহমানঃ আগে দুধ খেতাম রাত্রে বেলা ঘুমোনোর আগে৷ এখন ইফতারের পরে এক গ্লাস খাওয়া হয় আবার ঘুমানোর সময় এক গ্লাস। তাছাড়া শরীর অনেক দূর্বল হবে।

নিউজ ক্রিকেট২৪ঃ অনেকদিন হলো মাঠের বাইরে করোনার কারণে। এ ব্যাপারটা কিভাবে দেখছেন?

মিজানুর রহমানঃ করোনা ভাইরাস এখন সব দেশেই একই অবস্থা। সব লকডাউনে আছে। অবশ্য একজন খেলোয়াড় হিসেবে কখনও আশা করিনি এভাবে বাসায় থাকা। একটা বোরিং ভাব চলে আসে। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমরা সবসময় বাইরে কাটানোর চেষ্টা করি। মাঠে সবসময় কাটানোর চেষ্টা করি। এজন্য খারাপ লাগতেছে। প্রাকটিসে যেতে পারতেছিনা। আমরা সবসময় মাঠেই বড় হয়েছি।

নিউজ ক্রিকেট২৪ঃ আপনার ক্রিকেটে আসার গল্পটা যদি একটু বলতেন।

মিজানুর রহমানঃ ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিলো খেলাধুলা করবো। কোন খেলা সেটা নির্দিষ্ট ছিলোনা। যখন স্কুল লেভেলে খেলতাম৷ উচ্চলাফ৷ দীর্ঘলাফে প্রথম হতাম৷ আসলে ডিসিশন নিতে পারিনাই। ফুটবলও ভালো খেলতাম। তখন কোন আলাদা স্পোর্টসে যাবো বা খেলবো এরকম কোন আশা ছিলোনা। সব খেলাতেই ভালো খেলতাম। আমার বাবা চাকরি করতেন পানি উন্নয়ন বোর্ডে। তো ওইখানে একজন বড় ভাই ওনার নাম আশরাফুল ইসলাম রানা। ওনাকে বল করতাম। আমি আগে লেগ স্পিনার ছিলাম। উনি বললো তুমিতো লেগস্পিন ভালো করো তুমি খেলতে পারো। লেগস্পিনারতো বাংলাদেশে সচরাচর নাই। তারপরে আমার কোচ মিজানুর রহমান মিলন স্যারের কাছে ভর্তি হলাম। প্রথমে লেগস্পিনার ছিলাম। পরবর্তীতে আঙুল ভেঙে যাওয়ায় ব্যাটসম্যান হয়ে গেছি।

নিউজ ক্রিকেট২৪ঃ জাতীয় দলের আশেপাশে ছিলেন। বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকের স্বপ্ন দেখেন?

মিজানুর রহমানঃ আসলে সবারই টার্গেট থাকে জাতীয় দলে খেলার। আসলে আমার টার্গেট খেলার নাহ। দীর্ঘ সময় দলে থাকার। জাতীয় দলে অন্তত ৮/১০ বছর খেলতে পারি। এখন অনেক তরুণ খেলোয়াড় আসছে তাদের সুযোগটা একটু বেশী থাকবে। ওদের থেকে ভালো পারফর্ম করতে হবে। আগের থেকে দ্বিগুণ হার্ড ওয়ার্ক করতে হবে। নিজেকে ফিটও রাখতে হবে।

নিউজ ক্রিকেট২৪ঃ কোন পজিশনে ব্যাট করতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?

মিজানুর রহমানঃ আমি ওপেনিংয়েই সাচ্ছন্দ্য বোধ করি। ওপেনিং ব্যাতিত অন্য যায়গায় গেলে মনেহয় কিছু একটা নেই। এবার জাতীয় লীগে নিচে নামছি। কেমন জানি লাগে। কারণ পেস বল খেলে অভ্যস্ত। ওপেনাররা আগে পেস বল খেলে সেট হয়। তারপর স্পিন বল আসলে ইজি মনে হয়। প্রথমে স্পিন আসলে একটু সমস্যা হয়।

নিউজ ক্রিকেট২৪ঃ কোন ফরম্যাটটা আপনার নিজের জন্য মানানসই বলে মনে হয়?

মিজানুর রহমানঃ শুরুতে আমি প্রথম থেকেই মেরে খেলতাম। প্রথম বল হোক বা শেষ বল হোক সব সময় চার্জ করে খেলতাম। সবাই বলতো আমি টি২০-র প্লেয়ার। আস্তে আস্তে যখন বয়স হইছে তখন দেখি আসলে ৪দিনের ম্যাচ (লংগার ভার্সন) বেশী মজার। লম্বা সময় ব্যাটিং করা যায়। লম্বা সময় ব্যাটিং করা যায়। কিন্তু টি২০ খেলতে অনেক পছন্দ করি।

নিউজ ক্রিকেট২৪ঃ আপনার আইডল ক্রিকেটার কে?

মিজানুর রহমানঃ বাংলাদেশে আমার আইডল জহুরুল ইসলাম অমি। তার খেলা ভালো লাগতো। উনি অনেক স্টাইলিশ ব্যাটিং করতো। আর শচীন টেন্ডুলকার ছিলো। যখন ক্রিকেট খেলা দেখতাম তখন সাপোর্টার ছিলাম পাকিস্তানের কিন্তু টেন্ডুলকারের খেলা অনেক ভালো লাগতো। যখন ইন্ডিয়া-পাকিস্তান খেলা হইতো। সাপোর্ট করতাম পাকিস্তানের তবে মনে হতো টেন্ডুলকার আউট না হলে ভালো হয়।

নিউজ ক্রিকেট২৪ঃ করোনার শেষে ক্রিকেট মাঠে ফিরলে মানিয়ে নেওয়াটা কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করেন?

মিজানুর রহমানঃ এখন সবাই ব্যাপারটি মানিয়ে নিয়েছে। সবাই কিন্তু বসে নাই৷ সবাই নিজের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন খেলোয়াড়রা বসে থাকেনা। সবাই কিন্তু টুকটাক কাজ করে। এখন সবাই জানে একটু পারফর্ম খারাপ হলে লাইম লাইট থেকে দূরে চলে যাবে। এজন্য সবাই নিজের ভালোটা বোঝে। আগে সবাই ট্যালেন্ট নিয়ে খেলতো৷ এখন সবাই বোঝে হার্ড-ওয়ার্ক করতে হবে। নিজেকে ফিট রাখতে হবে। সাথে পারফর্ম করতে হবে। এজন্য সবাই সচেতন।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

মিজানুর রহমানঃ আপনাকে ধন্যবাদ এবং একইসাথে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের সকল পাঠকদের।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »