সুফিয়ান আল হাসান »
বিপিএলের ২য় আসরে সুযোগ পেয়ে গতির ঝড় তুলে জানান দিয়েছিলেন তার আগমন। জানান দিয়েছিলেন মাশরাফি, রুবেলের পর বাংলাদেশ দলে গতির ঝড় তুলতে আসছেন আরেক তারকা।সেবার বিপিএলে চিটাগাং এর একাদশে এক প্রকার খালেদ মাহমুদ সুজনের জেদের জন্যই জায়গা হয়েছিলো তার। টিম ম্যানেজমেন্ট এর বিপক্ষে গিয়ে এই তরুণ পেসারকে একাদশে রাখলেন হেডকোচ সুজন। প্রথম ম্যাচে তেমন সাফল্য না আসলেও ২য় ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে দিলেন কোচের আস্থার প্রতিদান। এখান থেকেই শুরু ১৮ ছুঁই ছুঁই এক তরুণ গতিতারকার সফলতার।
বলছিলাম বাংলাদেশ দলের হয়ে একসময় গতির ঝড় তোলা তাসকিন আহমেদের কথা। ক্যারিয়ারে কিছু ভুল না থাকলে হয়তো আজকে একসময় কথাটা লিখতে হতো না। কিছু ভুল তাসকিনকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ দলের বাইরে। তাসকিনের সম্ভাবনা ছিল একসময় বাংলাদেশের পেস বোলিংকে নেতৃত্ব দেওয়ার, কিন্তু ভাগ্যদেবী তা হতে দেয়নি। তাসকিনের থেকে কেড়ে নিয়েছেন লাল সবুজের জার্সি।
২০১৩ বিপিএলে গতির ঝড় তুলে নিজের সামর্থ্যের জানান দেওয়ার পড়ে জাতীয় দলে আসতে আর অপেক্ষা করতে হয়নি তাসকিনকে। পরের বছর ঘরের মাঠে টি২০ বিশ্বকাপেই ডাক আসলো জাতীয় দলে। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অভিষেক, শুরুটা জমকালো না হলেও মন্দ হয়নি। ২৪ রান খরচায় তুলে নিলেন ম্যাক্সওয়েল এর উইকেট।
ওয়ানডে অভিষেক টা সেবছরই, দ্বিতীয় সারির ভারত দল আসে বাংলাদেশ সফরে। সিরিজটা বাংলাদেশের জন্য বিষাদ হলেও তাসকিন রাঙিয়ে নেন নিজের মতো করে। মিরপুরের মাঠে অভিষেক ম্যাচেই গুনে গুনে তুলে নেন ভারতের পাঁচ উইকেট। এরপর থেকে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে দলে নিজের জায়গা পাকা করেন, ডাক আসে ২০১৫ বিশ্বকাপ দলেও। বিশ্বকাপ একাদশে তাসকিন ছিলেন নিয়মিত সদস্য, শুধু সদস্য হয়েই থামেননি তাসকিন, ৬ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা উইকেট সংগ্রহকারী বোলার। সে বিশ্বকাপে মাশরাফির সাথে তাসকিনের ম্যাশকিন সেলিব্রেশন তো রূপ নিয়েছিল ট্রেডমার্ক সেলিব্রেশনে।
তাসকিন পারফর্ম করে যাচ্ছিলেন ধারাবাহিক ভাবে, যেখানেই হাত দিচ্ছিলেন তাই যেন স্বর্ণে রূপ নিচ্ছিলো, কিন্তু ভালো সময় তো বেশিদিন থাকে না, ভালোর পরে খারাপ সময় আসবেই, তাসকিনের জীবনেও আসলো কালো অধার।২০১৬ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে উঠল প্রশ্ন, অভিযোগ ওঠা ম্যাচেও তাসকিন উজ্জ্বল, তুলে নিয়েছিলেন পাকিস্তানের দুই উইকেট। সেদিন তাসকিনের জন্য চোখ থেকে অশ্রু ঝড়ে ছিলো এদেশের ক্রিকেট পাগলদের নয়ন থেকে।টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচ গুলোতে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা তাসকিনকে আর পেলো না বাংলাদেশ দল।
অভিযোগ ভুল প্রমাণিত করে ঐ বছরই তাসকিন ফিরেছেন, ফিরেছিলেন ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। পরের বছর টেস্ট অভিষেকের পর থেকেই তাসকিনের ক্যারিয়ারে দেখা দিলো ফর্মহীনতা। হারিয়ে গেলো সেই দুর্দান্ত তাসকিন। তাসকিন সর্বশেষ জাতীয় দলে খেলেছেন ২০১৮ নিদাহাস ট্রফিতে, আর সবশেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৭ সালে। ফর্মহীন তাসকিন পুরনো ফর্ম ফিরে পেয়েছিলেন ২০১৯ এর শুরুর বিপিএলে। বিপিএলে সেবার সিলেটের হয়ে ১২ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে বিপিএল শেষ হওয়ার আগেই জায়গা করে নেন নিউজিল্যান্ড সিরিজের স্কোয়াডে ।
তবে ভাগ্য এবারও তাসকিনের বিপক্ষে, এবার বাঁধ সাধলো ইনজুরি। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিজের প্রথম ওভারে এক উইকেট তুলে নিলেও ক্রিকেট বিধাতা তাকে তার কৌটা পূরণ করতে দেননি।ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট পেয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান তাসকিন। শেষ হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও বিশ্বকাপ স্বপ্ন। বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে জায়গা হলেও কোন ম্যাচ না খেলেই ফিরতে হয়েছিল এই পেসারকে। একই অবস্থা ছিলো বিশ্বকাপের পরের শ্রীলংকা সিরিজে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে আবারো সুযোগ মিললো টেস্ট স্কোয়াডে, তবে একাদশে জায়গা হলো না এবারও। এভাবেই থেমে আছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একজন গতিতারকার অসমাপ্ত গল্প।
এখন পর্যন্ত ৩২ ওয়ানডেতে তাসকিন নিয়েছেন ৪৫ উইকেট আর ১৯ টেস্ট ১২ উইকেট। তাসকিনের মত আন্তরজাতিক উইকেট ৬৪ টি, এখানেই কি থেমে যাবে তাসকিনের ক্যারিয়ার? নাকি আবারো তাসকিন ফিরবে তার আইডল মাশরাফির মতো করে? সবাই চায় তাসকিন ফিরুক, তাসকিন ফিরুক তার গতির ঝড় তুলে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে কাবু করতে, তাসকিন ফিরুক দুর্দান্ত সব ইয়ার্কর দিয়ে ব্যাটসম্যানদের স্ট্যাম্প তুলে নেওয়ার জন্য।