কে এম আবু হুরায়রা »
বাংলাদেশের হয়ে মাত্র তিনটি টেস্ট খেলার সুযোগ হয়েছে মার্শাল আইয়ুবের। সবশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৪ সালে। জাতীয় দলে নিয়মিত হতে না পারলেও ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ তিনি। জাতীয় দলে নিয়মিত হতে না পারায় আফসোসও আছে তার। কিন্তু এখনো হাল ছাড়েন নি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
মুঠোফোনে মার্শাল আইয়ুবের সাথে কথা বলেছেন নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের প্রতিনিধি।
পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো।
নিউজক্রিকেটঃ ক্রিকেটে এসেছিলেন কিভাবে?
মার্শাল আইয়ুবঃ আমি খেলা শুরু করি ২০০১ সালে। অনূর্ধ্ব-১৩ দিয়ে শুরু হয় আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার। আমার দাদা কোচ ছিলেন। উনার কাছ থেকেই ক্রিকেট শিখেছি।
নিউজক্রিকেটঃ তখনকার সময়ে বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট কেমন ছিলো?
মার্শাল আইয়ুবঃ আমাদের তখনকার প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে ভালোই ছিলো। আমি অনূর্ধ্ব-১৩ থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যন্ত খেলেছি। তবে আমাদের সময়ে সুযোগ-সুবিধা খুবই কম ছিলো। এখনের মত ছিলো না। এখন তো বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে প্রায় সব সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের সময়ে এগুলো ছিলো না। আমরা ম্যাচ কম খেলার সুযোগ পেতাম। আর এখন ম্যাচ বেশি, ট্যুরও বেশি।
নিউজক্রিকেটঃ আপনাদের সময়ে প্রতিযোগিতা কেমন ছিলো?
মার্শাল আইয়ুবঃ অবশ্যই কষ্টকর ছিলো। কারণ বয়সভিত্তিক ক্রিকেট হচ্ছে এমন একটা জায়গা যেখানে সবসময় পারফর্ম করতে হয়। আর নিজেকে এখানেই তৈরি করতে হয়। কারণ এরপর এ দল, একাডেমী দল, জাতীয় দল এগুলোতে গিয়ে খেলতে হবে। আমাদের সময়েও এমনটাই ছিলো। এখনো প্রতিযোগিতা আছে তবে আমাদের সময়েও ছিলো। সাকিব, তামিম, মুশফিক সবাই কিন্তু বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেই এসেছে। আবার এখন যারা এসেছে যেমন মিরাজ, শান্ত তারাও কিন্তু প্রতিযোগিতা করেই এই পর্যায়ে এসেছে।
নিউজক্রিকেটঃ আপনার শুরুর সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটটা কেমন ছিলো?
মার্শাল আইয়ুবঃ প্রিমিয়ার লিগটা সবার জন্য কঠিন হতো। কারণ বাইরের অনেক ক্রিকেটার এসে খেলে গেছে। বাইরের ক্রিকেটাররাও বলেছে এখানে পারফর্ম করা তখনকার সময়ে সহজ ছিলো না। এখনো আগের মতই আছে। তবে কিছু সুবিধা বেড়েছে। অনেক টেকনোলোজি যুক্ত হয়েছে যেগুলো আমাদের সময়ে ছিলো না।
নিউজক্রিকেটঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দেশের বাইরের কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়াটা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
মার্শাল আইয়ুবঃ আসলে দেশের উইকেট আর দেশের বাইরের উইকেটের মধ্যে তফাৎ অনেক। আইসিসির কোন ইভেন্ট হলে তখন ফ্ল্যাট উইকেট থাকে। এছাড়া সবাই নিজেদের কন্ডিশনে নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী উইকেট তৈরি করে। যেমন অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে আমরা স্পিন বোলিং উইকেট তৈরি করেছি। কারণ স্পোর্টিং উইকেটে ওরা ভালো করে, ওদের পেস বোলিং অ্যাটাক অনেক শক্তিশালী। আমরা যখন দেশের বাইরে খেলতে যাই তখন মানিয়ে নিতে আমাদের কষ্ট হয়। এশিয়ার ভেতরে আমরা ঠিক আছি। এশিয়ার বাইরে গেলে সমস্যা হয়। এমন না যে একেবারেই খারাপ করি, একটু একটু করে উন্নতি হচ্ছে। আমাদের প্লেয়াররাও বুঝতেছে কিভাবে মানিয়ে নিতে হয়। এছাড়া দেশের উইকেট গুলোতেও পরিবর্তন আসছে। ঘাসের উইকেটও হচ্ছে। কাজেই এই সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে আমি মনে করি।
নিউজক্রিকেটঃ জাতীয় দলে পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছেন বলে মনে হয়?
মার্শাল আইয়ুবঃ আসলে আমি মনে করি জাতীয় দলে যেকোন প্লেয়ারকে সময় দেওয়া উচিত। আর সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে। একজনকে বেশি, একজনকে কম এভাবে কিন্তু হয়না। আমরা যদি কম সুযোগ পাই তবে খারাপ তো লাগেই। আর সুযোগটা আমার হাতে নেই। আমার হাতে যতটুকু আছে আমি সেটা ভালো করে করার চেষ্টা করি। আমি কম খেলেছি এটার জন্য একটা আফসোস আছে। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে খারাপ যাচ্ছে না, মোটামুটি ভালোই যাচ্ছে। আরো ভালো করার চেষ্টা থাকবে যদি নির্বাচকদের নজরে আবার আসতে পারি।
নিউজক্রিকেটঃ বাংলাদেশে একটা প্রচলিত নিয়ম আছে। অনেকটা কম বয়সেই জাতীয় দলে সুযোগ মিলে আবার খারাপ করলে দল থেকে বাদ দেয়া হয়। এ ব্যাপারটা আপনি কিভাবে দেখেন
মার্শাল আইয়ুবঃ আগে এ ব্যাপারটা খুব বেশি হতো। কিন্তু কমে আসতেছে। এখন কিন্তু হুট করে কাউকে দলে নেওয়া হচ্ছে না। এভাবে যদি এ ব্যাপারটা বিবেচনা করা হয় তবে এটা অবশ্যই ভালো দিক। আর আমি মনে করি ঘরোয়া ক্রিকেটে আরো বেশি সময় দেওয়ার পরে যদি জাতীয় দলে নিয়ে আসা হয় তবে সেটা আমাদের জন্য অনেক ভালো কিছু হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স ভালো থাকতে হবে। এবার যারা অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপ জয় করে এসেছে তাদেরকে ঘরোয়া ক্রিকেটে সময় দিতে হবে। ভালো করার ইচ্ছা সবারই থাকে।
নিউজক্রিকেটঃ একটু বয়স হলেই দেখা যায় ভালো পারফরম্যান্স করেও দলে সুযোগ মিলে না।
মার্শাল আইয়ুবঃ বাইরের দেশ গুলোর দিকে তাকালে দেখবেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররাই টেস্ট ম্যাচ খেলে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা দেখা যায় না। টেস্ট ক্রিকেটে একজন ব্যাটসম্যানের ম্যাচুরিটি আসে ২৮-২৯ বছর বয়সে। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য এটাই পিক টাইম। কাজেই এই সময়টাতে অবশ্যই সুযোগ দেওয়া উচিত। টেস্ট ক্রিকেটটা বুঝতে সময়ের প্রয়োজন হয়। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে দেখেন এখন অনেকেই বড় ইনিংস খেলো আর এগুলো আসে আমাদের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের থেকেই।
নিইজক্রিকেটঃ টেস্ট ক্রিকেটের খারাপ করার পেছনে এটাই বড় কারণ?
মার্শাল আইয়ুবঃ যদি অভিজ্ঞদের টেস্ট ক্রিকেটের জন্য বিবেচনায় আনা যায় তবে এই ফরম্যাটে ভালো রেজাল্ট আসবে। আর ঘরোয়া লিগে টেস্ট ফরম্যাটে আমরা ম্যাচ খুবই কম খেলি। ১০ টার মত ম্যাচ খেলি। যদি এ দলের জন্যও অভিজ্ঞদের বিবেচনায় আনা যায় তবে বুঝা যাবে তারা কতটা সফল। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে যদি এ দল নিয়ে ট্যুর করা যায় তবে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য অনেক উপকার হবে।
নিউজক্রিকেটঃ আপনার এখনের পরিকল্পনাটা কি?
মার্শাল আইয়ুবঃ আমি সবসময়ই ভালো করার চেষ্টা করি। আর এখন যে বয়সে খেলছি এই প্ল্যাটফর্ম ধরে রাখতে হলে অবশ্যই আমাকে পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। কাজেই আমি সেই চেষ্টাই করি এবং সেভাবেই পরিকল্পনা করি। আর টেস্ট ক্রিকেটে আমি জোর দিচ্ছি।
নিউজক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
মার্শাল আইয়ুবঃ আপনাকেও ধন্যবাদ এবং নিউজ ক্রিকেটের সকল পাঠকদের শুভেচ্ছা।