সাকিব শাওন »
আল-আমিন হোসেন ১ জানুয়ারি, ১৯৯০ সালে ঝিনাইদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। এরপর সেখানেই কেটেছে তার শৈশব। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আলাদা ভালোবাসা কাজ করতো তার মনে। পরিবারের পুরোপুরি সাপোর্ট না থাকা স্বত্বেও ক্রিকেট চালিয়ে যেতে থাকেন। তারপর অনূর্ধ্ব -১৬, বাংলাদেশ এ দল, এরপর প্রিমিয়ার লিগ সব জায়গাই নিজেকে প্রমাণ করে ২১ অক্টোবর, ২০১৩ সালে ৭০তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে বাংলাদেশ দলের হয়ে সফরকারী নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে তার অভিষেক ঘটে। তবে ক্যারিয়ারে সবসময় ছিলেন দলে আশা যাওয়ার মিছিলে, এই দলে এলেন তো কয়েক ম্যাচ পর আবার বাদ। থিতু হতে পারেননি কখনো। অনেক স্মরণীয় জয়ে অবদান তার। আল-আমিন গোলাপি বলের টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম উইকেট শিকারী বোলার। সর্বশেষ ভারত সিরিজের টি-২০ দলেও ছিলেন এই পেসার। ক্যারিয়ারের এখন পর্যন্ত সব ফরম্যাট মিলিয়ে ৭৪ উইকেট শিকার করেছেন আল-আমিন।
বর্তমানে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর কারণে মাঠের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফরা সবাই ঘরবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। আর এই অবসর সময়টাতে নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডটকমের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সাথে নিজের ক্যারিয়ার এবং ক্রিকেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার আল-আমিন হোসেন।
নিউজ ক্রিকেটঃ কোয়ারেন্টাইনের এই সময়ে কি করছেন?
আল-আমিন হোসেনঃ রোজা রাখছি, নামায-কালাম পড়ছি, সাথে পরিবারকে সময় দিচ্ছি। আর ফিটনেসের কথা চিন্তা করে বিকালে ১ ঘন্টা চেষ্টা করি শারীরিক অনুশীলন করার জন্য।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার ক্রিকেটের শুরু কিভাবে?
আল-আমিন হোসেনঃ ছোটবেলা থেকেই আমি ক্রিকেট খেলতাম। সবসময় ক্রিকেটের প্রতি আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করতো। আমি অনুর্ধ-১৬ খেলেছি প্রথমে, তারপর বাংলাদেশ এ টিমে খেলছি, এরপর প্রিমিয়ার লিগে ভালো করেছি। মূলত ভালো পারফরম্যান্স করেই জাতীয় দলে এসেছিলাম আমি।
নিউজ ক্রিকেটঃ ২০১২ তে ‘এ’ দলের হয়ে একবার ইংল্যান্ড লায়ন্সের সাথে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন সেটা কিভাবে দেখেন আপনি?
আল-আমিন হোসেনঃ ২০১২, তখন আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার মাত্র শুরু ছিলো। সেই ম্যাচে ৩৮/৪ উইকেট পেয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলাম তার মধ্যে জো রুটের উইকেট ও ছিলো। আর শুরুর দিকে এমন ম্যাচ আমার আত্নবিশ্বাসকে আরো অনেক এগিয়ে দিয়েছিলো।
নিউজ ক্রিকেটঃ ক্যারিয়ারে একবার আপনার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছিলো তারপর আবার পরীক্ষা দিয়ে ফিরে আসেন পুরো বিষয়টি কেমন ছিলো আপনার কাছে?
আল-আমিন হোসেনঃ ২০১৪ তে যখন ওয়েস্ট-ইন্ডিজ ট্যুরে গিয়েছিলাম, তখন আমার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে কথা উঠে। এরপর আমি পরীক্ষা দিলাম। কোন কিছুই ধরা পড়লো না। যখন কারো বোলিং অ্যাকশনে সমস্যা ধরা পড়ে তখন তার ফিরে আসাটা অনেক চ্যালেঞ্জের হয়। সেক্ষেত্রে আমার বোলিংয়ে তো কোন সমস্যা ছিলো না এজন্য আল্লাহর রহমতে আমার জন্য ফিরে আসাটা অনেক সহজ ছিলো।
নিউজ ক্রিকেটঃ প্রিয় টেলিভিশন অভিনেতা কে?
আল-আমিন হোসেনঃ অবশ্যই মোশাররফ করিম। উনার অভিনয় অসাধারণ, আমি খুবই উপভোগ করি তার অভিনয়।
নিউজ ক্রিকেটঃ ক্রিকেটার হওয়ার পিছনে পরিবারের অবদান কেমন ছিলো?
আল-আমিন হোসেনঃ আসলে পরিবারের অবদান অনেক। তবে প্রথম দিকে বাড়ি থেকে উৎসাহ কম পেতাম। তারপর যখন ভালো কিছু করতে শুরু করলাম তখন পরিবার থেকে অনেক সাপোর্ট পেতাম। আরেকটি কথা আমার বড় ভাই প্রথম থেকেই আমাকে উৎসাহ দিতেন। তখনকার সময়ে তিনি আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটা জুতা কিনে দিয়েছিলেন যেটা আমি মনে করি অনেক বড় একটা সাহায্য তিনি করেছিলেন আমার জন্য। আর তাই এখনো আমি সেই জুতা কিনে দেওয়ার কথা মনে রেখেছি।
নিউজ ক্রিকেটঃ খেলাধুলা আর পড়াশুনা দুইটা একসাথে চালিয়ে যেতে কখনো কি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে আপনার?
আল-আমিন হোসেনঃ একটু সমস্যা তো হয়েছেই। অনেক সময় দেখা গেছে আমার ম্যাচ চলছে আবার অন্যদিকে আমার পরীক্ষাও চলছে। সেক্ষেত্রে ক্রিকেট বোর্ড থেকে ছুটি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। যার কারণে অনেক ম্যাচ মিস করেছি। আর ভার্সিটিতে বন্ধুরাসহ অনেকেই সাহায্য করেছে যার কারণে গ্র্যাজুয়েশন করতে সহজ হয়েছে আমার জন্য। আর ডিপার্টমেন্টের অধ্যক্ষ শ্রদ্ধেয় প্রণব কুমার পান্ডে স্যার আমাকে সবসময়ের জন্য সাহায্য করেছে।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার বোলিং আইডল কে?
আল-আমিন হোসেনঃ মাশরাফি ভাই। ছোটবেলা থেকেই উনার বল আমার ভালো লাগে। পরবর্তীতে উনার সাথে একসাথে খেলতে পেরেছি যেটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আর এ কারণে মাশরাফি ভাইকে আমি সবসময় আইডল মনে করি।
নিউজ ক্রিকেটঃ প্রথম যখন দেখলেন জাতীয় দলের স্কোয়ার্ডে আপনার নাম, কেমন অনুভূতি হয়েছিলো তখন?
আল-আমিন হোসেনঃ এটা মুখে বলে বুঝানো সম্ভব না। কারণ প্রতিটা খেলোয়াড়েরই ইচ্ছা থাকে জাতীয় দলের জার্সিতে খেলা। যখন প্রথম দেখলাম আমার নাম স্কোয়ার্ডে তখন খুবই খুশি হয়েছিলাম। আর জাতীয় দলে যখন আমি খেলি মনের ভেতর তখন খুবই ভালো লাগা কাজ করে। সবসময় চেষ্টা করি দলকে ভালো কিছু দেওয়ার জন্য।
নিউউ ক্রিকেটঃ দেশের মধ্যে প্রিয় ক্রিকেটার কে?
আল-আমিন হোসেনঃ সাকিব আল হাসান। অসাধারণ একজন খেলোয়াড় তিনি। আমার সাকিব ভাইয়ের খেলা দেখতে খুবই ভালো লাগে। আর তাছাড়া মাঠে সাকিব ভাই খুবই আক্রমণাত্মক থাকেন যেটা আমার ভালো লাগে অনেক।
নিউজ ক্রিকেটঃ এ বছর তো টি-২০ বিশ্বকাপ রয়েছে, সেক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত পরিকল্পনা কি?
আল-আমিন হোসেনঃ পরিকল্পনা একটাই যেনো ঠিকঠাক মতো ফিটনেস ধরে রাখতে পারি, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
নিউজ ক্রিকেটঃ মাঠে বিপক্ষ খেলোয়াড়দের স্লেজিং কেমন করেন ?
আল-আমিন হোসেনঃ আসলে সত্যি বলতে স্লেজিং আমার একটুও পছন্দ না। তবে উত্তেজিত হয়ে দুয়েক সময় স্লেজিং করে ফেলি। আর স্লেজিং করলে অনেক সময় জরিমানাও গুণতে হয়। সবমিলিয়ে স্লেজিং আমার খুব অপছন্দের। চেষ্টা করি স্লেজিং না করার।
নিউজ ক্রিকেটঃ ক্যারিয়ার শেষে নিজের নামের পাশে কত উইকেট দেখতে চান?
আল-আমিন হোসেনঃ আসলে কত উইকেট পাবো এটা নিয়ে চিন্তা করিনি কখনো। সবকিছু ঠিক হলে টেস্ট ক্রিকেটে কিভাবে আরো উন্নতি করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করবো। তবে তিন ফরম্যাটের হয়েই আমি সবসময় বাংলাদেশ দলে খেলতে চাই।
নিউজ ক্রিকেটঃ জাতীয় দলের কোন ক্রিকেটারের সাথে আপনার ঘুরতে ভালো লাগে?
আল-আমিন হোসেনঃ শফিউলের সাথে ঘুরতে ভালো লাগে আমার। কারণ শফিউলের সাথেই বেশি ঘুরাঘুরি হয় আমার সবসময়ের জন্য।
নিউজ ক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডটকমের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
আল-আমিন হোসেনঃ আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ এবং একই সাথে নিউজ ক্রিকেটের সকল পাঠকদের জানাই শুভেচ্ছা।