তামিম ইকবালকে বদলে দিয়েছে ২০১৫, স্ট্রাইক রেটেও উন্নতি!

কে এম আবু হুরায়রা »

তামিম ইকবাল, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সদ্য দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত অধিনায়ক। দেশ সেরা ওপেনার থেকে বর্তমানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দেশের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে। এই পরিবর্তন আজ এক দিনের নয়। তিলে তিলে নিজেকে পরিবর্তন করেছেন তামিম ইকবাল। দেশের ক্রিকেটের সোনালী বছরটি বদলে দিয়েছিলো তামিম ইকবালকে। দেশের প্রয়োজনে বদলেছেন খেলার ধরন। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন খোলসের ভিতরে। দলের ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই শুরুর দিকে দলের দ্বায়িত্ব নেন নিজের কাঁধেই। দলের প্রয়োজনে মাটি কামড়ে পরে থাকেন উইকেটে। দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং করার জন্য নিজের ফিটনেসের দিকেও দিয়েছেন আলাদা নজর। খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুর দিকে ডাকাবুকো তামিম ইকবালই কিনা নিজেকে ক্রমশই গুটিয়ে নেন দলের প্রয়োজনে। দলের খুঁটি হিসেবে দ্বায়িত্বশীল ভূমিকায় আবির্ভূত হন তামিম। উইকেটের একপ্রান্ত আগলে রেখেই দলকে শক্ত ভিত্তি গড়ে দিতে তামিম ইকবালের জুড়ি মেলা ভাড়। তবে এ পর্যন্ত তামিম ইকবালকে আসতে বেশ কাঠ-খড় পুড়াতে হয়েছে বলাই বাহুল্য। তবে নতুন তামিমের আবির্ভাব ২০১৫ সালে। এ যেন এক অন্য তামিম। বাংলাদেশ দলের কাছে অপরাজেয় সেই পাকিস্তানকে ধবলধোলাইয়ে মধ্যদিয়েই নিজেকেও খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। ডাকাবুকো শুরুতেই তেড়েফুঁড়ে ডাউন দ্যা উইকেটে আসা তামিম ইকবাল যেন হয়ে যান শান্ত এক নদী। যেখানে রানের মহড়া চলে হামেশাই তবে ডাউন দ্যা উইকেটে আসার আগে দলের স্কোর বোর্ডের চাহিদাটা পূরণ করতে ভুল করেননা কখনই।

২০০৭ সালে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক যাত্রা করেছিলেন তিনি। দীর্ঘ এই পথে খেলেছেন ৬০টি টেস্ট, ২০৭ টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবং ৭৮টি টি২০ ক্রিকেট। টেস্ট এবং টি২০ ক্রিকেটে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও ওডিআই ক্রিকেটে নিজেকে সেরা প্রমাণ করেছেন ইতিমধ্যেই। সাদা পোশাকে ৪৪০৫ রানের সাথে ওডিআই এবং টি২০ ক্রিকেটে রান সংখ্যা যথাক্রমে ৭২০২ এবং ১৭৫৮। তবে এর অধিকাংশ রানই এসেছে গত ৫ বছরে।

একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের ক্যারিয়ারের ৭২০২ রানের ৩২৩১ রানই আসে গত ৫ বছরে। শতকরার হিসেবে যেটা প্রায় ৪৫ শতাংশ রান। ২০১৫ সকলের আগেও ওডিআই ক্রিকেটে যার গড় মাত্র ২৯.৮৫ সেখানে গত ৫ বছরে তামিম ইকবালের গড় ঈর্ষনীয় ৫১.২৮! শুধু রানের সংখ্যাই নয়। ওডিআই ক্যারিয়ারের ১৩টি সেঞ্চুরির ৯টি সেঞ্চুরিই তাকে দিয়েছে গত অর্ধদশকে। তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলা স্ট্রাইক রেটও বেড়েছে এই ৫ বছরে। ক্যারিয়ারের স্ট্রাইক রেট ৭৮.৬৮ হলেও গত ৫ বছরে তামিম ইকবালের স্ট্রাইক রেট ৮০.১১। যা ২০১৫ সালের আগে ছিলো ৭৭.৫৫।

ওডিআই ক্রিকেটের মত অতটা উন্নতি না হলেও উন্নতির কিছুটা ছাপ পাওয়া গেছে টেস্ট ক্রিকেটেও। এসময় নিজের নামের পাশে এনেছেন বেশ কয়েকটি অর্জন। ক্যারিয়ারের মোট রানের প্রায় ৩৮ শতাংশ রান আসে গত ৫ বছরে। রানের হিসেবে যেটা ১৬৬২। গড় ৩৯.৫৭। ক্যারিয়ারের একমাত্র দ্বিশতকটিও ছিলো এই ৫ বছরেই।

টি২০ ক্রিকেটও গত ৫ বছরে বছরে তামিম ইকবালকে দিয়েছেন দু’হাতে। আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবালের সেঞ্চুরিটিও এসেছে ২০১৬ সালে৷ এছাড়াও টি২০ ক্যারিয়ারের অর্ধেকেরও বেশী রান এসেছে গত ৫ বছরেই। রানের হিসেবে যেটা ৯৯৯। স্ট্রাইক রেটেও আগের থেকে উন্নতির ছাপ স্পষ্ট। ২০১৪ সাল পর্যন্ত টি২০ ক্রিকেটে তামিম ইকবালেন স্ট্রাইক রেট ছিলো মাত্র ১০৬.২ সেখানে গত ৫ বছরে তার গড় প্রায় ১২৭। ক্যারিয়ারের ৭ টি অর্ধশতকের ৪টিই এসেছে ২০১৫ সালের পরে।

প্রতিনিয়তই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন এই ড্যাশিং ওপেনার। গত কয়েক বছরে নিজের পরিবর্তনটা ধরে রাখলে ক্যারিয়ারের শেষে নামটা হয়তো থাকতে পারে অনন্য উচ্চতায়। তবে আফসোসও হতে পারে, পূর্বের ৮ বছর যদি একটু বেশী রান করতাম!

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »